ক্রিকেট থেকে হকি : এলেনা টাইসের অদ্ভুত ভ্রমণ
বয়স চার, অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র, খেলা বেসবল। বয়স ছয়, অবস্থান ভিয়েনা, খেলা ক্রিকেট। বয়স নয়, অবস্থান আয়ারল্যান্ড, খেলা ক্রিকেট। বয়স ১৩, আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলে অভিষেক, ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে। বয়স ১৮, আয়ারল্যান্ড জাতীয় হকি দলে অভিষেক। বয়স ২০, বিশ্বকাপ হকিতে রানার্স-আপ দলের সদস্য হয়ে রৌপ্য পদক।
এলেনা টাইস। যদি খেলাধুলায় অসাধারণ এক ভ্রমণের কাহিনী খোঁজেন, তবে টাইসের জীবনটা সেরকম।
১৩ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে খেলেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, আয়ারল্যান্ড উইমেনস দলের হয়ে। ১৮ বছর বয়সে আইরিশ হকি দলের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল তার, ২০১৬ সালে। ২০ বছর বয়সে এসে টাইস বিশ্বকাপ হকিতে আয়ারল্যান্ডের হয়ে জিতলেন রৌপ্য।
গত ১৬ বছরে বিশ্বকাপে এই প্রথম খেললো আয়ারল্যান্ড। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ফাইনাল হেরে রানার্স-আপ হয়েছে টাইসের দল, কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এই দলের যা সেরা সাফল্য। পরবর্তী র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশে ঢুকবে আয়ারল্যান্ড, এ বিশ্বকাপ তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের উত্থানের গল্প।
টাইস অর্থনীতির ছাত্রী, ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিনের ডিফেন্ডার। মেয়ে ক্রিকেটার, যারা অন্য খেলাতেও বেশ উঁচুদরের ছিলেন, সেই অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার এলিস পেরি (ফুটবল), নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক সুজি বেটস (বাস্কেটবল), অলরাউন্ডার সোফি ডিভাইনদের (হকি) তালিকায় থাকবে টাইস।
দুই খেলা মিলিয়ে শতাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন টাইস। এর মধ্যে চল্লিশটি ক্রিকেটে। সম্প্রতি ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন এই লেগস্পিনার। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলেছিলেন ২০১৫ সালে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি।
হ্যাম্পশায়ারের বেসিংস্টোকে জন্ম টাইসের, চার বছর বয়সেই চলে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে বেসবল বেছে নিয়েছিলেন, তবে ছয় বছর বয়সে তার পরিবার চলে যায় ভিয়েনায়। অস্ট্রিয়াতে থাকতেই ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা শুরু তার, সেখানে খেলেছেন ক্লাব ক্রিকেট। নয় বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডে আসেন তিনি, স্কুল ক্রিকেট শুরু সেখানেই। অ্যারাভন স্কুলের হয়ে খেলতেন, সঙ্গে মেরিয়ন ক্রিকেট ক্লাবেও। সে বছরই হকির দিকেও ঝোঁকটা বাড়ে তার।
শুধু ক্রিকেট বা হকি নয়, ফুটবল, রাগবি, হর্স-রাইডিংয়েও বেশ কিছু ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন তিনি, ১৩ বছর বয়সের আগে। তবে ক্রিকেট ও হকির মধ্যে অদল-বদলটা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছিল টাইসের, যখন তিনি দুই খেলারই বয়সভিত্তিক আইরিশ দলে প্রতিনিধিত্ব শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটকেই ত্যাগ করতে হয়েছে তাকে।
অবশ্য খেলাধুলার প্রতি ঝোঁকটা তার রক্তেই আছে। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট তিনি। এক ভাই প্যাট্রিক আয়ারল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ছিলেন। আরেক ভাই ডালটন রাগবি খেলেছেন লিনস্টার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে।
টাইস ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভক্ত, পল স্কোলস ও অ্যান্ড্রিউ ফ্লিনটফের ভক্ত তিনি। তার মূল লক্ষ্য এখন ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে খেলা।
ভবিষ্যত হকি খেলোয়াড়দের প্রতি তার উপদেশ- “অন্য সবার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করো।”
২০ বছর বয়সে টাইস যতকিছু করেছেন, এমন উপদেশ দেওয়া তো তারই সাজে!