ইংলিশ সিংহদের হেলায় লঙ্কা জয়
কলম্বো টেস্ট
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৩৩৬ (বেইরস্টো ১১০, স্টোকস ৫৭, সান্দাকান ৫/৯৫) ও ২য় ইনিংস ২৩০ (বাটলার ৬৪, স্টোকস ৪২, পেরেরা ৫/৮৮, পুস্পকুমারা ৩/২৮)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ২৪০ (করুনারত্নে ৮৩, ধনঞ্জয়া ৭৩, রশিদ ৫/৪৯, স্টোকস ৩/৩০) ও ২য় ইনিংস ২৮৪ অল-আউট (মেন্ডিস ৮৬, রোশেন ৬৫, লিচ ৪/৭২, মইন ৪/৯৬)
ইংল্যান্ড ৪২ রানে জয়ী, সিরিজ ৩-০ তে জয়ী
শ্রীলঙ্কা এদিন খেললো যেন কোণঠাসা বাঘের মতো। ৩২৭ রানের লক্ষ্য, আগেরদিন ৪ উইকেট গিয়েছিল, এদিন ৮২ রানের মাথায় গেল ৫ উইকেট। ৬ষ্ঠ উইকেটে কুশাল মেন্ডিস ও রোশেন সিলভা ইংল্যান্ডকে হতাশায় ডোবালেন, তাদের জুটি ১০২ রানের। ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ‘স্পেশাল’ কিছুর, যেটা করলেন জ্যাক লিচ। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে খেলেছিলেন রোশেন সিলভা, দুই রান নিতে গিয়েছিলেন দুজন। লিচের বুলেট-থ্রো সরাসরি ভাঙলো স্টাম্প, হাঁফ ছেড়ে বেঁচে যেন ম্যাচে ফিরল ইংল্যান্ড। তবে নাটক তখনও বাকি, তখনও লড়াই বাকি শ্রীলঙ্কার। এবার ঝড় তুললেন শেষ ব্যাটসম্যান মালিন্দা পুস্পকুমারা, জয় থেকে ৪৩ রান দূরে চা-বিরতিতে গেলেন তারা।
বিরতিটাই কাল হলো তাদের। আবারও দৃশ্যপটে লিচ। লাকমাল বলের লাইনে খেলতে গিয়ে মিস করলেন, সোজা হওয়া বলটা আঘাত করলো তার প্যাডে, আম্পায়ার এস রভি দিলেন আউট। রিভিউয়েও কাজ হলো না। শ্রীলঙ্কা এড়াতে পারলো না হোয়াইটওয়াশ। ১৯৬২-৬৩ মৌসুমের পর এই প্রথম দেশের বাইরে তিন বা এর বেশি ম্যাচের সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করলো ইংল্যান্ড। কলম্বোতে শ্রীলঙ্কা কোণঠাসা বাঘের মতো খেললেও শেষ হাসি ওই ইংল্যান্ডেরই।
শ্রীলঙ্কার শেষ উইকেটটাকে প্রতীকি ধরে নিতে পারেন এ সিরিজে। যেখানে আধিপত্য ছিল স্পিনের। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এটা নতুন নয়, তবে ইংল্যান্ডের স্পিনাররা যে ছাড়িয়ে গেলেন শ্রীলঙ্কানদেরও। সিরিজে মোট ১০০ উইকেট নিয়েছেন স্পিনাররা, তিন বা এর কম ম্যাচের সিরিজে যেটা সর্বোচ্চ। এ ইনিংসে লিচ নিলেন চারটি, মইনের উইকেটসংখ্যাও তাই।
জো রুটের অধিনায়কত্বে গলে প্রথমবার দেশের বাইরে টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড, এবার সিরিজ জেতাটা পরিণত হলো হোয়াইটওয়াশে। ম্যাচসেরা হলেন এ টেস্ট দিয়েই দলে ফেরা জনি বেইরস্টো, সিরিজসেরা হলেন অভিষিক্ত বেন ফোকস। ভারতের সঙ্গে সিরিজে সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন স্যাম কারান, ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক করলেই যেন মিলছে সিরিজসেরা পুরস্কার!
ফল বলছে হোয়াইটওয়াশ, তবে সিরিজটা একপেশে ছিল না ঠিক। এদিন সকালেও ইংল্যান্ডকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ব্রেকথ্রুর জন্য। লাকশান সান্দাকান অবশেষে ফিরেছেন লিচের ‘রিপার’-এ, এজড হয়ে স্লিপে স্টোকসের হাতে ধরা পড়ে। লাঞ্চের আগে আর উইকেট হারায়নি শ্রীলঙ্কা, মেন্ডিস-রোশেন তাদেরকে দেখাচ্ছিলেন অসম্ভবের স্বপ্ন।
লিচের সেই ম্যাজিক-থ্রোতে ভেঙেছে সেটা। তার আগে মেন্ডিস করেছেন ৮৬ রান। নিরোশান ডিকওয়েলা ও দিলরুয়ান পেরেরা এরপর ধরা পড়েছেন শর্ট লেগকে নিজের রাজত্ব বানিয়ে ফেলা কিটন জেনিংসের হাতে, প্রথমজন লিচ, দ্বিতীয়জন মইনের বলে। রোশেন একদিকে ছিলেন, মইনের স্কিড করা বলে ব্যাট সময়মতো না নামাতে পেরে হয়েছেন এলবিডব্লিউ।
পুস্পকুমারা ঝড় এরপরই। যে ঝড় ইংল্যান্ডকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করলো। তবে সমর্পণটা করতে হলো শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকেই।