• লা লিগা
  • " />

     

    রোনালদো-পরবর্তী যুগে রিয়ালের সামনে অনেক প্রশ্ন

    রোনালদো-পরবর্তী যুগে রিয়ালের সামনে অনেক প্রশ্ন    

    ২৭ মে, ২০১৮। টানা ৩য় চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে লিভারপুলকে হারিয়ে নিজেদের ১৩তম শিরোপা ঘরে তুলল রিয়াল মাদ্রিদ। একবিংশ শতাব্দীতে একমাত্র দল হিসেবে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতল 'লস ব্লাঙ্কোস'রা।  অনুমিতভাবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই হলেন সেবারের টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ গোলদাতা। আর সেদিন কোচিংয়ে আসা 'পুঁচকে' জিদান ম্যানেজার হিসেবে করলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের 'হ্যাটট্রিক'।

    মাঝে কেটে গেছে প্রায় আড়াই মাস। ইউরোপে একচ্ছত্র আধিপত্য ছড়ানো রিয়ালে সংসারে আগুনে পুড়ে ছারখার। ক্লাব ছেড়েছেন রোনালদো-জিদান। মাঝমাঠের প্রাণভোমরা লুকা মদ্রিচের ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনও বেশ ডালপালা ছড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে বেশ ছন্নছাড়া এক দল নিয়েই নতুন মৌসুম শুরু করতে হচ্ছে নতুন কোচ হুলেন লোপেতেগিকে। এর মাঝে আবার প্রথম ম্যাচেই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে হেরেছেন ইউয়েফা সুপারকাপের ফাইনাল। জিদানের অধীনে ১৪৯ ম্যাচের কোনোটিতেই ৩ গোলের বেশি হজম করেনি রিয়াল। লোপেতেগির প্রথম ম্যাচের হজম করতে হল 'হালি'। মৌসুমটা দলের সাথে নিজের জন্যও অনেক চ্যালেঞ্জিং- এমন সমীকরণ নিয়েই মাঠে নামছেন লোপেতেগি।

     

    নাভাস না কর্তোয়া?
    ইকার ক্যাসিয়াস ক্লাব ছাড়ার পর থেকেই রিয়ালের গোলবারের নিচে ভরসার মূল প্রতীক কেইলর নাভাস। টানা ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরও ডেভিড ডি গেয়াকে দলে ভেড়ানোর গুঞ্জনে কান দেননি একেবারেই। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে মন জয় করে নিয়েছিলেন জিদানের। এজন্যই ডি গেয়াকে দলে ভেড়াননি ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তী। রিয়ালের টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের অন্যতম মূল কুশীলব এই কোস্টারিকান গোলরক্ষকই।

     

     

    জিদান ক্লাব ছাড়লেন, নাভাসও হারালেন আস্থার এক বটবৃক্ষের ছায়া। লোপেতেগি আসতেই চেলসি থেকে থিবো কর্তোয়াকে দলে ভেড়ালেন প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। সুপারকাপে নাভাস নামলেও এখনও রিয়ালের মূল গোলরক্ষক কে থাকছেন- তা হয়ত নিশ্চিতভাবে জানেন না লোপেতেগি নিজেও। তৃতীয় গোলরক্ষক কিকো ক্যাসিয়ার সাথে আছেন আরেক নতুন গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিন। সব মিলিয়ে গোলরক্ষকের প্রাচুর্যে ভুগলেও নিজের 'নাম্বার ওয়ান' নিয়ে হয়ত এখনও চিন্তিত লোপেতেগি।

     

     

     

    দুশ্চিন্তার নাম রক্ষণ
    এই রক্ষণভাগ দিয়েই জিদানের অধীনে সাফল্যমণ্ডিত তিনটি বছর কাটিয়েছে রিয়াল। কিন্তু লোপেতেগির অধীনে প্রথম ম্যাচেই রিয়ালের রক্ষণ ছিল দুশ্চিন্তা করার মত নড়বড়ে। দুই ফুলব্যাক দানি কারভাহাল এবং মার্সেলো খেলেছেন ভালোই, কিন্তু সেন্টারব্যাকে সার্জিও রামোস এবং রাফায়েল ভারান ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে। তবে মৌসুমের শুরুর দিকে হওয়ায় রক্ষণ নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন লোপেতেগি।  তার অধীনে এই চারজনই খেলবেন রিয়ালের মূল একাদশের রক্ষণভাগে। কারভাহাল-মার্সেলো উপরে উঠে বেলদের আক্রমণে যেমন সাহায্য করেন, ঠিক তেমনি নিচে নেমে রক্ষণের কাজটাও করেন দারুণভাবে। আর রক্ষণের মাঝে রামোস-ভারানের খেলা নিশ্চিত। তাদের বিকল্প হিসেবে থাকছেন নাচো ফার্নান্দেজ এবং হেসুস ভায়েহো। কারভাহালের বদলি হিসেবে দলে এসেছেন তরুণ আলভারো ওদ্রিয়োজোলা। আর গত মৌসুমে মার্সেলোর 'আন্ডারস্টাডি' থিও হার্নান্দেজ ধারে পাড়ি জমিয়েছেন রিয়াল সোসিয়াদাদে। তার জায়গায় রিয়ালের স্কোয়াডে থাকবেন কাস্তিয়া থেকে উঠে আসা তরুণ ডিফেন্ডার সার্জিও রেগিলন।

