• লা লিগা
  • " />

     

    পেরেজ যখন 'কোচখেকো'

    পেরেজ যখন 'কোচখেকো'    

    একবার মানুষের মাংসের স্বাদ পেলে নাকি বাঘ-সিংহের মুখে আর কিছু রোচেনা। ‘মানুষখেকো’ প্রাণী নিয়ে সেই এলাকার জনমনে সর্বদাই কাজ করে ভয়, কখন না জানি আবার থাবা বসিয়ে দেয় প্রাণীটি। ‘মানুষখেকো’ সেই প্রাণীর মতো হয়ত ‘নেশা’ পেয়ে বসেছে রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্টিনো পেরেজকেও। তিনি অবশ্য ‘থাবা’ বসান কোচদের চাকরির ওপর! পেরেজের দুই দফায় ক্লাব প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের সময় কোচ বদলের হিড়িক দেখেছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। দুইদিন আগে হুলেন লোপেতেগির বরখাস্ত হওয়ার মাধ্যমে ১৬ বছরে ১৫ জন কোচ বিদায় বললেন পেরেজের রিয়ালকে!

    ২০০০ সাল, রিয়াল প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলেন পেরেজ। অল্প কয়েদিনের মাঝেই চমক দেখিয়ে জিনেদিন জিদান, রোনালদো, ডেভিড বেকহাম, মাইকেল ওয়েনদের কিনে গড়লেন ‘গ্যালাকটিকোস’। কোচ ডেল বক্সের অধীনের একের পর এক সাফল্যও আসতে থাকল। ২০০৩ সালে ডেল বক্স রিয়ালকে জেতালেন রেকর্ড ২৯তম লা লিগা শিরোপা। তার ঠিক একদিন পরেই পেরেজ ঘোষণা দিলেন, ডেল বক্সের সাথে চুক্তি নবায়ন করবে না রিয়াল! কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই রিয়ালকে বিদায় বললেন ডেল বক্স।

    ****

    সেই শুরু। কোচদের বরখাস্ত করা যেন অভ্যাসে পরিণত হলো পেরেজের। ডেল বক্সের পর আসলেন কার্লোস কুইরোজ, টিকলেন ৩৩৪ দিন। ওই মৌসুমে শুধু সুপারকোপা জেতায় বরখাস্ত হলেন কুইরোজ। কুইরোজের বিদায়ের পর আসলেন হোসে আন্তনিও ক্যামাচো। তিনি রিয়াল ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন মাত্র ১১৭ দিন ও ৬ ম্যাচের জন্য। নিজের ইচ্ছাতেই অবশ্য ক্লাব ছাড়েন ক্যামাচো।

    ক্যামাচো চলে গেলে দায়িত্ব দেওয়া হয় মারিয়ানো গার্সিয়া রেমনকে। তার চাকরির স্থায়িত্ব ছিল ১০১ দিন ও ২০ ম্যাচের জন্য। ক্যামাচোয়ের মতো চাকরি ছেড়েছিলেন তিনিও। রেমনের পর আসেন ভ্যান্ডেরলেই লুক্সেমবার্গো। মাত্র চার মাসের মাথায় তাকেও বরখাস্ত করেন পেরেজ।

     

    লুক্সেমবার্গোর পর এলেন রামন লোপেজ কারো, ২৪ ম্যাচ পরেই হলেন বরখাস্ত। ফ্যাবিও ক্যাপেলো এসে যখন চার বছর পর রিয়ালকে আবার লা লিগা শিরোপা জেতান, অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার বোধহয় অনেকদিন টিকবেন তিনি। তবে এই আশায় গুড়েবালি, চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ায় চাকরি হারালেন ক্যাপেলোও। ক্যাপেলোর পর দায়িত্ব নেওয়া বার্নড সুস্টারও রিয়ালকে পরের মৌসুমে জেতান লা লিগা। কিন্তু তিনিও চাকরি হারান চ্যাম্পিয়নস লিগ না জেতাতে পেরে। সুস্টার ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন ৭৫ ম্যাচের জন্য। সুস্টারের পর কোচ হয়েছিলেন হুয়ান্দে রামোস। ২৭ ম্যাচে দায়িত্ব পালন করার পর তার সাথে চুক্তি নবায়ন করেননি পেরেজ। এরপর ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনিও ৪৮ ম্যাচ পর বরখাস্ত হন।

