• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    বিশ্বকাপের ব্যবচ্ছেদ: গ্রুপ 'ই'

    বিশ্বকাপের ব্যবচ্ছেদ: গ্রুপ 'ই'    



    ব্রাজিল
    বাছাইপর্বের শুরুতে ধুঁকতে থাকা, কোচ বদলানো, তারপর নতুন কোচের অধীনে পুরোপুরি বদলে যাওয়া- সেখান থেকে পরিণত হওয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় দাবিদার হিসেবে।  তিতের ব্রাজিলের গল্পটা এমনই। ব্রাজিলে সাম্বার ছন্দ ফিরিয়ে এনেছেন ২০১৬-তে দায়িত্ব নেওয়ার পরই। এখন বিশ্বকাপটা ফিরিয়ে আনার পালা। ২৩ জনের দলে প্রায় প্রতিটি জায়গায় তার হাতে রয়েছে একাধিক বিশ্বমানের খেলোয়াড়। নেইমারের ব্রাজিল হয়েও তাই নেইমার নির্ভরতা নেই তিতের দলে।

    পজিশন হিসেবে সবখানেই মধুর সমস্যায় পড়ার কথা তিতের। একসঙ্গে ব্রাজিল কবে এমন দুজন বিশ্বমানের গোলরক্ষক পেয়েছে, সেটাও বলা কঠিন। মিরান্ডা, থিয়াগো সিলভা, মার্সেলো, দানিলোদের রক্ষণের সামনে মধ্যমাঠও দুর্দান্ত ভারসাম্যপূর্ন। কাসেমিরো, ফার্নান্দিনহোদের সঙ্গে কুতিনিয়ো, উইলিয়ানদের নিয়ে গড়া মিডফিল্ড হেক্সা জয়ের মিশনে ভরসাই যোগাচ্ছে ব্রাজিলকে। আর নেইমার তো চোট কাটিয়ে আভাস দিয়েছেন পুরো ফর্মে ফেরার। তিতের অধীনে ফ্রি রোলে খেলা নেইমার আগের চেয়েও পরিপক্ক, অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসীও।  ফিরমিনো দারুণ খেললেও হেসুস গোল করে দাবিটা জানিয়ে রাখছেন। লুঝনিকির ফাইনালে ব্রাজিলকে দেখার আশা করলে নিরাশ হওয়ার সম্ভাবনা কমই!

     

    শক্তি

    • ব্রাজিলের ২৩ জনের সবাই বিশ্বমানের, আছেনও কমবেশি ভালো ফর্মে। তিতের অধীনে গত ২১ ম্যচের ১৬টিতেই গোল খায়নি, বোঝাই যাচ্ছে রক্ষণও বড় নির্ভরতা। আর আক্রমণ তো বিশ্বের যে কোনো দলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো। সবচেয়ে বড় কথা, তিতে এই দলটা চেনেন খুব ভালোমতোই। দলের খেলায়ও সেই ছাপটা স্পষ্ট।
    • নেইমার ব্রাজিলের জার্সি গায়ে বরাবরই উজ্জ্বল। সঙ্গে কৌতিনিয়ো, উইলিয়ানরা একাই খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। দল হিসেবেও দারুণ, আবার একাই ম্যাচের সবটুকু আলো কেড়ে নেওয়া লোকেরও অভাব নেই। সব মিলিয়ে ব্রাজিলকে বলায় যায় দুর্দান্ত একটা দল। ফাইনালে না ওঠাটাই হবে অবাক করার মতো ঘটনা।

    দুর্বলতা

    • দানি আলভেসকে হারিয়ে ফেলাটাই একমাত্র দুর্বলতার জায়গা। দানিলো এই মৌসুমে সেভাবে খেলতে পারেননি, তবে বড় মঞ্চে ভালো করার সামর্থ্য আছে অবশ্যই। বড় চ্যালেঞ্জ হবে, গত বিশ্বকাপের মতো স্নায়ু না হারিয়ে ফেলা।
    • বিশ্বকাপ জিততে হবে সেই চাপটা আছে, বড় ম্যাচে বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ব্রাজিল কেমন করে সেটা অজানা। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালের মতো ম্যাচগুলোয় প্রতিপক্ষ খেলা নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করলে ব্রাজিলের জবাব কী হবে সেটা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ের অবস্থা সাদামাটা হওয়ায় কোনো পরীক্ষারই সম্মুখীন হতে হয়নি ব্রাজিলকে। 

