• এশিয়া কাপ ২০১৮
  • " />

     

    ভারতের সঙ্গে 'টাই'-রোমাঞ্চে আফগান নায়ক রশীদ

    ভারতের সঙ্গে 'টাই'-রোমাঞ্চে আফগান নায়ক রশীদ    

    আফগানিস্তান ২৫২/৮, ৫০ ওভার (শাহজাদ ১২৪, নবী ৬৪, জাদেজা ৩/৪৬)
    ভারত ২৫২ অল-আউট, ৫০ ওভার (রাহুল ৬০, রাইডু ৫৭, নবী ২/৪০) 
    ম্যাচ টাই 


    ডিপে ওই একটিই ফিল্ডার, ডিপ-মিডউইকেটে। ভারতের বাকি এক উইকেট, প্রয়োজন ১ রান। স্কোর সমান। স্ট্রাইকে রবীন্দ্র জাদেজা, ভারত যাকে স্ট্রাইকে চাইছিল। বোলিংয়ে রশীদ খান, আফগানিস্তান যার হাতে বোলিং দিতে পেরে স্বস্তিতে ছিল একটু হলেও। রশীদের লং-হপটা টেনে মারলেন জাদেজা, ডিপ-মিডউইকেট থেকে ডানদিকে দৌড়ে গিয়ে ধরলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। আফগানরা মাতলো উল্লাসে, যেন জিতে গেছেন তারা। ভারত-শিবিরে রাজ্যের স্তব্ধতা, জাদেজার চোখ-মুখে অন্ধকার, যেন হেরে গেছেন তারা! আদতে কেউ হারেনি, কেউ জেতেনি, ম্যাচ হয়েছে টাই। টানা তৃতীয় ম্যাচে আফগানদের ভাগ্য নেমে এসেছিল শেষ ওভারে, আগের দুইবার হারলেও এবার আর হারলো না তারা! না জিতেও যেন জিতেই গেল বরং। শেষ ওভারে ৭ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের, দ্বিতীয় বলে চার মেরেও ভারতকে পার করাতে পারেননি জাদেজা। 

    অথচ এই ম্যাচটা ছিল ডেড-রাবার। ভারতের ফাইনাল, আফগানিস্তানের টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়- নিশ্চিত হয়েছে দুইটিই। এ ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হলো অধিনায়ক রোহিত শর্মাসহ পাঁচজনকে, ২০০তম বার ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করতে নামলেন এমএস ধোনি। ডেড-রাবারে প্রথমে রোমাঞ্চ ফেরালেন মোহাম্মদ শাহজাদ। আফগানিস্তানের রান যখন ১৩১, শাহজাদের তখন হয়ে গেল রেকর্ড সেঞ্চুরি। ৮২ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল আফগানিস্তান। তবে শাহজাদ ছাড়া আউট হওয়া চার ব্যাটসম্যানের স্কোরকার্ড পড়ছিল এমন- আহমাদি ৫, রহমত ৩, হাসমতউল্লাহ ০, আসগর ০! আফগানিস্তানের প্রথম ১০০ রানের ৮৬ রানই ছিল শাহজাদের!

     

     

    দীপক চাহারকে ফ্লিক করে চার মেরে ক্যারিয়ারে পঞ্চম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন শাহজাদ। তাকে বেশ কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়েছেন গুলবাদিন নাঈব, তিনি ফিরেছেন ১৫ রানে। শাহজাদের ১১৬ বলে ১২৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস শেষ হয়েছে কেদার যাদবকে তুলে মারতে গিয়ে, দীনেশ কার্তিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তার আগেই ১১ চারের সঙ্গে ৭টি ছয় মেরেছেন শাহজাদ, দিয়েছেন পূর্ণ বিনোদন! 

