• অস্ট্রেলিয়ার আরব আমিরাত সফর
  • " />

     

    আবুধাবিতে ঘটনাবহুল দিন

    আবুধাবিতে ঘটনাবহুল দিন    

    আবুধাবি টেস্ট
    টস- পাকিস্তান (ব্যাটিং) 
    পাকিস্তান ১ম ইনিংস ২৮২ (ফাখার ৯৪, আজহার ৯৪, লায়ন ৪/৭৮, ল্যাবুশেন ৩/৪৫) 
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস* ২০/২ (ফিঞ্চ ১৩*, আব্বাস ২/৯)
    ১ম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেট নিয়ে ২৬২ রানে পিছিয়ে 



    আবুধাবিতে টেস্ট ক্রিকেট দেখেছে আরেকটি ঘটনাবহুল দিন। প্রথমে অফস্পিনারের জাদু, ছয় বলে চার উইকেট। এরপর এক অভিষিক্ত ও একজন অধিনায়কের ঘুরে দাঁড়ানো। পার্টটাইমারের হাত ধরে আবার রংবদল ম্যাচের। আর সবশেষে অন্যরকম এক পেসারের আরও কিছুর ইঙ্গিত, সঙ্গে দুই উইকেট। প্রথম দিনে আবুধাবিতে ১২ উইকেট পড়েনি এর আগে কখনোই। অস্ট্রেলিয়া ২৬২ রানে পিছিয়ে, ৮ উইকেট বাকি। তবে শেষ দুই উইকেটই ঝাঁকি দিয়েছে তাদের, দ্বিতীয় দিন সকালে প্রথম চ্যালেঞ্জ সেই ঝাঁকুনিটা সামলানোই। 

    মিচেল স্টার্ককে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট লেগে মারনাস ল্যাবুশেনের অদ্ভুত দক্ষতায় ক্যাচে পরিণত হওয়া মোহাম্মদ হাফিজের দ্রুত উইকেটের চাপ সামাল দিচ্ছিল পাকিস্তান। আজহার আলি ভুলটা করলেন এরপরই। ন্যাথান লায়নকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে শেষ মুহুর্তে শর্ট চেক করে দিলেন ফিরতি ক্যাচ। পাকিস্তানের উইকেটের বাঁধ ভেঙে গেল তাতেই। ছয় বলের ক্ল্যাসিক অফস্পিনে লায়ন ফেরালেন চারজন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানকে। ৫৭ রানে ১ উইকেট থেকে পাকিস্তান পরিণত হলো ৫৭ রানে ৫ উইকেটে! 

    সিলি পয়েন্টে হেডের দারুণ ক্যাচে প্রথম বলেই নেই হারিস সোহেল, লায়ন দাঁড়িয়ে গেলেন হ্যাটট্রিকের সামনে। আসাদ শফিক পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে ইনসাইড-এজ হয়ে আবার ল্যাবুশেনকে ক্যাচ দিলেন, উইকেটটা রিভিউ নিয়ে পেল অস্ট্রেলিয়া। বাবর আজম চাপ কমাতে প্রতি-আক্রমণের রাস্তা বেছে নিলেন, তবে শীঘ্রই বুঝলেন, সেটা সম্ভব নয়। উইকেট ছেড়ে বেড়িয়ে এসে লায়নের অফস্পিনের নাগালই পাননি, হয়েছেন বোল্ড। 

    একদিকে যখন যাওয়া-আসার দ্রুতগামির খেলায় মত্ত পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা, অন্যপাশ থেকে দেখছিলেন ফাখার জামান। পাকিস্তানের ওয়ানডে তারকা টেস্ট ক্যাপটা পাচ্ছেন এদিন, আগে থেকেই মোটামুটি ঠিক হয়ে ছিল সেটা ইমাম-উল-হকের চোটে। লাঞ্চে পাকিস্তান গেল ৫ উইকেটে ৭২ রানে, ফাখারের রান ছিল ৪৯। 

    অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে নিয়ে এরপর ইনিংস পুনর্গঠনের কাজটা দারুণভাবে করলেন তিনি। ড্রাইভ করেছেন, কাট করেছেন, ফাখার খেলেছেন তার সীমিত ওভারের ব্যাটিংয়েরই লাল বলের সংস্করণটা। আর সফররাজ আধিপত্য বিস্তার করেছেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিনে, স্ট্রাইক বদল করে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন তাদের। 

    দুজনের ১৪৭ রানের জুটি চাপ ফিরিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। সে জুটি ভাঙতে প্রয়োজন হলো লেগস্পিন, ফিল্ডিংয়ে দারুণ দিন কাটানো ল্যাবুশেন হাজির হলেন অস্ট্রেলিয়ার ত্রাতা হিসেবে। সামান্য টার্ন করা ডেলিভারি মিস করে এলবিডব্লিউ হলেন ফাখার, নিজের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে দাঁড়িয়ে। শর্ট বলে হাতে আঘাত পাওয়া সরফরাজও এলোমেলো হয়ে পড়লেন, ল্যাবুশেনকে তুলে মারতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণহীন শর্ট বলে কাভারে সিডলের একাধিক চেষ্টায় নেওয়া ক্যাচ বনেছেন তিনি, ফাখারের মতোই ৯৪ রানে। 

    এ দুজনের মাঝে বড়সড় এজড হয়েছেন বিলাল আসিফ। পাকিস্তান ব্যাটিং-লেজের শেষ দুজনকে অস্ট্রেলিয়ান দুই পেসার দিয়েছেন টেইল-এন্ডারদের মোক্ষম ব্যবস্থাপত্র। ফুললেংথ, স্ট্রেইট ডেলিভারিতে বোল্ড ইয়াসির শাহ ও মোহাম্মদ আব্বাস। 

    অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারদের সামনে ছিল ৭ ওভার কাটানোর চ্যালেঞ্জ। আর সরফরাজ ছিলেন উইকেটের আশায়। পাকিস্তানের পেস-ভরসা হয়ে ওঠা আব্বাসকে দিয়ে বোলিং করিয়ে নিয়েছেন, ফলটাও মিলেছে। লেগসাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া লেংথ বলে ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার নায়ক উসমান খাওয়াজা। নাইটওয়াচম্যান পিটার সিডল টিকেছেন ১০ বল। আব্বাসের অফসাইডের বাইরের বলটা এভাবে ভেতরে ঢুকবে, ভাবতে পারেননি সেটাই। নিজের ১০ম টেস্টে ৫০ উইকেট পূরণ হলো আব্বাসের, ইয়াসির শাহর পর দ্বিতীয় দ্রুততম পাকিস্তান বোলার হিসেবে।