বিশ্বকাপ শেষ চ্যাম্পিয়ন জার্মানির
জোয়াকিম লো অধোবদন হয়ে বসে আছেন। জার্মানির সাইডবেঞ্চে একেকজন যেন পাথরের নিশ্চল মূর্তি। মাটিতে শুয়ে পড়েছেন হামেলসরা, যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না কী হয়েছে। রাজ্যহারা রাজার মতো একেকজন যেন দীনহীন। জার্মানি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেবে, মাঠে দাঁড়িয়েও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সমর্থকেরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নদের অভিশাপটাই হয়েছে সত্যি, ১৯৩৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে জার্মানি। রাশিয়া থেকে তাদের আরও একবার বিদায় নিতে হলো মাথা নিচু করে।
গত কয়েকটি বিশ্বকাপেই চ্যাম্পিয়ন মানেই যেন অভিশাপ। ২০০২ সালে ফ্রান্স। ২০১০ সালে ইতালি। ২০১৪ সালে স্পেন। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে এবার সেই ভাগ্য বরণ করতে হলো জার্মানিকে।
অথচ আগের ম্যাচেও যেভাবে শেষ মুহূর্তে গোল দিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছিল ভাগ্য এবার জার্মানির পক্ষেই। কোরিয়ার সাথে ম্যাচে যখন প্রথমার্ধ গোলশূন্য, জার্মানির আক্রমণ যখন নিস্ফলা মাঠের কৃষকের মতো মাথা খুঁটে মরছে, তখনও জাগেনি শঙ্কা। এই জার্মানি তো শেষ মুহূর্তে গোল করতেই পারে, সময় তো অনেক আছে।
সেই সময়ও ফুরিয়ে এলো একটু একটু করে। জার্মান সমর্থকদের ঘড়ির কাঁটা হয়ে এলো একেকটি দুশ্চিন্তার দীর্ঘ প্রহর হয়ে। ওদিকে সুইডেন একে একে তিন গোল দিয়েছে মেক্সিকোর জালে, জার্মানিকে তখন জিততেই হবে। আগের ম্যাচেও প্রথমার্ধে কিছু করতে পারেনি। আজও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আবার তেঁড়েফুড়ে খেলতে থাকে জার্মানি।
বিরতির পর আরেকটু হলেই গোল দিয়ে দিয়েছিল জার্মানি। কিন্তু কিমিখের ক্রস থেকে লিওন গোরেতস্কার হেড দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছেন কোরিয়া গোলরক্ষক চো ইউন হু। বার্লিনের দেয়াল ভেঙে গেলেও আজ চো ইউন হুর দেয়াল ভাঙতে পারেনি জার্মানি, সব আক্রমণ শেষ হয়ে গেছে সেখানেই।
বরং ৬৫ মিনিটে গোল পেয়েই গিয়েছিল কোরিয়া, কিন্তু বক্সের ভেতর ঢুকেও গোলরক্ষককে একা পেয়ে শট নিতে দেরি করে ফেললেন মুন সিউন মিন।
৮০ মিনিটের পর আবার জার্মানি সাঁড়াশির মতো শুরু করে আক্রমণ। ৮২ মিনিটে গোমেজের হেড চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। রয়েস, ক্রুস দূর থেকে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু এদিন যে কিছুই হওয়ার নয়। তবে ৮৭ মিনিটে হামেলস যেটা মিস করলেন, সেটা ভুলতে হয়তো সময় লাগবে অনেক। ওজিলের ক্রসটা ফাঁকায় পেয়েও মাথায় লাগাতে পারেননি, কাঁধে লেগে চলে গেছে বাইরে।
বরং যোগ করা সময়েই সবকিছু তছনছ হয়ে যায় জার্মানদের। হামেলসদের ভুল বোঝাবুঝিতে বক্সে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন কিম ইয়ং গুন। বলটা জালে জড়িয়ে দেওয়ার পর সহকারি রেফারি অফসাইড দেখিয়েছিলেন কিন্তু ভিডিও সহকারী রেফারি সিদ্ধান্তটা বাতিল করে গোলের রায় দেন। তবে নাটক বাকি ছিল তখনো। শেষ সময়ে নয়্যারের ভুল বল পেয়ে যায় কোরিয়া। ফাঁকা পোস্টে গোল দিয়ে জার্মানির হৃদয়ে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন হিউ মিন সন। যোগ করা সময়ের খেলা যখন নয় মিনিট, জার্মানি প্রাণপণ হয়েও চেষ্টা করছিল। কিন্তু হামেলসের হেড পোস্টে লেগে চলে গেছে বাইরে। অভিশাপের দিনে যে জার্মানির কিছুই হওয়ার নয়!
জার্মানি একাদশঃ নয়্যার, হেক্টর, হামেলস, সুলে, কিমিখ, খেদিরা, ক্রুস, ওজিল, রয়েস, ভের্নার, গোরেতস্কা।
কোরিয়া একাদশঃ উ চো, ইয়াং লি, ইয়ুন, কিম, চুল হং, যে সুং লি, জুং, জাং, মুন, চেওল কু, হিউ মিন সন