    আফগানিস্তানকে এরপর টেনেছেন মোহাম্মদ নবী। শেষ তিন ওভারে সিদ্ধার্থ কৌল ও খলিল আহমেদ মিলে ৯ রান দিয়ে আফগানিস্তানকে টেনে ধরার আভাস দিয়েছেন, তবে আফগানিস্তান ২৫০ পেরিয়েছে ঠিকই। ৫৬ বলে ২ চারে ৬৪ রান করেছেন নবী। ৪৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দিনের ভারতের সেরা বোলার জাদেজা। তখন কে জানতো, এই ম্যাচেই শেষ দৃশ্যেও ভারতের ভার থাকবে ওই জাদেজার ওপরই! 

    রোহিত শর্মা বা শিখর ধাওয়ান নেই, ওপেনিংয়ে এলেন লোকেশ রাহুল ও আম্বাতি রাইডু। দুজন মিলে যেন রোহিত-ধাওয়ানের সংস্কৃতিই ধারণ করলেন, পেরিয়ে গেলেন সেঞ্চুরি জুটি। প্রথমে ৫৭ রান করা রাইডুকে ক্যাচ বানিয়ে আফগানিস্তানকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দিলেন নবী। রাহুল রশীদের বলে এলবিডব্লিউ হলেন ৬০ রানে। রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে সেটা নষ্টই হয়েছে শুধু। যেটা ভুগিয়েছে ভারতকে পরে। 

     

     

    আবারও চারে উঠে আসা ধোনি রিভিউ থাকলে বাঁচতে পারতেন এলবিডব্লিউ থেকে। তবে ধোনির পর মনিশ পান্ডে বা কেদার যাদবের উইকেটের পরও ভারত ছিল ঠিক পথেই, আফগানিস্তান ছিল দিশেহারা। তাদেরকে আবার পথ দেখালেন নবী, ৪৪ রান করে তার বলে এলবিডব্লিউ এবার দীনেশ কার্তিক। 

    শেষ ১২ বলে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান, বাকি ছিল ৩ উইকেট। তবে ৪৯তম ওভারে দুই রান-আউটে খাদের কিনারে চলে গেল ভারত। প্রথম ট্রিপল নিতে গিয়ে ডিপ এক্সট্রা কাভার থেকে গুলবাদিনের দারুণ ফিল্ডিংয়ে আউট কুলদীপ, এরপর সিঙ্গেল নিতে গিয়ে মিড-অন থেকে হাসমতউল্লাহর সরাসরি থ্রো-তে গেলেন সিদ্ধার্থ কৌল। শেষ বলেও সিঙ্গেল নিয়ে অবশ্য ভারতকে অনেকখানি আশা দিলেন জাদেজা, ৩০ বলে ২০ রানে অপরাজিত তিনি, বাউন্ডারি মারেননি একটিও। আর রশিদের সামনে রইল ৭ রান। 

    প্রথম বলে জাদেজা সিঙ্গেল নিতে পারতেন, নিলেন না নিজে শেষ করবেন বলে। সেই না নেওয়া সিঙ্গেল পার্থক্য গড়ে দিল! দ্বিতীয় বলে ঠিকই টেনে মারলেন, তবে চার-ছয় ঠিক করতে দ্বারস্থ হতে হলো টেলিভিশন আম্পায়ারের। তিনি দিলেন চার, ছয় দিলে ভারত টাই করে ফেলে তখনোই! এখানে দুই রানের ব্যবধান মিলিমিটার! জাদেজা পরের বলে সিঙ্গেল নিলেন, তার পরের বলে তাকে স্ট্রাইক ফেরত দিলেন খলিল আহমেদ। 

    সব নেমে এলো ওই শেষ বলে। 

    এর আগে শেষ ওভারে ১০ রান নিয়েও পাকিস্তানকে আটকাতে পারেনি আফগানিস্তান, বাংলাদেশের সঙ্গে শেষ ওভারে নিতে পারেনি ৮ রান। 

    এবার রশিদ আটকে দিলেন জাদেজাকে। এবার আর হারলো না আফগানিস্তান! 

    আর দুবাইয়ে ডেড-রাবার হয়ে উঠলো এক রোমাঞ্চ।