• অস্ট্রেলিয়ার আরব আমিরাত সফর
  • " />

     

    খাওয়াজা-পেইনে অস্ট্রেলিয়ার 'গ্রেট এসকেপ'

    খাওয়াজা-পেইনে অস্ট্রেলিয়ার 'গ্রেট এসকেপ'    

    দুবাই টেস্ট
    টস- পাকিস্তান (ব্যাটিং) 
    পাকিস্তান ১ম ইনিংস ৪৮২ (হাফিজ ১২৬, হারিস ১১০, শফিক ৮০, সিডল ৩/৫৬, লায়ন ২/১১৪) ও ২য় ইনিংস ১৮১/৬ ডিক্লে. (ইমাম ৪৮, শফিক ৪১, হল্যান্ড ৩/৮৩) 
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ২০২ (খাওয়াজা ৮৫, ফিঞ্চ ৬২, বিলাল ৬/৩৬, আব্বাস ৪/২৯) ও ২য় ইনিংস ৩৬২/৮ (খাওয়াজা ১৪১, পেইন ৬১*, ফিঞ্চ ৪৯, ইয়াসির ৪/১১৪)
    ম্যাচ ড্র 


    এই ধরনের ম্যাচগুলোই যেন ঠাঁই নেয় টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য বুঝাতে ব্যবহার করা তালিকায়। 

    কেপটাউন ডামাডোলের পর নতুন অস্ট্রেলিয়া, তাদের নতুন অধিনায়ক, তাদের নতুন ওপেনিং জুটি। একসঙ্গে অভিষেক তিনজনের। প্রথম ইনিংসে ফুটে উঠলো শুধু দুর্দশাই। সেই অস্ট্রেলিয়া ফিরে এলো, যেন মনে করিয়ে দিল একসময়ের প্রচলিত কথাটা, অস্ট্রেলিয়া হারার আগে হারে না! দুবাই টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ছিল মহাসাগর। চতুর্থ দিন সেটার খানিকটা পাড়ি দিল তারা, তবে বাকি ছিল আরও দীর্ঘ পথ। সেই পথটা অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দিল উসমান খাওয়াজা ও তাদের অধিনায়ক টিম পেইনের ব্যাটিংয়ে। দুজন মিলে নিশ্চিত করেছেন- রোমাঞ্চকর টেস্টে হারছে না অস্ট্রেলিয়া! ছয় বলের ওভার চালু হওয়ার পর থেকে এতো দীর্ঘ ইনিংস খেলে এর আগে কখনোই ড্র করেনি তারা। 

    আগেরদিন ৮৭ রানে দাঁড়িয়ে ৩ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার এদিন ম্যাচ বাঁচাতে ব্যাটিং করতে হতো পুরোটা দিন। প্রথম ইনিংসেই খাওয়াজা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এমন কন্ডিশনে এবার নিজেকে অন্যভাবে প্রস্তুত করে এনেছেন তিনি। আজ সেটাই দেখালেন আরেকবার। শুরুতে তাকে সঙ্গ দিলেন অভিষিক্ত ট্রাভিস হেড। প্রথম সেশন তারা কাটিয়ে দিলেন, অবিচ্ছিন্ন থেকেই। তবে পাকিস্তানের নিশ্চয়ই আশা ছিল, আগের ইনিংসেই তো তারা অস্ট্রেলিয়াকে ১৪২/০ থেকে বানিয়ে দিয়েছিল ২০২ অল-আউটে! 

    ব্রেকথ্রুটা দিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। নতুন বলে এলবিডব্লিউ হেড, ৭২ রান করে। দারুণ পরিকল্পনায় মারনাস ল্যাবুশেনকে এলবিডব্লিউ করলেন ইয়াসির, যিনি পরে পাকিস্তানকে দিয়েছিলেন আরও আশা। 

    খাওয়াজার লড়াই এরপর পেইনকে নিয়ে। দুজন মিলে খেললেন ৩৬.২ ওভার। খাওয়াজার রান-আউটের সুযোগ মিস করলো পাকিস্তান, তবে আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত রাখতেও যেন একটু সময় নিলেন সরফরাজ। খাওয়াজা-পেইন করলেন দারুণ ব্যাটিং। 

    খাওয়াজা সেঞ্চুরি করলেন, ক্যারিয়ারের সপ্তম। সঙ্গে আরব আমিরাতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ইনিংসটাও খেললেন, ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানো ইউনুস খানের ইনিংস ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। ৩০০ বল খেলে ফেললেন, তবে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন যেন খানিকটা। 

    ইয়াসির শাহকে রিভার্স সুইপের ব্যর্থ চেষ্টার পর আবার সুইপ করতে গিয়ে মিস করে হলেন এলবিডব্লিউ। পাকিস্তান পেল ব্রেকথ্রু, মিচেল স্টার্ক ইয়াসিরকে উইকেট দিলেন বাবর আজমের দারুণ ক্যাচ বনে। পিটার সিডলও এলবিডব্লিউ, দিনের খেলার তখনও বাকি ১৩ ওভার। 

    তবে পেইন ছিলেন অন্যরকম। পেইন হার মানলেন না। সঙ্গী হিসেবে পেলেন ন্যাথান লায়নকে। টেলিভিশন ক্যামেরায় শেষ ব্যাটসম্যান জন হল্যান্ডের মুখচ্ছবি বলে দিচ্ছিল, স্নায়ুচাপ আক্রমণ করা তাকে শুরু করেছে তখন থেকেই। 
    পেইন-লায়ন হল্যান্ডকে মুক্তি দিলেন। শেষ ওভারে এসে ইয়াসির শাহ টলাতে পারলেন না টিম পেইনকে। শেষ ওভারের শেষ বলটা করলেনও না আর। 

    টেস্ট ততক্ষণে তো শেষই হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে মুক্তি। অস্ট্রেলিয়া করেছে ড্র। অস্ট্রেলিয়া হারার আগে হারেনি।

    আর এই ম্যাচ ঢুকে গেছে টেস্ট ক্রিকেটের ওই তালিকায়!