• লা লিগা
  • " />

     

    মেসির হ্যাটট্রিকে শিরোপা ফিরে পেল বার্সা

    মেসির হ্যাটট্রিকে শিরোপা ফিরে পেল বার্সা    

    রিয়াজোতে ম্যাচ শেষে দুই দলই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল, মাঠে তখন দু'টি বৃত্ত। একটা বৃত্তে উৎসব হচ্ছে, আরেকটা থমকে দাঁড়িয়ে আছে। একটু আগেই এই মাঠে দুইদল লড়াই করেছে সমান তালে। আজ হার এড়ালেই লা লিগা শিরোপা জিতত বার্সেলোনা। দুই গোলে এগিয়ে গিয়ে একটা সময় বার্সার জয়ের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দেপোর্তিভো লা করুনা। তাদের অবনমন ছিল সময়ের ব্যাপার। লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে তারা, তাই অবনমন নিশ্চিত হয়ে গেছে। বার্সেলোনায় যখন উৎসব, তখন দেপোর্তিভোর মাঠে তাই রাজ্যের আঁধার। লিওনেল মেসিই ক্ষীণ স্বপ্নটাও শেষ করে দিয়েছেন তাদের। হ্যাটট্রিক করে দেপোর্তিভোর বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয় এনে দিয়েই লা লিগা শিরোপা নিশ্চিত করেছেন বার্সেলোনার।

    কাতালান ক্লাবের শিরোপা জয়টা অবশ্য প্রায় নিশ্চিতই ছিল। সেটা হলো তাই শেষ পর্যন্ত রেকর্ড দিয়েই, লিগের ৪ ম্যাচ বাকি থাকতে। ১৯৯৭-৯৮ সালে শেষবার বার্সাই ৪ ম্যাচ বাকি থাকতে জিতেছিল লিগ। নিজেদের রেকর্ডটাই আরও একবার ছুঁয়েছে তারা। মৌসুমের শুরুতেই নেইমারকে হারানোর পর, স্প্যানিশ সুপার কাপের হার- এর্নেস্তো ভালভার্দের শুরুটা হয়েছিল বাজেভাবেই। চ্যাম্পিয়নস লিগে না পারলেও শেষ পর্যন্ত কোপা ডেল রে আর লা লিগা জিতে নিজের প্রথম মৌসুমে 'ডাবলস' পূরণ করলেন তিনি।    

    আগের সপ্তাহে কোপা ডেল রে জেতায় রাতটা দেপোর্তিভোর কাছ থেকে গার্ড অফ অনার পেয়েই শুরু হয়েছিল বার্সার। আর মাত্র ৭ মিনিটেই গোল করে আরও একটি শিরোপার পথেই যাত্রা শুরু করেছিল তারা। ওসমান ডেম্বেলের করা ক্রস থেকে বাঁকানো শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ফিলিপ কুতিনিয়ো। কিন্তু এরপরই লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয় দেপোর্তিভো। ক্ল্যারেন্স সিডর্ফের অধীনে বেশ কিছুদিন ধরেই দারুণ ফুটবল খেলছিল দেপোর্তিভো। বার্সার বিপক্ষে আজ দেখা গেল তাদের উন্নতির ছাপ।

