মুশফিকের রেকর্ড ডাবলে মিরপুরে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ
মিরপুর টেস্ট
দ্বিতীয় দিন, স্টাম্পস
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫২২/৭ ডিক্লে. (মুশফিক ২১৯*, মুমিনুল ১৬১, মিরাজ ৬৮*, জারভিস ৫/৭১)
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ২৫/১
২৬ রানে ৩ উইকেট। মিরপুর যেন মঞ্চস্থ করছিল সিলেটের বিভীষিকা। সেখান থেকে ৭ উইকেটে ৫২২ রানে ইনিংস ঘোষণা- সিলেট থেকে মিরপুরের এই কদিনের মাঝে বাংলাদেশ পেরুলো দীর্ঘ পথ। সিলেটের বিভীষিকাময় ব্যাটিং ভুলিয়ে দিতে প্রয়োজন ছিল এমন কিছু। যার নেতৃত্ব দিলেন মুশফিক, রেকর্ড ২১৯ রানে অপরাজিত থেকে। আগেরদিন মুমিনুলের সঙ্গে ২৬৬ রানের রেকর্ড জুটি যদি ভিত গড়ে দেয়, সেটার ওপর দাঁড়িয়ে মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে ৮ম উইকেটে ১৪৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দালান-কোঠা তুললেন মুশফিক। মাঝে ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব আল হাসানের সর্বোচ্চ স্কোর, প্রথম উইকেটকিপার হিসেবে করলেন দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি। আর বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন অনেক দূর। ১৮ ওভার খেলে ২৫ রান তুলে জিম্বাবুয়ে শুধু টিকে রইল, তবে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার উইকেট তারা হারিয়েছে ঠিকই। দ্বিতীয় দিনশেষে মিরপুরের পুরো নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে।
আগের দিন বড় ইনিংসে আলো কেড়েছিলেন মুমিনুল হক, সেঞ্চুরির পর আরও বড় কিছুর অপেক্ষায় ছিলেন মুশফিক। এদিন লাঞ্চের আগে তাকে হাতছানি দিচ্ছিল ড্যাডি সেঞ্চুরি, চা-বিরতির আগে ডাবল সেঞ্চুরি। সিকান্দার রাজার শর্ট বলে পুল করে সিঙ্গেল নিয়ে ডাবল পূরণ করেছেন মুশফিক, মেতেছেন উল্লাসে। এরপর ছাড়িয়ে গেছেন সাকিবকে, সময়ের হিসেবে দীর্ঘতম ইনিংসে ছাড়িয়ে গেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে (৫৩৫ মিনিট), বলের হিসেবে ছাড়িয়ে গেছেন মোহাম্মদ আশরাফুলকে (৪১৭ বল)। টেস্টে এ বছর এটিই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি যে কোনও ব্যাটসম্যানের।
প্রথম সেশনে ৩০ ওভারে ৬২ রান তুলেছিল বাংলাদেশ, মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে বেশ সতর্ক ছিলেন মুশফিক। বাংলাদেশ উইকেট হারায়নি, তবে জিম্বাবুয়ে হারিয়েছে তাদের পেসার টেনডাই চাতারাকে। দিনের দশম ওভারের তৃতীয় বল করার আগে পেয়েছেন চোট, স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়া এই পেসারের টেস্টই শেষ হয়ে গেছে।
মাহমুদউল্লাহ তুলনামূলকভাবে বেশি আগ্রাসী ছিলেন, আজ সকালে ৬২ রানের ৩৫ এসেছে তার ব্যাট থেকে। মুশফিক প্রথম এক ঘন্টায় মাত্র চার রান তুলেছিলেন, পরের ঘন্টায় একটু রান তোলার ব্যাপারে মনযোগী হয়েছেন। লাঞ্চের পরপরই ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ, কাইল জারভিস পেয়েছেন দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কার। বেরিয়ে যাওয়া বলে আলগা শট খেলে নিজের দায়টাও রেখেছেন অবশ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক। আরিফুল হকও টেকেননি বেশিক্ষণ, জারভিসের পঞ্চম শিকার তিনি বনেছেন পাঞ্চ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে। প্রথম দিনের মতো আরেকবার বাংলাদেশকে চেপে ধরার সুযোগ এসেছিল এরপর জিম্বাবুয়ের। তবে জারভিস একাই আর কিছু করতে পারলেন না। আর মুশফিক পেলেন মিরাজের সঙ্গ। দ্বিতীয় সেশনে উঠলো ১০৫ রান।
লাঞ্চের পর টপ-এজে চার মেরে ড্যাডি সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন মুশফিক, এর আগে-পরে সে অর্থে সুযোগই দেননি। মাঝে চড়াও হয়েছিলেন, ছয়ও মেরেছেন। মরিয়া জিম্বাবুয়ে দুইটি রিভিউ নিয়েছে দুই ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে, তবে কাজে আসেনি একটিও। ব্যাটিংটা উপভোগ করছিলেন মিরাজও। প্রথমে মনে হচ্ছিল, একটা ক্যামিওই খেলবেন শুধু, তবে নিজের ব্যাটিং ক্ষমতাটা আরেকবার দেখিয়ে দিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১০২ বলে ৬৮ রানে, ৫ চারের সঙ্গে মেরেছেন একটি ছয়ও। আর তিনি সাক্ষী ছিলেন মুশফিকের রেকর্ডের। উইলিয়ামসকে চার মারার পর সিঙ্গেল নিয়ে সে রেকর্ড গড়েছেন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহও ইনিংস ঘোষণা করেছেন এরপরই।
প্রায় দেড়শ ওভার ফিল্ডিংয়ের পর জিম্বাবুইয়ান ওপেনারদের লড়াইটা ছিল আরও কঠিন। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা প্রথমে বেঁচেছেন মোস্তাফিজের বলে এলবিডব্লিউয়ে নেওয়া বাংলাদেশের রিভিউ আম্পায়ারস কল হওয়ায়। এরপর খালেদ আহমেদের প্রথম উইকেট হতে পারতেন, স্লিপে আরিফুল হক ক্যাচ ছাড়ায় সেটা হয়নি। বাংলাদেশ ব্রেকথ্রু পেয়েছে তাইজুল ইসলামের হাত ধরে। অবশেষে স্লিপে ধরা পড়েছেন মাসাকাদজা।
তবে বাংলাদেশকে ধরতে জিম্বাবুয়েকে এখনও পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। সিলেট থেকে মিরপুরে বাংলাদেশ যে পথ পেরিয়ে এলো, বোধহয় তার চেয়েও লম্বা পথ!