• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    গার্দিওলার সিটিকে ঠেকাবে কে?

    গার্দিওলার সিটিকে ঠেকাবে কে?    

    স্বপ্নের মত মৌসুম বলতে আসলে কী বোঝায়? লিগ জেতা? তা তো অবশ্যই। ভাল খেলে জেতা? হয়তবা। তবে প্রথম দল হিসেবে ইংল্যান্ডে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে ইপিএল-এর শিরোপা ঘরে তোলা, এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল, সবচেয়ে বেশি টানা জয়, এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি জয়, সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে লিগ জেতা- এসবগুলো রেকর্ড গড়ে যদি একটা দল শিরোপা ঘরে তোলে, তাহলে স্বপ্নময় মৌসুমের সংজ্ঞা আপনার কাছে যা-ই হোক; সবাই মানতে বাধ্য যে দলটা আসলেই শিরোপার যোগ্য দাবিদার। আক্ষরিক অর্থেই এমন কেটেছে পেপ গার্দিওলার দর্শনে দিষ্ট ম্যানচেস্টার সিটির গত মৌসুম। ইউরোপের সবচেয়ে প্রতিযোগীতামূলক লিগটিকে রীতিমত একপেশে ছেলেখেলা বানিয়েই জিতেছেন গার্দিওলা। স্বাধীনতার অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা কঠিন। এই সপ্তাহে আর্সেনালের বিপক্ষে তাই নিজেদের ‘স্বাধীনতা’ রক্ষার মিশনে নামছে গার্দিওলার দল।

     

    জুড়ি নেই এডারসনের

    বেনফিকা থেকে চড়া দামে তাকে যখন সিটিতে নিয়ে আসা হল, তখন চোখ কপালে তুলেছিলেন অনেকেই। কিন্তু ইংল্যান্ডে এক মৌসুমেই সিটির দলে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এডারসন মোরায়েস। ধারাবাহিকতা এবং দুর্দান্ত গোলকিপিং দক্ষতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। গত মৌসুমের মত এডারসনের ‘আন্ডারস্টাডি’ ক্লদিও ব্রাভোকে এবারও হয়ত বেঞ্চে দর্শক হয়েই কাটাতে হবে মৌসুমের সিংহভাগ। কমিউনিটি শিল্ডে চেলসির বিপক্ষে ক্লিনশিট রাখলেও বেশ নড়বড়ে ছিলেন চিলিয়ান গোলরক্ষক।

     

    আবারও দেখা যাবে ‘থ্রি ম্যান ডিফেন্স’?

    গত মৌসুমে তিনজন সেন্টারব্যাক নিয়ে সিটির রক্ষণভাগকে রীতিমত এক দুর্ভেদ্য দেয়ালই বানিয়েছিলেন গার্দিওলা। নিকোলাস অটামেন্ডি, জন স্টোনসের সাথে কাইল ওয়াকারকেও রক্ষণে খেলিয়েছিলেন তিনি। ভিনসেন্ট কম্পানি বেশিরভাগস সময় ইনজুরিতে থাকায় ওয়াকার খেলেছিলেন সেন্টারব্যাক হিসেবে। নিজের দুর্দান্ত গতির কারণে প্রতি-আক্রমণে প্রতিপক্ষকে আটকানোর কাজটা দারুণভাবে করেছেন ওয়াকার। তবে কম্পানি সম্পূর্ণ ফিট থাকায় হয়ত অটামেন্ডি-স্টোনস-কম্পানি ত্রয়ীকেই রক্ষণে নামাবেন গার্দিওলা। তিনজনের মাঝে দারুণ বোঝাপড়া, বল পায়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ এবং লম্বা পাসে আগুয়েরো-স্টার্লিংদের পাস যোগানো- সিটির তিন সেন্টারব্যাককে অলরাউন্ডার বললে ভুল হবে না খুব একটা। আর সেটপিসে তাদের চেয়ে ভয়ঙ্কর খুব কম ফুটবলারই আছে ইংল্যান্ডে।

    কম্পানি মূল একাদশে নামলে স্বভাবসুলভ রাইটব্যাক পজিশনেই খেলবেন ওয়াকার এবং বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রেঞ্চ বেনজামিন মেন্ডি লেফটব্যাক হিসেবে। আক্রমণাত্মক হলেও রক্ষণেও দারুণ সিটির দুই ফুলব্যাক। মাঝমাঠে ডি ব্রুইন, সিলভাদের সাথে চমৎকার বোঝাপড়াটাও মূল একাদশে তাদের নামাকে যেন আরও যৌক্তিকতা দেয়। 

     

