• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    রোনালদোর লাল কার্ডের পর দুই পেনাল্টিতে পার জুভেন্টাস

    রোনালদোর লাল কার্ডের পর দুই পেনাল্টিতে পার জুভেন্টাস    

    ম্যাচে মোট তিনবার পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছেন রেফারি। তার দুইটি পেয়েছিল জুভেন্টাস, দুইটি নিয়েছেন মিরালেন পিয়ানিচ, দুইবারই করেছেন গোল। আরেকটা ভ্যালেনসিয়ার, সেটা ঠেকিয়ে দিয়েছেন জুভেন্টাস গোলরক্ষক ওজানিক সেজনি। শেষ পর্যন্ত ভ্যালেনসিয়াকে হারাতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি জুভেন্টাসকে। ২-০ ব্যবধানেই জিতেছে তারা। কিন্তু সবকিছু আসলে ছাপিয়ে গেছে রেফারির অন্য আরেকটা সিদ্ধান্ত। তিন পেনাল্টির সঙ্গে একটা লাল কার্ডও দেখিয়েছেন জার্মান রেফারি ফেলিক্স ব্রিখ। তাও যাকে তাকে নয়, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। ২৯ মিনিটেই তাই দশ জনের দলে পরিণত হয়েছিল জুভেন্টাস। 

    ম্যাচ শেষেও রেফারির সেই সিদ্ধান্তই ছাপিয়ে গেছে জুভেন্টাসের জয়। আর নতুন ক্লাবের হয়ে রোনালদোর চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন অধ্যায়টা থেমেছে চোখের জলে। রেফারির অদ্ভুত সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলেন রোনালদো। স্পেনে এমন ফিরে আসা তো তিনি চাননি। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৫৪ তম ম্যাচে এসে রোনালদো দেখলেন ক্যারিয়ারের প্রথম লাল কার্ড। এই ম্যাচটা তো তিনি ভুলে যেতেই চাইবেন।


    আরও পড়ুনঃ চোখের জলে মাঠ ছাড়লেন রোনালদো



    তবে জুভেন্টাস কোচ মাসসিমিলিয়ানো আলেগ্রি অবশ্য এই ম্যাচের লড়াইটা মনেই রাখতে চাইবেন। মেস্তায়ায় তিন পরিবর্তন এনে একাদশ সাজিয়েছিলেন, তাতে জায়গা হয়নি ডগলাস কস্তা, পাউলো দিবালাদের কারও। মাঞ্জুকিচ, বার্নাদেস্কি আর রোনালদো মিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন জুভেন্টাসের আক্রমণ। উইং বদলে বার্নাদেস্কি শুরু থেকেই ছিলেন ভয়ঙ্কর, রোনালদোও লেফট উইংয়ে দারুণ খেলে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দিনের কথা। সেই তুলনায় মাঞ্জুকিচ ছিলেন কিছুটা নিষ্প্রভ। ১০ মিনিটে ম্যাচে জুভের প্রথম সুযোগে অবদান ছিল তিনজনেরই। বার্নাদেস্কির বাঁ দিক থেকে করা ক্রসে ভলি করেছিলেন রোনালদো। ডিবক্সের ভেতর থেকে করা রোনালদোর সেই ভলি অবশ্য ছিল মিস হিট। কিন্তু মাঞ্জুকিচের কাছেই যায় সেই বল, গোল করার মতো জায়গা থেকে গোলেই শট নিতে পারেননি ক্রোয়াট ফরোয়ার্ড, মেরেছেন ওপর দিয়ে। 