     

    সময় এখন ইস্কোর
    লোপেতেগির অধীনে স্পেনের অন্যতম মূল তারকা ছিলেন তিনি। রিয়ালে কখনোই মূল একাদশে তেমন থিতু না হলেও স্পেনের দলে জুড়ি নেই ইস্কোর। জিদানের অধীনেও ছিলেন না মূল একাদশে। তবে ফ্রেঞ্চ কোচ রিয়াল ছাড়া আর লোপেতেগির আসায় ইস্কো এখন রিয়ালের চোখের মণি। মাঝমাঠে ক্রুস-মদ্রিচ-কাসেমিরোরা থাকবেন এবারও। কাসেমিরো থাকবেন 'ডেস্ট্রয়ার' হিসেবে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে লম্বা পাসে রিয়ালের আক্রমণে সাহায্য করার কাজটা করেন দুর্দান্তভাবে। ক্রুস খেলবেন একটু পিছনে, মাঝমাঠের 'আর্কিটেক্ট' হিসেবে। আর ইস্কোর ঠিক পেছনে রিয়ালের মাঝমাঠ থেকে আরেক আক্রমণের উৎস হিসেবে থাকবেন মদ্রিচ।

     

     

    ৪-৩-৩ হলেও লোপেতেগি মূলত খেলাবেন ৪-৩-১-২ ফর্মেশন। ক্রুস-মদ্রিচ-কাসেমিরোর ঠিক সামনেই 'নাম্বার টেন'-এ খেলবেন ইস্কো। 'ফ্রি রোল'-এ স্বাধীনতা পেয়েই জ্বলে উঠেছিলেন স্পেনের হয়ে। এবারও তার থেকে এমন কিছুই আশা করবেন লোপেতেগি।

     

    বেলের সঙ্গী কে?
    জিদানের অধীনে গত মৌসুমে একটা সময় 'পেকিং অর্ডার'-এ লুকাস ভাজকেজ, মার্কো আসেন্সিওদেরও নিচে নেমে গিয়েছিলেন গ্যারেহ বেল। রিয়াল ছাড়া সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। জিদান গেলেন, তবে আসলেন লোপেতেগি। যিনি আবার উইং নির্ভর খেলা তেমন পছন্দ করেন না। তাই বেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিল যথেষ্ট সংশয়। তবে লোপেতেগি নিজেই বেলকে আশ্বাস দিয়েছেন, রোনালদোর বদলে তিনিই হবেন রিয়ালের আক্রমণভাগের 'নিউক্লিয়াস'। প্রাক-মৌসুমে এর ফলাফলটাও পেয়েছেন হাতেনাতে। আক্রমণভাগে স্বাধীনতা পেয়েই স্বরূপে জ্বলে উঠেছেন বেল।

     

     

    বেলের সাথে প্রাক-মৌসুমে দুর্দান্ত খেলেছেন আসেন্সিও-ও। লোপেতেগির অধীনে 'ফলস নাইন' হিসেবে অসাধারণ খেলেছেন তিনি। গোলও করেছেন বেশ। সামনে ফরোয়ার্ড হিসেবে বেল নামছেন নিশ্চিতভাবেই, তবে তার সাথে কে খেলবেন তা নিয়ে আছে সংশয়। করিম বেনজেমাও লোপেতেগির অধীনে খেলেছেন ভালোই। আক্রমণভাগে তার সাথে দলের সবার বোঝাপড়াটাও দারুণ। তাই রিয়ালের আক্রমণভাগে বেলের সঙ্গী নিয়েই থাকছে সংশয়। আর বিকল্প হিসেবে থাকছেন দুই স্প্যানিশ তারকা লুকাস ভাজকেজ এবং বোরহা মায়োরাল।

     

    রোনালদো-পরবর্তী যুগের সূচনাটা মৌসুম থেকেই হচ্ছে রিয়ালের। ইউয়েফা সুপারকাপের ম্যাচে রিয়ালের খেলা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, দলে কোনো প্রমাণিত গোলদাতার অভাবটা হয়ত বেশ পোড়াবে রিয়ালকে। রোনালদোর বিকল্প হিসেবে গোলের মূল উৎস কে হবেন বা নতুন কেউ আদৌ আসবেন কি না- তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। লোপেতেগির অধীনে রিয়ালের নতুন সূচনাটা কেমন হবে, তা বলা যাচ্ছে না এখনই। মাঝমাঠ যতই বিশ্বমানের হোক না কেন, প্রমাণিত গোলদাতার অভাবটা রিয়ালের দলে বেশ প্রকট।