     

    ভবিষ্যতবাণীঃ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন তো বটেই, ব্রাজিলের হাতে এবার কাপ না যাওয়াটাই হবে বিস্ময়

     

    কোস্টারিকা

    ২০১৪ বিশ্বকাপে উরুগুয়ে, ইতালি, ইংল্যান্ডের সঙ্গে এক গ্র“পে থেকেও দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প লিখেছিল কোস্টারিকা। সেই স্বপ্নযাত্রা থেমেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়ে, নেদারল্যান্ডসের কাছে টাইব্রেকারে হেরে।গত বিশ্বকাপে তাই অপরাজিতই ছিল কোস্টারিকা। ৪ বছর পর আবারও সেই গল্পের পুনরাবৃত্তি করতেই রাশিয়া গেছে লা সেলেরা। গতবার তাদের ওপর প্রত্যাশা ছিল না, এবার কি সেটাই চাপ হয়ে দাঁড়াবে?  ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে এই গ্রুপ থেকে কোস্টারিকাই তো এগিয়ে। গতবারের সফলতা তো আছেই,  সঙ্গে কোস্টারিকার রক্ষণ দুর্গও দিচ্ছে ভালো কিছুর ইঙ্গিত। বাছাইপর্বে মাত্র ৬ গোল হজম করেছে কোস্টারিকা। গঞ্জালেস, ওয়াটসন, দুয়ারতেদের নিয়ে গড়া রক্ষণের শেষ ভরসা রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। আগের বিশ্বকাপে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ সেভ করে নায়ক বনে গিয়েছিলেন। কোস্টারিকার আরেক তারকা ব্রায়ান রুইজ এবারও আছেন দলের সঙ্গে। ৩২ বছর বয়সী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কোস্টারিকার গোলের মূল উৎস।

    শক্তি

    • দুয়ায়ের্তে, আকুস্তো, গনজালেজের রক্ষণটা বেশ জমাট। চার বছর ধরেই খেলছেন এক সাথে। বাছাইপর্বে এই রক্ষণের ওপর ভর করে কোস্টারিকা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোকে হারিয়েছে। দুই উইংব্যাক ওভিয়েদো ও গামবোয়াও বেশ নির্ভরযোগ্য। আর গোলপোস্টের নিচে কেইলর নাভাস তো আছেনই।  

     

    দুর্বলতা

    • গত বিশ্বকাপে ব্রায়ান রুইজ ও জোয়েল ক্যাম্পবেল ছিলেন কোস্টারিকার গোলের বড় উৎস। এবার দুজনই ধার হারিয়ে ফেলেছেন অনেকটা, ক্লাব ফুটবলেও সময়টা তাদের ভালো যাচ্ছে না। কোস্টারিকার পরের পর্বে যাওয়ার অনেক কিছুই নির্ভর করবে এই দুজনের ওপর।

    ভবিষ্যতাবাণীঃ চতুর্থ হয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়

     

    সার্বিয়া

    দেশ হিসেবে সার্বিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এর আগে অবশ্য যুগোস্লাভিয়া আর সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর হয়ে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। সবমিলিয়ে তাই ১১ বারের মতো বিশ্বকাপে যাচ্ছে তারা। বাছাইপর্বে তুলনামূলক সহজ গ্রুপ পেরিয়েই মূলপর্বে এসেছে তারা। তবে দলের খেলা মন ভরাতে পারেনি সার্বিয়ানদের। বিশ্বকাপ নিশ্চিত হওয়ার এক মাস না যেতেই তাই স্লাভোলিউব মুসলিনকে কোচের পদ থেকে ছাঁটাই করা হয়েছিল। পরে দেশের সাবেক  খেলোয়াড় স্লাদের ক্রাস্টাইচকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে দলের দায়িত্ব। মার্চের প্রীতি ম্যাচে মরক্কোর কাছে হারলেও, নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ভালো খেলেই জিতেছিল ক্রাস্টাইচের দল। তাই দলের কাছে প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে সার্বিয়ানদের।