    *****

    পেলেগ্রিনির পর আসলেন হোসে মরিনহো। ১৭৮ ম্যাচ ডাগআউটে দাড়িয়ে স্পেশাল ওয়ান দলকে জেতালেন একটি লা লিগা, কোপা ডেল রে ও সুপারকোপা। সময়টা আহামরি ভালো না গেলেও খুব একটা খারাপও যাচ্ছিল না। প্রাথমিক চুক্তি শেষ হওয়ার পর রিয়াল তার সাথে চুক্তিটা বাড়িয়েছিল ২০১৭ সাল পর্যন্ত। তবে রিয়ালকে বিদায় বলতে হয় ২০১৩তেই। পেরেজ জানান, দুই পক্ষের সম্মতিতেই ক্লাব ছাড়ছেন মরিনহো।

     

     

    মরিনহোর পর কার্লো আনচেলত্তি এসে সাফল্য পাচ্ছিলেন নিয়মিতই। তার অধীনে চ্যাম্পিয়নস লিগও জেতে রিয়াল। তবে ১১৯ ম্যাচ পরেই পেরেজের সেই চিরচেনা রূপ দেখেন আনচেলত্তি, বরখাস্ত করা হয় তাকেও। এরপর রাফায়েল বেনিতেজ দায়িত্বে ছিলেন মাত্র ২৫ ম্যাচের জন্য, বরখাস্ত হন মৌসুমের মাঝপথেই।

    রিয়ালের বেহাল দশায় আবির্ভাব হয় জিদানের। দায়িত্ব নিয়েই বদলে দেন রিয়ালকে। দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিনের মাঝেই দলকে জেতান চ্যাম্পিয়নস লিগ। এরপর দুই বছরের রিয়াল জিতেছে রেকর্ড হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, জিতেছে লা লিগা, সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপও। রিয়ালে তখন ‘সুখের সংসার’। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পরপরই জিদান স্বেচ্ছায় বিদায় নিলেন। জিদান দায়িত্ব পালন করেছেন ৮৭৮ দিন।

     

     

    জিদানের বিদায়ের পর রিয়ালে আসেন হুলেন লোপেতেগি। বিশ্বকাপের ঠিক দুদিন আগে রিয়ালের কোচ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সাথে সাথেই স্পেনের কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হন। রিয়ালের দায়িত্ব নিয়ে শুরুটা ভালো হলেও খেই হারিয়ে ফেলে লোপেতেগির দল। মাত্র ১৪ ম্যাচ দায়িত্ব পালন করার পর তাকেও ছাঁটাই করেন পেরেজ।

    *****

    এই মৌসুমের শুরুতেই রিয়াল ছেড়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। জুভেন্টাসে পাড়ি দেওয়ার দুইমাস পর প্রকাশ্যেই বলেছেন, তার রিয়াল ছাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ছিলেন পেরেজই। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই পেরেজ বরখাস্ত করেছেন অনেক কোচকে। তার কারণে ক্লাব ছাড়লেন রোনালদোও। লিগের নবম অবস্থানে থাকা রিয়ালের সুদিন কবে ফিরবে, সেটা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

    লোপেতেগির পর দুই সপ্তাহের জন্য রিয়ালের কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন সান্তিয়াগো সোলারি। নতুন কোচ নিয়োগের ব্যাপারে আন্তোনিও কন্তের সাথে আলোচনা হলেও তার কিছু চাহিদার মুখে সেটাও পিছিয়ে গেছে। পেরেজ যেভাবে গত ১৬ বছরে কোচদের বরখাস্ত করেছেন, তাতে রিয়ালের কোচ কে হতে চাইবেন? ‘কোচখেকো’ প্রেসিডেন্টের ডেরায় কী কেউ সেধে আসতে চায়?