'আমাদের চোখের পানি কেউ দেখে না'
আনন্দ, স্বস্তি- মিরপুর টেস্টের পর এরকম অনেক অনুভূতি মাহমুদউল্লাহর একসঙ্গে হতেই পারে। কিন্তু আনন্দের চেয়ে স্বস্তিটা বেশি- এই প্রশ্নে মাহমুদউল্লাহর কন্ঠে আরেকটি অনুভূতিরও অনুরণন। সেটির নাম সম্ভবত দেওয়া যেতে পারে অভিমান।
এমন একটা জয়ের পর অভিমান কেন, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। মাহমুদউল্লাহ সরাসরি কিছু বলেননি, তবে ইঙ্গিতটা সমালোচকদের দিকেই। সিলেট টেস্টে ১৫১ রানের অমন হারের পর অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে দাঁড়াতে হয়েছিল কাঠগড়ায়। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে কতটুকু সিরিয়াস, এমন প্রশ্নও উঠেছিল। এমন একটা জয়ের পর আনন্দের চেয়ে স্বস্তিটাই বেশি কি না, প্রশ্নে মাহমুদউল্লাহ তাই একটু খেদের সুরেই বললেন, 'যদি আপনি ম্যাচ জয় করেন তাহলে অবশ্যই আপনার আনন্দ লাগা উচিত। ম্যাচ জিতলে ওতটুকু অধিকার থাকে আনন্দ প্রকাশ করার। আমরা যখন খারাপ খেলি, ড্রেসিং রুমে মনটা আমাদেরই বেশি খারাপ হয়। আমাদের চোখের পানিটা কেউ দেখে না। আমরা এটা কাউকে বলিও না।'
মাহমুদউল্লাহর অভিমান কতটা, সেই প্রশ্ন অবশ্য হতেই পারে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে নিজেদের মাঠে অমন হারের পর সমালোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। মাহমুদউল্লাহ সিলেট টেস্টের পরেই বলেছিলেন, এমন চললে টেস্ট ক্রিকেট খেলার মানে নেই। এই টেস্টে অন্তত বাংলাদেশ টেস্ট মেজাজের পরিচয়টা দিল। মাহমুদউল্লাহ তাই বললেন, ওই ধাক্কাটাই তাদের আরও তাঁতিয়ে দিয়েছে, ‘সবাই চাচ্ছিল জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশ জিতুক। আমার মনে হয় জিম্বাবুয়েকেও ক্রেডিট দিতে হবে, ওরা ভাল ক্রিকেট খেলেছে। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগের ভাল করেছে। প্রথম টেস্টে কিছু ল্যাক অব ডিসিপ্লিন ছিল, যা টেস্ট ক্রিকেটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওই জিনিসটা আমরা করতে পারিনি, যা এই টেস্টে করতে পেরেছি। প্রথম টেস্ট শেষে একটা কথা বলেছিলাম, আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সবাই বেশ ডিটারমাইন্ড ছিলাম, প্রথম টেস্ট হারের পর আমরা খুব হার্ট হয়েছিলাম, আমরা চেয়েছিলাম তাঁর বহিঃপ্রকাশ মাঠে দেখাতে। আমার মনে হয় আমরা কিছুটা হলেও করতে পেরেছি।’
মিরপুরে সিলেটের ভুলের অনেক কিছুই শুধরে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। তারপরও কিছু উন্নতির সুযোগ তো আছেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজের আগেই সেসব শুধরে নিতে চান মাহমুদউল্লাহ, ‘ক্রিকেট খেলাটাই এমন, আপনি যদি একশো করেন কিংবা দুইশো পঞ্চাশ করেন তারপরও ব্যক্তিগত ভাবে মনে হবে আমার এই জায়গাতে কাজ করা দরকার। কারো যদি সুইং, স্পিন কিংবা সুইপ শটে দূর্বলতা থাকে সেখানে উন্নতি করার সুযোগ থাকে। এই ম্যাচটা জিতে যেহেতু আমার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে নামবো, এর জন্য এটা ভালো একটা ক্যামব্যাক। ব্যাটসম্যানদের জন্য ভালো হয়েছে, অনেকেই ভালো করেছে। সবাই একসঙ্গে ভালো করবে না। কখনো টপ-অর্ডার রান করবে, কখনো মিডল অর্ডার রান করবে। যার যার পজিশন থেকে সবাই চেষ্টা করছে। সবাই ট্রেনিং সেশনগুলোতে চেষ্টা করছে। কারণ আমাদের ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিল। এই ম্যাচে রান করাতে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস আরও ভালো হবে। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও কাজে দেবে।’