• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    তীরে এসে তরী ডুবল সালাহবিহীন মিশরের

    তীরে এসে তরী ডুবল সালাহবিহীন মিশরের    

    ম্যাচের মাত্র মিনিট দুয়েক বাকি তখন। শেষ দশ মিনিটে একবার গোলরক্ষক আহমেদ এলশানাউইয়ের দক্ষতায়, অন্যবার ভাগ্যের জোরে তখনও সমতায় মোহাম্মদ সালাহবিহীন মিশর। ম্যাচের ঘণ্টাখানেক আগে জানা গিয়েছিল, মূল একাদশে থাকবেন না তিনি। নিজের ২৬তম জন্মদিন, বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচটা তাই দর্শক হিসেবেই কাটাতে হলো তাকে। ৮৮ মিনিট পর্যন্ত কোচ হেক্টর কুপারের সিদ্ধান্তটাই মনে হচ্ছিল সঠিক। কিন্তু ফুটবল যে চরম অনিশ্চয়তার খেলা! কার্লোস সানচেজের অন্তিম মুহূর্তের ফ্রিকিকে দুর্দান্তভাবে লাফিয়ে হেড করে বল জালে পাঠালেন উরুগুয়ে ডিফেন্ডার হোসে মারিয়া হিমেনেজ। কিছুক্ষণ আগে এলশানাউইয়ের সেভে উদযাপন করা সালাহ-কুপারের চেহারায় নেমে আসল রাজ্যের হতাশা। তীরে এসে তরী ডুবল তাদের। আর অন্তিম মুহূর্তে গোলে ‘এ’ গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দলের নামের প্রতি সুবিচার করল উরুগুয়ে। ইয়েকাতেরিনবুর্গে মিশরকে ১-০ গোলে হারিয়েছে উরুগুয়ে। ১৯৭০ সালের পর এবারই প্রথম গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচ জিতল দু'বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

     

     

    মূল একাদশে সালাহকে না পেয়েও শুরুটা ভালোই করেছিল মিশর। নিজেদের মাঝে দারুণ বোঝাপড়ায় ত্রেজেগে-মোহসেনরা প্রতিপক্ষ অর্ধেই কাটিয়েছেন প্রথমার্ধের অধিকাংশ সময়। তবে উরুগুয়ে গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরাকে তেমন কঠিন কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি কুপারের দল। বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও গোলের তেমন সুযোগই তৈরি করতে পারেনি উরুগুয়ে। সুয়ারেজ-কাভানিদের মাঝে স্বভাবসুলভ বোঝাপড়ার অভাবটা দেখা গেছে প্রকটভাবে। মাঝমাঠে তরুণ রদ্রিগো বেন্টাঙ্কুর এবং মাতিয়াস ভেসিনোও ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে।প্রথমার্ধে উরুগুয়ের একমাত্র উল্লেখযোগ্য সুযোগটাও এসেছিল তার হাত ধরেই। ২৫ মিনিটে ডি আরাস্কায়েতার কর্নার থেকে হেড করে সুয়ারেজের দিকে বাড়ান গোডিন। গোলের মাত্র গজ ছয়েক দূর থেকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল বাইরে মারেন সুয়ারেজ। বড় পর্দায় সালাহকে দেখানোর সময়ই হয়েছিল প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় উল্লাসধ্বনিটা। মাঠের সমর্থকদের প্রথমার্ধে এর চেয়ে বেশি উদযাপন করার মুহুর্তই আসেনি! 

     

     

     

    প্রথমার্ধে নিজ দলের গড়পড়তা পারফরম্যান্সে তার হতাশ অভিব্যক্তি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল একাধিকবার। মাঝেমধ্যেও নোট টুকতেও দেখা গেছে অস্কার তাবারেজকে। বর্ষীয়ান এই কোচের ‘হাফ টাইম টিমটক’-এর প্রভাবটা দেখা যায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। দেখা মেলে কাভানি-সুয়ারেজের সেই বোঝাপড়া। প্যারিসের স্ট্রাইকারের থ্রু পাস থেকে ৪৭ মিনিটে সুয়ারেজ নিশ্চিত গোল দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন মিশরের গোলরক্ষক এলশানাউই। নিয়মিত গোলরক্ষক এল-হাদারিকে বসিয়ে তাকে নামানোর সিদ্ধান্তের প্রতিদানটা দারুণভাবেই দিলেন এই তরুণ। দ্বিতীয়ার্ধের বাকিটা সময় আবারও উরুগুয়েকে হতাশায় পুড়িয়েছে মিশর। কুপারের দলের ইস্পাতদৃঢ় রক্ষণকে হাজারও চেষ্টা করেও ভাঙ্গতে পারেননি সুয়ারেজরা।

    কাভানি-সুয়ারেজদের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের বিপরীতে প্রতি আক্রমণে মিশরকেই মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর। কিন্তু প্রথমার্ধের মত এবারও মুসলেরাকে ফাঁকি দিতে পারেনি তারা। মুসলেরা তেমন পরীক্ষায় না পড়লেও এলশানাউইকে একাধিকবার দিতে হয়েছে সামর্থ্যের প্রমাণ। ৭৪ মিনিটে আবারও কাভানির পাস থেকে ডিবক্সে বল পেয়ে যান সুয়ারেজ। ক্ষীপ্রগতিতে লাইন থেকে এগিয়ে এসে বল কেড়ে নেন এলশানাউই। এর মিনিট দশেক পর কাভানির হাফভলি শূন্যে ভেসে অবিশ্বাস্যভাবে রুখে দেন তিনি। আজ গোলের দেখা না পাওয়ায় ভাগ্যকে দুষতেই পারেন কাভানি। ৮৮ মিনিটে ডিবক্সের সামান্য বাইরে থেকে তার চমৎকার বাঁকানো ফ্রিকিক এলশানাউইকে পরাস্ত করলেও প্রতিহত হয় বারপোস্টে। কাভানি শূন্যহাতে ফিরলেও হিমেনেজের গোলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে উরুগুয়ে। গোলের পর উরুগুয়ের বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে ক্রাচহাতে শামিল হন ‘এল মায়েস্ত্রো’ তাবারেজও। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার মানসিকতার জয় হল আবারও।

     

    একাদশঃ

    মিশরঃ এলশেনাউয়ি, ফাতি, গাবর, হেগাজী, আবদেলশাফী, এলনেনী, হামেড, ওয়ারদা, এলসাঈদ, ত্রেজেগে, মোহসেন

    উরুগুয়েঃ মুসলেরা, ভারেলা, গোডিন, হিমেনেজ, কাসেরেস, নান্দেজ, বেন্টাঙ্কুর, ভেচিনো, ডি আরাস্কায়েতা, সুয়ারেজ, কাভানি