আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন 'ক্লান্ত' ডি ভিলিয়ার্স
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেছেন, অন্যদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময় মনে হয়েছে তাঁর। তবে এরপরই বলেছেন আরও গুরুত্বপূর্ণ কথাটা, “সত্যি বলতে কী, আমি ক্লান্ত”!
চোটের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই চলেছেন আফ্রিকান সুপারম্যানের। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন, ধীরে ধীরে সব ফরম্যাটেই। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্টেও খেলেছেন। আইপিএলের এ মৌসুমেও খেলেছেন তিনি। তবে চলে যাওয়ার জন্য এ সময়টাকেই বেছে নিলেন তিনি। পড়ে রইল তার বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন, পরের বছর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তার অবসর ধাক্কা হয়েও আসবে প্রোটিয়াদের জন্য।
২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল ডি ভিলিয়ার্সের। এরপর ১১৪টি টেস্ট, ২২৮টি ওয়ানডে ও ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। সময়ের সঙ্গে হয়ে উঠেছেন শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার নয়, বিশ্বেরই সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন, তিন ফরম্যাটজুড়েই।
“১১৪টি টেস্ট, ২২৮টি ওয়ানডে ও ৭৮টি টি-টোয়েন্টির পর আমার মনে হচ্ছে, অন্যদের এগিয়ে আসার এটাই সময়। আমার সময়টা শেষ, আর সত্যি বলতে কী, আমি ক্লান্ত।”
“এটা কঠিন এক সিদ্ধান্ত। অনেক ভেবেছি। দারুণ ক্রিকেট খেলার সময়ই আমি অবসর নিতে চাই। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দারুণ সিরিজের পর আমার মনে হয়েছে, চলে যাওয়ার এটাই সময়।”
চোট থেকে ফেরার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কত্ব ছেড়েছিলেন। ডি ভিলিয়ার্সকে তার ইচ্ছানুযায়ী ফরম্যাট বা সিরিজ ধরে খেলার সুযোগ দেওয়া হবে, এমন গুঞ্জনও উঠেছিল। এখন ডি ভিলিয়ার্স বলছেন, যে এভাবে খেলাটাকে তিনি ঠিক মনে করছেন না, “কখন, কোথায়, কোন ফরম্যাটে প্রোটিয়াদের হয়ে খেলব- এটা বেছে নেওয়াটা ঠিক হবে না আমার জন্য। আমার কাছে ব্যাপারটা “সব অথবা কিছুই নয়”-এর মতো। দক্ষিণ আফ্রিকার সব কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, ক্যারিয়ারজুড়ে আমার সতীর্থদের সমর্থন না থাকলে আমি এখন যে ক্রিকেটার তার অর্ধেকও হতে পারতাম না।”
“এটা অন্য জায়গায় গিয়ে টাকা কামাই করার মতো ব্যাপার না। এটা আপনার জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার, এটা সেই অনুভূতির ব্যাপার যে আপনার সময় ফুরিয়ে এসেছে। সবকিছুই শেষ হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বিশ্ব ক্রিকেটের সমর্থকদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, আপনাদের দয়া, উদারতা আর আজ এই পরিস্থিতি বুঝতে পারার জন্য।”
আইপিএল বা অন্য প্রিমিয়ার লিগগুলোতে না খেলারও ইঙ্গিত দিয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স, “বিদেশে খেলার কোনও পরিকল্পনা নেই আমার। অবশ্য আশা করি, আমি টাইটানসের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলব। প্রোটিয়া ও ফাফ ডু প্লেসিদের জন্য আমার সমর্থন সবসময়ই থাকবে।”
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দারুণ কিছু রেকর্ড আছে সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের। ওয়ানডেতে দ্রুততম ফিফটি (১৬ বল), সেঞ্চুরি (৩১ বল), ১৫০ (৬৪ বল)- এর রেকর্ড তারই। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস (২৭৮), আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ ৯৩৫ পয়েন্টের রেকর্ডও তার। টেস্টে ৫০.৬৬ গড়ে ৮৭৬৫ রান আছে ডি ভিলিয়ার্সের। ওয়ানডেতে ৫৩.৫০ গড়ে ৯৫৭৭ রান আছে তার। ২২ গজে যে বিনোদন দিয়ে গেছেন নিয়ত, সেটার জন্যই তিনি হয়ে থাকবেন অনন্য।