    ১৭ মিনিটেই একবার জালে বল জড়িয়েছিলেন লুকাস পেরেজ, কিন্তু রেফারির অফসাইড সিদ্ধান্তে বেশ খানিকক্ষণ দেরি করেই বাতিল হয় সেই গোল। অন্যপ্রান্তে মেসি, কুতিনিয়োরা সুযোগ তৈরি করলেও ভালো ফিনিশের অভাবে ব্যবধান বাড়াতে পারছিলেন না।  ম্যাচের আধঘন্টা পেরুনোর আগেই লিওনেল মেসির গোলের দিকে এগুতে থাকা ফ্রি কিক ঠেকিয়ে দিয়ে দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন সাবেক বার্সা গোলরক্ষক রুবেন। এর মিনিটখানেক পরই এমরে চোলাকের ক্রস থেকে বোর্হা ভায়ে ঠিকমতো পায়ে বল লাগাতে পারলেই সমতায় ফিরতে পারত দেপোর্তিভো। ৩৫ মিনিটে ডিফেন্ডার ফাবিয়ান শারও পারতেন কাজটা করতে। কিন্তু তার হেডও চলে যায় বাইরে দিয়ে। বার্সার গোলের সামনে সুযোগ মিস করার শাস্তিটা এর কিছুক্ষণ পরই পেয়ে যায় দেপোর্তিভো। ৩৮ মিনিটে লুইস সুয়ারেজের ক্রস থেকে ভলিতে গোল করে বার্সাকে দুই গোলে এগিয়ে দেন মেসি।




    দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও লড়াই থামায়নি দেপোর্তিভো। ৪০ মিনিটে আর ভুল করলেন না পেরেজ। বাঁ দিক থেকে করা ভায়ের ক্রস গোলে পরিণত করে দুই মিনিটের মধ্যেই এক গোল শোধ করে দেপোর্তিভো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই তাই আবারও ব্যবধান বাড়াতে দেপোর্তিভোর রক্ষণে কড়া নাড়তে থাকেন মেসি, সুয়ারেজরা। কিন্তু গোলের দরজা কিছুতেই খুলছিল না বার্সার জন্য। মেসি দুটো দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথমবার সুয়ারেজের কাছ থেকে পাওয়া বল মেরেছিলেন গোলরক্ষকের হাতে, পরের দফায় জর্দি আলবার ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি আর্জেন্টাইন।

    বার্সার তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে দেপর্তিভোর আক্রমণভাগ কিছুটা ঝিমিয়েই পড়েছিল। ৬৩ মিনিটে ভাঙল সেই ঘুম। আবারও ক্রস করেছিলেন বোর্হা ভায়ে, ডিবক্সের ভেতর সেলসো বোর্হেসই শটটা নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি বলটা পাঠালেন চোলাকের কাছে। পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি জায়গা থেকে বাঁ পায়ের শটে মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের জালে বল জড়ান চোলাক। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে সমতায় ফেরে দেপোর্তিভো! চোখ রাঙানিটা বার্সাকে পুরো ম্যাচেই দিয়েছে তারা, সমতায় ফেরার পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে দেপোর্তিভো। বেশ কয়েকবার বার্সার রক্ষণে ভীতি ছড়ালেও অবশ্য শেষ পর্যন্ত আর একটা গোল পাওয়া হয়নি তাদের।

    অস্বস্তিতে পড়া বার্সাকে পরে রক্ষা করেছেন মেসিই, তিন মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে পূরণ করেন নিজের হ্যাটট্রিকও।  ৮২ মিনিটে সুয়ারেজের সঙ্গে ডিবক্সের ভেতর ওয়ান টু করে দারুণ এক গোল করে আবারও মেসিই ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন বার্সাকে। এর মিনিট খানেক আগেই সুয়ারেজকে গোল করার মোক্ষম সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন মেসি, সে দফায় রুবেনের কাছে হেরেছিলেন সুয়ারেজ। মেসির গোলে দেওয়া পাসে সেই ভুলটাই শুধরেছেন সুয়ারেজ।  মেসির হ্যাটট্রিক পূরণের গোলের পাসটাও এসেছে সুয়ারেজের পাস থেকেই। জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই মাঠে নামেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। আজ অবশ্য তেমন কিছু করতে হয়নি তার, তাকে ছাড়া খেলা শেখার প্রস্তুতিটাই তো নিতে হবে বার্সাকে।

    ইনিয়েস্তা যাওয়ার আগে অবশ্য আরও একটি আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। বার্সার ২৫ তম লিগ শিরোপাটা উঁচিয়ে ধরবেন তিনি ন্যু ক্যাম্পে।