আস্তানার রূপকথা
বিশ্বকাপের পর ফুটবলের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট কোনটি?
যেকোন ফুটবলপ্রেমীর সরল জবাব-চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ইউরোপ সেরাদের এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে সারা বিশ্বেই ফুটবলপ্রেমীরা ডুবে থাকেন অন্যরকম উন্মাদনায়। এখানে দেখা মিলে ফুটবল বিশ্বের সব বড় বড় তারকাদের। আজ রাতে ফুটবলপ্রেমীদের মনে সেই উন্মাদনা জাগাতেই আবারো শুরু হতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।
প্রথম দিনেই শাখতার দনেৎস্কের বিপক্ষে খেলতে নামছে সর্বাধিক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা রিয়াল মাদ্রিদ। তবে সবচেয়ে জমজমাট লড়াইটি হবে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে। ম্যানসিটি বনাম জুভেন্টাস। অন্যদিকে পিএসভি’র বিপক্ষে ইউরোপমঞ্চে প্রত্যাবর্তন করছে ম্যানচেস্টারের আরেক জায়ান্ট ম্যান ইউনাইটেড। ইউরোপের সেরা এই ক্লাবগুলোর হয়ে খেলতে নামা রোনালদো, তোরেস কিংবা ইব্রাহিমোভিচের উপর সবার নজর থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যারা সবসময় ফুটবলের খোজখবর রাখে তাদের অনেকেই আজ চোখ রাখবেন অচেনা ‘আস্তানা এফসি’র উপরও!
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম ‘চমক’ কাজাখ ক্লাব আস্তানা এফসি’র উদয় হয়েছে ঠিক যেন ‘ফিনিক্স পাখির’ মতই। আজকের প্রতিপক্ষ বেনফিকা যখন ‘৬২ তে ২য় বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি জেতে তখন কাজাখাস্তানের রাজধানী আস্তানা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি ঘাঁটি। যেখানে ফুটবল ক্লাবের কথা কল্পনাও করা হত না। তবে পাঁচ দশক পরে সেখানে এখন চলছে ফুটবলের জয়রথ! সেই আস্তানার ক্লাবই আজ মুখোমুখি হবে পর্তুগিজ জায়ান্টদের বিপক্ষে।
আস্তানা এফসি’র বয়স মাত্র ৬! কাজাখাস্তানের রাজধানীতে অবস্থিত ক্লাবটি গড়ে তোলা হয়েছে দেশটির পুরনো রাজধানীর দুটি ক্লাব মিলিয়ে। এবং ক্লাবটিকে স্পন্সর করেছিল দেশটির রেলওয়ে সংস্থা। রাজধানী হতে ১২০০ কিলোমিটার দূরের এফসি আলমা আতা ও এফসি মেগাস্পোর্টকে এক করে ২০০৮-০৯ মৌসুমে কাজাখ লিগে যাত্রা শুরু করা দলটির প্রথমদিকে নাম ছিল ‘আস্তানা লোকোমটিভ’। মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে যাওয়া এই ক্লাবটির আসল মালিক কাজাখাস্তানের সার্বভৌম সম্পদের ফান্ড ‘সামরুক কাজিইনা’।
২০০৮-০৯ এ ২য় স্থানে থেকেই ক্লাবটি শেষ করে তাঁদের অভিষেক লিগ। এরপর ২০১০ ও ২০১২ তে কাজাখ কাপ জিতে আস্তানার এই ক্লাব। তবে লাইসেন্স জটিলতার কারণে তখনো তাঁদের ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা হয় নি। তবে এর মধ্যেই আস্তানা এফসি হিসেবে দলটি গড়ে তুলে তাঁদের নতুন পরিচয়। অবশেষে ২০১৩-১৪ মৌসুমে ইউরোপা কাপে সুযোগ পেলেও বুলগেরিয়ান ক্লাব বটেভ প্লভদিভের কাছে ৬-০ ব্যবধানে হেরে তাঁরা বিদায় নিয়েছিল বাছাই পর্বেই। তবে গত মৌসুমে আস্তানা এফসি সুইডিশ ক্লাব এআইকে, ইসরায়েলী হ্যাপয়েল তেল ও আর্মেনিয়ান ক্লাব পিউনিককে হারিয়ে ইউরোপা লিগে ভিলারিয়ালের বিপক্ষে প্লে অফ খেলার সুযোগ পেয়েছে।
আস্তানা এফসি তাঁদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপপর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে সাইপ্রাস ক্লাব এপয়েল ও স্লোভেনিয়ান এনকে মারিবরকে হারিয়ে। বর্তমানে তাঁদের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন স্তানিমির স্টোইলোভ। তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপপর্বে খেলা বুলগেরিয়ার প্রথমক্লাব বটেভেরও কোচ ছিলেন। গ্রুপ পর্বে আস্তানা বেনফিকা ছাড়াও গালাতাসারে ও অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলবে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসের ক্লাবগুলোর মধ্যে সবথেকে পূর্বে অবস্থান আস্তানার। ছয় বছরেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সুযোগ পাওয়া এই দলটির আকাশে এখন উঁকি দিচ্ছে ভোরের সুর্য! মাত্র ত্রিশ হাজার আসনের স্টেডিয়ামে হয়ত তিল পরিমাণ জায়গাও খালি থাকবে না বেনফিকা-গালাতাসারে-অ্যাথলেটিকোর তারকাদের দেখার জন্য। তবে এটা অনুমান করা যায়, পৃথিবীর ২য় শীতলতম রাজধানী আস্তানার দর্শকরা তাঁদের মোটেই ‘উষ্ণ’ অভ্যর্থনা জানাতে নয় বরং বিশ্বকে ‘চমক’ দেখাতেই অপেক্ষা করছে!