• বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে
  • " />

     

    রাহীদের উপেক্ষা এবং 'টিম কম্বিনেশনের' ঢাল

    রাহীদের উপেক্ষা এবং 'টিম কম্বিনেশনের' ঢাল    

    ‘টিম কম্বিনেশন’ শব্দটা বাংলাদেশের পেসারদের জন্য এখন শরীর ধেয়ে আসা বিমারের মতোই হয়ে গেছে!

    এমনিতে বাংলাদেশে খেলা হলে পেসাররা সবসময়ই বিমাতার আচরণ পেয়ে আসছেন। ওয়ানডেতে তিন পেসার নিয়ে খেলে নিয়মিত, টেস্টে সেখানে দুই পেসার খেলানোটাই চরম বিলাসিতা। এই তো সিলেটে প্রথম টেস্টের স্কোয়াডে ছিলেন চারজন পেসার। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, একাদশে এক আবু জায়েদ রাহী ছাড়া আর কোনো পেসার নেই। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এরপর বিস্তর সমালোচনা, সিলেট টেস্টের মধ্যেই কোচ স্টিভ রোডস স্বীকার করলেন, একাদশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। মিরপুরে আবারও দুই পেসার নিয়ে খেলল বাংলাদেশ, কিন্তু বাদ পড়ে গেলেন আবু জায়েদ রাহী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে স্কোয়াডে দেখা গেল, রাহী ১৩ জনের স্কোয়াডেই নেই। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এরকম বলেই দিলেন, চট্টগ্রাম টেস্টে এক পেসার নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ। আরও বললেন, টিম কম্বিনেশনের কথা ভেবে রাহী জায়গা পাননি, তাঁকে আসলে ‘বাদ দেওয়া হয়নি।’ কিন্তু এই টিম কম্বিনেশন ব্যাপারটা আসলে কী?

    মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন সকালে নির্বাচক হাবিবুল বাশার এর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মোস্তাফিজ ও রাহী সাইড আর্ম অ্যাকশনে একই ধাঁচের বলে দুজনকে একসঙ্গে খেলানো হয়নি। আর সোজাসুজি ‘হিট দ্য ডেকে’ বেশি বল করতে পারা খালেদকে সেজন্য নেওয়া হয়েছে। খালেদ অবশ্য খারাপ করেননি, উইকেট না পেলেও সেটা দিয়ে তাঁর বোলিং বিচার করা যাবে না। ভাগ্য ভালো থাকলে অন্তত তিনটি উইকেট পেতেই পারতেন। বরং মোস্তাফিজের চেয়ে বেশি সুযোগ তিনিই তৈরি করেছিলেন।

    কিন্তু এসব দিয়ে তো রাহীর বাদ পড়ার যৌক্তিকতা প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই। সিলেটের উইকেটে এমন কোনো জুজু ছিল না, পেসারদের জন্য সেভাবে তেমন কিছুও ছিল না প্রথম দিন। এর মধ্যেও হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে আউট করেছেন দারুণ এক ইনসুইঙ্গারে। আর উইকেট না পেলেও নিবেদনটা তাঁর মধ্যে ভালোভাবেই ছিল। তার চেয়েও বড় ব্যাপার, রাহীকে উপেক্ষা করে পারফরম্যান্সটাও যে গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন নির্বাচকেরা। এই জুন-জুলাইতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল রাহীর, তখনই বলেছিলেন সীমিত ওভারের চেয়ে লম্বা দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটকে নিয়েই তাঁর স্বপ্ন। দুই টেস্টে দুই ইনিংসে তিন উইকেট করে পেয়েছিলেন, মোস্তাফিজহীন বাংলাদেশের পেস আকাশে যা একটু জ্বলজ্বলে ছিলেন ওই রাহীই। আর এখন তাঁর স্কোয়াডেই জায়গা হয় না!

    অথচ দায়িত্ব নেওয়ার পর কোচ রোডস নিজেই বলেছিলেন, বাংলাদেশের পেস-সংস্কৃতিটা বদলে দিতে চান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে ফিরে বলেছিলেন, দেশের মাটিতে পেসাররা নিয়মিত না খেললে বিদেশে ভালো করতে পারবে না। সিলেট টেস্টের মাঝেই সেটা স্বীকার করলেন। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি দাঁড় করালেন, ব্যাটিং গভীরতা বাড়ানোর জন্য ওই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। মিরপুরে সেই সিদ্ধান্ত বদলাল, কিন্তু রাহী হলেন বলির পাঁঠা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দল ঘোষণার পর তো প্রশ্ন উঠেই গেল, বাংলাদেশের নির্বাচকদের আদৌ পেস বোলিং নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না।

    গত তিন বছরের পারফরম্যান্স দেখলে এই পরিকল্পনাহীনতা একটু স্পষ্ট হবে। এই সময় বাংলাদেশ আটজন আলাদা আলাদা পেসারকে পরখ করে দেখেছে, কিন্তু এক মোস্তাফিজ ছাড়া আর কেউ থিতু হতে পারেনি। আবার কাউকে কাউকে কেন দলে নেওয়া হয়েছে, আর কেনই বা দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সেটাও অনেক সময় বোঝার উপায় নেই। শফিউল ইসলাম যেমন অনেকবারই স্কোয়াডে থাকলেও গত তিন বছরে খেলার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র তিনটি টেস্ট। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজেও তিনি দলে ছিলেন, কিন্তু কোনো টেস্ট না খেলেই বাদ পড়েছেন।  এখন আবার খালেদ আছেন দলে, কিন্তু তাঁকে নিয়েও নির্বাচকেরা কয়েক টেস্টের মধ্যে ধৈর্য হারিয়ে ফেলবেন না, সেই গ্যারান্টিও দেওয়া যায় না।   

    এমনিতেই টেস্ট বোলিংয়ে নিজেদের সঁপে দেওয়ার মতো বোলার বাংলাদেশে কম আছে। ওয়ানডে ১০০ উইকেট হেসেখেলে হয়ে গেছে, এমন বোলারও টেস্টে বল করতে আগ্রহী নন, সেটাও জানা যায় দলের বিভিন্ন সূত্রে। অথচ কোর্টনি ওয়ালশের মতো গ্রেটকে দুই বছর ধরে বোলিং কোচ হিসেবে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে পেসারদের। এমন একজন কিংবদন্তি থেকে পেসাররা কতটুকু শিখতে পারছেন, সেটা তো বড় প্রশ্নই। আর যারাও বা একটু শিখতে চাইছেন, তারা কতটুকু কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন, সেই প্রশ্নও তো উঠছে।

    কিন্তু এসবের উত্তর নির্বাচকদের কাছ থেকে আশা করে লাভ নেই। তারা যে ‘টিম কম্বিনেশনের’ ঢাল নিয়ে প্রস্তুত!