    রক্ষণ বরাবরই সার্বিয়ার মূল শক্তি। দুই ফুলব্যাক ইভানোভিচ, কোলারভের আছে অভিজ্ঞতার ঝুলি। কিন্তু রক্ষণে সার্বিয়ার রক্ষণের দুই সেনানীর বয়সও হয়ে গেছে, রক্ষণের গতি নিয়ে সংশয় আছে তাই।  মাঝমাঠে নেমানিয়া মাটিচ এরিয়াল ডুয়েল, বল ইন্টারসেপশনের সঙ্গে পাসিংয়েও সিদ্ধহ¯ত।  সঙ্গে সার্গে মিলিনকোভিচ সাভিচের অসাধারণ ফর্ম ভরসাই যোগাচ্ছে তাদের, নিদেনপক্ষে ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার মতো দল নিয়েই তো রাশিয়া গেছে তারা।
    শক্তি

    • সার্বিয়ার এই দলে কাগজে কলমে সমীহ জাগানো সব নাম আছে। রক্ষণে ইভানোভিচ-কোলারভ-নাস্তাসিচ, মধ্যমাঠে মাতিচের সঙ্গে মিলিনকোভিচ-সাভিচ তো আছেনই। আর আক্রমণে মিত্রোভিচ ভরসা করার মতো নাম্বার নাইন। সব মিলে দল হিসেবে বেশ ভারসাম্যপুর্ণ

    দুর্বলতা

    • কাগজে কলমে যতটা ভালো, সার্বিয়া আসলে ততটা ভালো কি না সেটা নিয়ে আছে সংশয়। মিলিনকোভিচ-সাভিচের ওপর প্রত্যাশা বেশি, কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে এখনো তেমন কিছু করতে পারেননি। ইভানোভিচ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে কোলারভকে দেওয়ায় দলের একতায় খানিকটা চিড় ধরেছে বলেও গুঞ্জন আছে।

    ভবিষ্যতবাণী: গোল ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের পেছনে থেকে তৃতীয়, গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়

     

    সুইজারল্যান্ড

    দল হিসেবে ভালো, কিন্তু বিশ্বমানের নয়। শেষ ইউরো আর বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের বাধা পেরুতে পারলেও তাই দ্বিতীয় রাউন্ডের বেশি আর যাওয়া হয়নি। বিশ্বকাপে সুইসদের সেরা সাফল্য অবশ্য কোয়ার্টার ফাইনাল। সেটাও ৬৪ বছর আগে। এবারও সেই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা তেমন নেই সুইসদের। তবে নিদেনপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে শক্ত এক পরীক্ষাই দিতে হবে। কোস্টারিকা, সার্বিয়ার সঙ্গে লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি। সুইসদের শক্তিমত্তা তাদের দুই উইং। দুই উইংব্যাক স্টেফান লিখস্টেইনার ও রিকার্ডো রদ্রিগেজ দলের পরীক্ষিত সৈনিক। আর জের্দান শাকিরি তো অনেকদিন ধরেই সুইসদের মূল তারকা। আর্সেনাল মিডফিল্ডার গ্রানিত শাকা জাতীয় দলের হয়ে খেলেন আক্রমণাত্মক ভূমিকায়। আক্রমণে ব্রিল এমবেলো ও হারিস সাফিরোভিচের ওপরেই ভরসা করতে হচ্ছে সুইজারল্যান্ডকে।

     

    শক্তি

    • সেই অর্থে বড় কোনো নাম না থাকলেও সুইজারল্যান্ডের রক্ষণ বরাবরই নির্ভর করার মতো। আর দুই উইংব্যাক লিখস্টেইনার ও রদ্রিগেজ তো শীর্ষ পর্যায়ের। বিশেষ করে সেট পিসের জন্য রদ্রিগেজের ওপর অনেকটা নির্ভর করবে। তবে সুইসদের বড় আস্থার জায়গা, বড় টুর্নামেন্ট এলেই জ্বলে ওঠেন শাকিরি। সেটা ২০১৪ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক হোক বা গত ইউরোতে সেই বাইসাইকেল কিক হোক।

    দুর্বলতা

    • গোল করার জন্য যোগ লোকের অভাব রয়েছে। সাফিরোভিচের মুভমেন্ট যতটা ভালো, ফিনিশিং ততটা নয়। তার ওপর সৃষ্টিশীলতারও একটু অভাব আছে, এখানে শাকিরির ওপর তারা অতি মাত্রায় নির্ভরশীল।

    ভবিষ্যতাবাণী: গোল ব্যবধানে সার্বিয়াকে পেছনে ফেলে গ্রুপে দ্বিতীয়, এরপর সেখান থেকেই বিদায়