    ৭ মিনিট পর সামি খেদিরার মিসটা অবশ্য আরও দৃষ্টিকটু। রোনালদো-বার্নাদেস্কির সমন্বয় থেকে বল পেয়েছিলেন সামি খেদিরা। গোল থেকে ৭ গজ দূর থেকে তিনিও বল মেরেছেন আকাশ পানে। কিছুক্ষণ পর অবশ্য মাতুইদি শটটা নিয়েছিলেন লক্ষ্যেই, কিন্তু গোলরক্ষক নেটো সে দফায় রুটিন সেভ করেই বিপদমুক্ত করেছেন ঘরের দলকে। শুরু দিকে সহজ সুযোগগুলো নষ্ট করার হতাশা জুভেন্টাসের আরও বাড়ে ২৯ মিনিটে।   ভ্যালেনসিয়া ডিফেন্ডার জেইসন মুরিলোর সঙ্গে ডিবক্সের ভেতর বল দখলের লড়াই চলছিল রোনালদোর। রোনালদো বলের দিকেই নজর দিয়েছিলেন, কিন্তু মুরিলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান তাতেই। মুরিলোর আচরণ পছন্দ হয়নি রোনালদোর, তার মাথায় হাত দিয়ে রাগ ঝেড়েছেন, তাতে মুরিলো চুলে হাত পড়েছে রোনালদোর। ঠিক কী করতে চেয়েছিলেন সেটা রোনালদোই ভালো জানেন। রেফারির চোখে ঘটনা এড়িয়ে গেলেও, গোললাইনে থাকা সহকারির সিদ্ধান্তে ওই কারণেই সরাসরি লাল কার্ড দেখতে হয় রোনালদোকে। রেফারির অমন সিদ্ধান্তে নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না রোনালদো! মাঠে বসেই পড়েছিলেন হতবাক হয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ভিএআর না থাকায় শেষরক্ষাও হয়নি রোনালদোর।



    ভাগ্য আর সব চেষ্টাই যখন বৃথা যাচ্ছিল জুভেন্টাসের, তখনই একটা লাইফলাইন পেয়ে যায় তারা। ৪৩ মিনিটে হোয়াও ক্যানসেলোকে ফাউল করে বসেন দানিয়েল পারেহো। ডিবক্সের ভেতর বল দখলে আনতে গিয়ে হাই বুটের খড়্গে পড়ে যান ভ্যালেনসিয়া অধিনায়ক। পেনাল্টি থেকে স্বস্তির গোলটা করেন পিয়ানিচ। দশ জনের দলে পরিণত হওয়ার পরও তাই এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে জুভেন্টাস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জুভেন্টাসের সেই কাজ আরও সহজ করেন মুরিলো। ভ্যালেনসিয়ার আরেক সেন্টাব্যাকও পেনাল্টি দিয়ে বসেন, এবার তিনি ফাউল করেন লিওনার্দো বনুচ্চিকে। এবারও পেনাল্টি নিতে এগিয়ে আসেন পিয়ানিচ। আগেরটা মেরেছেন নিচু করে, এবারও সেই একই দিকে মারলেন, কিন্তু উঠিয়ে। ফলাফল একই, ৫১ মিনিটেই দুই গোলে এগিয়ে তুরিনের ওল্ড লেডিরা জয়ের পথে এগিয়ে যায় অনেকটুকুই।

    জুভেন্টাসের জয় নিয়ে তখনও সংশয় ছিল দলে একজন কম থাকায়। কিন্তু ভ্যালেনসিয়া সেদিক থেকেই স্বস্তিতেই রেখেছে জুভেন্টাসকে। রদ্রিগো, বাতসুয়াইরা সুবিধা করতে পারেননি। পরে কেভিন গ্যামেইরো, ডেনিস চেরিশেভ নেমেও হাল ধরতে পারেননি দলের। একমাত্র কার্লোস সোলার বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন, তাও ডিবক্সের বাইরে থেকে করা তার সবগুলো চেষ্টাই গেছে বৃথা। ৬৫ মিনিটে একবার শুধু একটা সেভ করে তাকে ফেরাতে হয়েছে সেজনিকে। ৮০ আর ৯৩ মিনিটে রদ্রিগোও দুইবার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। সবমিলিয়ে ভ্যালেনসিয়া ছিল একেবারেই সাদামাটা। শেষদিকে একটা পেনাল্টি পেয়ে সেটাও কাজে লাগাতে পারেনি তারা। অবশ্য সেখানেও রেফারির সিদ্ধান্ত পক্ষে পেয়েছিল ভ্যালেনসিয়া। ডানিয়েল রুগানির বিরুদ্ধে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি, তবে পারেহোর নেওয়া শটটা যেন হয়ে থেকেছে পুরো ম্যাচে ভ্যালেনসিয়ার পারফরম্যান্সের প্রতিচ্ছবি। মৌসুমের প্রথম জয়টা পেতে তাই ভ্যালেনসিয়ার হাহাকারের বেড়েছে আরও।

    চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ 'এইচ' এর অন্য ম্যাচে ইয়াং বয়েজকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। পল পগবা করেছেন জোড়া গোল, আরেকটা অ্যান্থনি মার্শিয়ালের।