    মধুর সমস্যার নাম মাঝমাঠ

    ফার্নান্দিনহো, গুন্ডোয়ান, সিলভা, ডি ব্রুইন, লিরয় সানে, রহিম স্টার্লিং, বের্নার্দো সিলভা, মাহরেজ। মাঝমাঠ সাজাতে রীতিমত এক মধুর সংকটেই পড়েছেন গার্দিওলা। ৩-৫-২ ফর্মেশন খেলালে ‘শিল্ড মিডফিল্ডার’ হিসেবে খেলবেন ফার্নান্দিনহো। তার বদলি হিসেবে থাকবেন ইলকে গুন্ডোয়ান। মাঝমাঠের ট্যাকলিং, বল ধরে রাখা এবং আক্রমণে পাশ যোগানো- সব দিক দিয়েই দারুণ ফার্নান্দিনহো।  তার দু’পাশে থাকবেন ডেভিড সিলভা এবং কেভিন ডি ব্রুইন। সিলভাকে খানিকটা নিচে নামিয়ে ডি ব্রুইনকে’ নাম্বার টেন’ বা ‘ফ্রি রোল’-এ খেলাতে পারেন গার্দিওলা। গত মৌসুমে আক্রমণভাগের যেকোনো পজিশনে খেলানোর এই স্বাধীনতা পেয়েই রীতিমত দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছিলেন ‘কেডিবি’। গোল করেছিলেন ৮টি, করিয়েছিলেন মোট ১৬টি। খানিকটা নিচে খেললেও বল যোগানে পিছিয়ে থাকবেন না সিলভা- এমনটা দেখা গেছে গত মৌসুমেই। ৯ গোলের সাথে অ্যাসিস্ট করেছিলেন ১১টি। মাঝমাঠে এই তিনজনের জায়গা পাকাই বলা চলে।

    তবে প্রথাগত ‘ফোর ম্যান ডিফেন্স’ খেলালে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলবে সিটি। সেক্ষেত্রে ফুলব্যাকরা খেলবেন কিছুটা পিছিয়ে। আর ‘থ্রি ম্যান ডিফেন্স’ খেলালে ফুলব্যাক রোলে ওয়াকার-মেন্ডিদের সাথে লড়বেন সানে-স্টার্লিংরা। অবশ্য বিশ্বকাপের ধকল সামলে না ওঠা স্টার্লিং, কেডিবি, মেন্ডি, ওয়াকারদের মৌসুমের শুরুতে হয়ত বিশ্রাম দেবেন গার্দিওলা। সেক্ষেত্রে বের্নার্দো সিলভা বা মাহরেজের খেলার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তবে রক্ষণের সামর্থ্যের বিচারে ওয়াকার-মেন্ডি জুটি এগিয়ে থাকবেন কিছুটা হলেও। তবে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল সাজালে মাহরেজ-বের্নার্দোরা খেলবেন উইংয়ে। সেক্ষেত্রে একজন স্ট্রাইকার খেলাবেন গার্দিওলা।

     

    ফরোয়ার্ড লাইনেও আছে প্রাচুর্য

    সানে, স্টার্লিং, বের্নার্দো, মাহরেজ। এরকম বিশ্বমানের চার তারকাকে বসিয়েও দারুণ শক্তিশালী এক দল সাজাতে পারবেন গার্দিওলা। পছন্দের ৩-৫-২ ফর্মেশনে সার্জিও আগুয়েরো এবং গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে নামিয়েছিলেন গার্দিওলা। আগুয়েরো খেলেছিলেন একটু নিচে, ‘নাম্বার টেন’-এর মত কিছুটা। গোল করা তো বটেই, সাথে হেসুসকে পাস যোগানোর কাজটা ডি ব্রুইনদের সাথে করেছেন আগুয়েরোও। বিশ্বমানের দুই স্ট্রাইকারের মাঝে বোঝাপড়ার কারণে হয়ত আবারও একই ফর্মেশনে দল সাজাবেন স্প্যানিশ কোচ।

    আসলে রক্ষণের ওপরই নির্ভর করছে কেমন দল নামাবেন গার্দিওলা।  এ তো গেল তিনজন সেন্টারব্যাক নামলে সিটির আক্রমণ যেমন হতে পারে তার হিসাব। ওয়াকার-মেন্ডিরা নিচে নেমে চারজনের রক্ষণভাগে খেললে দুজন নয়, একজন স্ট্রাইকার খেলাবেন গার্দিওলা। আগুয়েরোর পাশে দুই উইংয়ে তখন খেলবেন সানে, সিলভা, মাহরেজ, স্টার্লিংদের একজন। গত মৌসুমে স্টার্লিং, সানে ছিলেন দু’প্রান্তে। ক্ষিপ্রগতির সাথে নিচে নেমে রক্ষণে সাহায্য করা, স্ট্রাইকারদের সাথে বোঝাপড়া হিসেব করলে এবারও মূল একাদশে দেখা যেতে পারে তাদেরকেই। তবে ক্লাব রেকর্ড সাইনিং মাহরেজ, সিলভাও ফেলনার পাত্র নন। তবে দীর্ঘ মৌসুমে রোটেশনের কারণে হয়ত সুযোগ পাবেন সবাই-ই।


    প্রথম মৌসুমে ভরাডুবির পর গত মৌসুমে নিজের জাত চিনিয়ে ছেড়েছেন গার্দিওলা। তার ফুটবলীয় মস্তিষ্কের জটিল সব ছকের সামনে রীতিমত তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে প্রতিপক্ষরা। দল আছে আগের মতই, আছে গার্দিওলার দর্শনও। পজেশনের ফুটবলের এক আক্রমণাত্মক পসরা সাজানো গার্দিওলার দল গত মৌসুমের মত খেললে এবারও হয়ত তাদের নাগাল পাবে না শিরোপাপ্রত্যাশীরা।

     

    প্রেডিকশনঃ চ্যাম্পিয়ন (মূল কারণ গার্দিওলা। তার দর্শনে পুরোপুরি মানিয়ে নিয়েছে সিটি। স্কোয়াড ডেপথও দুর্দান্ত। রোটেশন পলিসির শরণাপন্ন হলেও বেশ শক্তিশালী এক দলই পাবেন গার্দিওলা। দুর্ধর্ষ আক্রমণভাগ, সাথে ইস্পাতদৃঢ় রক্ষণ। শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনাই প্রবল দেখা যাচ্ছে সিটির)।