• লা লিগা
  • " />

     

    ঘটনাবহুল ক্লাসিকোতে 'নায়ক' রেফারি!

    ঘটনাবহুল ক্লাসিকোতে 'নায়ক' রেফারি!    

    নায়ক হতে পারতেন লুইস সুয়ারেজ। ম্যাচের শুরুতে তাঁর গোলেই তো এগিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। নায়ক হতে পারতেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ন্যু ক্যাম্পে যিনি নিয়মিত গোল করে নিজের বাড়িই ফেলেছেন, রাতটা তো তাঁরও হতে পারত। মঞ্চটা হতে পারত লিওনেল মেসির, ১০ জনের বার্সাকে তো তিনিই এগিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি তা গ্যারেথ বেলেরও হয়ে যেত, বাঁ পায়ের অমন গোলার মতো শটটাই রিয়ালকে ম্যাচে ফিরিয়েছে। হতে পারত আন্দ্রেস ইনিয়েস্তারও, এটাই যে ছিল তাঁর শেষ ক্লাসিকো!  কিন্তু দিন শেষে বোধ হয় এই এল ক্লাসিকোটা রেফারি হার্নান্দেজেরই, ২-২ গোলে ড্র ম্যাচে পাদপ্রদীপের সবটুকু জুড়ে তো তিনিই ছিলেন।

    কী করেছেন রেফারি? প্রশ্নটা বরং হওয়া উচিত, কী করেননি তিনি। ম্যাচের শুরু থেকেই বলতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। প্রথমার্ধেই যখন জর্দি আলবা লুকা মদ্রিচকে কনুই মেরেছেন, নিশ্চিতভাবেই তা হতে পারত লাল কার্ড। অথচ সেটা রেফারির চোখই এড়িয়ে গেছে। তার আগেই অবশ্য ম্যাচ হয়ে গেছে ১-১।

    ১০ মিনিটে দুর্দান্ত এক প্রতি আক্রমণে এগিয়ে গেছে বার্সা। ডান দিক থেকে ডিফেন্সচেরা এক দৌড়ে বলটা পেয়েছিলেন সার্জি রবার্তো। তাঁর ক্রসটা দারুন এক ভলিতে জালে জড়িয়ে দিয়েছেন সুয়ারেজ। সেই গোল শোধ করতে রিয়াল সময় নিয়েছে চার মিনিট। এবার কারিগর টনি ক্রুস, মিডফিল্ডে বলটা তিনিই পেয়েছিলেন। পরে ডি বক্সে তাঁর ক্রস থেকেই হেড করেছেন করিম বেনজেমা, ফাঁকা পোস্টে বলটা ঠেলে দিতে সমস্যা হয়নি রোনালদোর। ন্যু ক্যাম্পে গত ১১ ম্যাচেই গোল পেলেন রোনালদো, ছুঁয়ে ফেলেছেন ডি স্টেফানোর ক্লাসিকোর ১৮ গোলের রেকর্ডও। কিন্তু সেই গোল করতে গিয়েই পিকের সঙ্গে লেগে চোট পেয়েছেন। যেটা বিরতির পর তাঁকে আর নামতেই দেয়নি। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের আগে রিয়ালের জন্য বড় একটা দুঃসংবাদই।

    অথচ তার আগেই প্রথমার্ধটা নিজের করে নিতে পারতেন রোনালদো। ২৪ থেকে ২৭, এই তিন মিনিটের মধ্যে তিন গোল দিতে পারতেন রোনালদো। ফাঁকায় পেয়েও হেড করে বাইরে মেরেছেন, খানিক পর মদ্রিচের পাস থেকে দারুণ সেভ করেছেন টের স্টেগেন। আবার বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে রোনালদোর শট চলে গেছে পোস্ট ঘেঁষে।

    এর পরেই অবশ্য উমতিতিকে ফাউল করেছিলেন বেল, যেটা লাল কার্ডও হতে পারত। কিন্তু রেফারির তা চোখ এড়িয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত যখন চোখে পড়েছে, তখন কপাল পুড়েছে রবার্তোর। মার্সেলোকে গুঁতো মেরে লাল কার্ড দেখেছেন, পুরো ম্যাচে রেফারি এই একটাই বড় সিদ্ধান্ত ঠিক দিয়েছেন সম্ভবত। প্রথমার্ধেই রিয়ালের তিন ডিফেন্ডারই হলুদ কার্ড দেখে ফেলেছেন, বার্সা হয়ে গেছে দশজনের!

     

    তবে এক জন বেশি নিয়ে রিয়ালই বরং যেন খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলল বার্সা। ৫৩ মিনিটে যখন এগিয়ে গেল, সেখানেও আবার নিখোঁজ রেফারির চোখ। ভারানেকে করা সুয়ারেজের ফাউলটা চোখেই পড়েনি তাঁর। তারপরও মেসির অনেক কিছুই করতে হতো, প্রায় পড়ে যেতে যেতেও মেসিসুলভ একটা মাপা শটে বল জড়িয়ে দিয়েছেন জালে।

    এরপর রিয়াল আবার খেলায় ফেরার চেষ্টা করে, ভাজকেজ নামার পর ডান প্রান্তে বাড়ে ধার। তবে মেসি রাতটা স্মরণীয় করে রাখার সুযোগ পেয়েই গিয়েছিলেন, কিন্তু ৭০ মিনিটে দুর্দান্ত এক আক্রমণ থেকে তাঁর শট দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিলেন নাভাস।


    আরও পড়ুনঃ এল ক্লাসিকোর প্লেয়ার রেটিং 



    তবে বেলের কিছু প্রমাণ করার ছিল। তাঁকে নামিয়ে আজ খানিকটা ফাটকাই খেলেছিলেন জিদান। কিন্তু ৭২ মিনিটে আসেনসিওর বল থেকে বাঁ পায়ের গোলটা মনে করিয়ে দিয়েছে পুরনো বেলকে। ২০১৪ কোপা দেল রের সেই দুর্দান্ত গোলের পর ক্লাসিকোতে এটা বেলের দ্বিতীয় গোল।

     

    এরপর আবার রঙ্গমঞ্চে হার্নান্দেজ, এবার বক্সের ভেতর আলবা মার্সেলোকে ফাউল করলেও বাঁশি বাজালেন না রেফারি। বার্সার অপরাজেয় রেকর্ডটাও টিকে গেল সুতোর ওপর। এরপরেই আবার মেসি সুযোগ পেলেন দুবার। ৮২ মিনিটে আরেকবার একটুর জন্য বাঁক খাওয়ানো শট ঢুকল না পোস্টে, এক মিনিট পরেই আবার মেসির ডান পায়ের শট ঠেকিয়ে দিলেন নাভাস।  

    শেষ পর্যন্ত ম্যাচে আর গোল হয়নি, তবে সেজন্য রিয়ালই নিজেদের বেশি দুর্ভাগা মনে করতে পারে। আর ড্রটাই বার্সার জন্য জয়ের সমান, এই মৌসুমে তো হারতে হয়নি এখনো! মর্যাদার ক্লাসিকো থেকে এটাই তো তাদের বড় পাওয়া!