লেভানডফস্কির পাঁচ ও অদ্ভুত সব হ্যাটট্রিকের গল্প

রবার্ট লেভানডফস্কি কী করেছেন, সেটা এর মধ্যেই হয়তো অনেকেই জেনে গেছেন। নয় মিনিটে পাঁচ গোলের কীর্তিটা তোলপাড়ই ফেলে দিয়েছে ফুটবল বিশ্বে। কাল উলফসবার্গের সাথে যেসব রেকর্ড ভেঙেছেন, সেগুলোর তালিকাও অনেক লম্বা হয়ে যাবে। মাঠে নামার চার মিনিটের মধ্যেই হ্যাটট্রিক করেছেন, বুন্দেসলিগার ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম। এরপর যথাক্রমে চার ও পাঁচ গোলের জন্যও সময় নিয়েছেন সবচেয়ে কম। বদলি হিসেবে এর আগে জার্মানিতে কেউ তিনটির বেশি গোল করতে পারেনি, সেই কীর্তিও হয়ে গেছে লেভার। ফুটবলে পাঁচ গোলের কীর্তি আরও আছে, তবে বায়ার্ন স্ট্রাইকারেরটা মনে করা হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুততম। বায়ার্নের হয়ে এক ম্যাচে পাঁচ গোল অবশ্য এর আগে করেছেন মাত্র দুইজন, জার্ড মুলার করেছেন তিনবার, ডিয়েটার হোয়েনেস করেছেন একবার। আর মাত্র এক গোলের জন্য বুন্দেসলিগায় ডিয়েটার মুলারের এক ম্যাচের ছয় গোলের রেকর্ড ছুঁতে পারেননি এই পোলিশ স্ট্রাইকার।
তবে লেভানডফস্কির চার মিনিটের হ্যাটট্রিক কিন্তু ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম নয়। অবিশ্বাস্য শোনাতে পারে, ১৯৬৪ সালে ৯০ সেকেন্ডে হ্যাটট্রিক করেছিলেন স্কটল্যান্ডের টমি রস। স্কটল্যান্ডের লিগে নাইরন কাউন্টির সঙ্গে সেই ম্যাচে দলের ৮ গোলের ৭ গোল করেছিলেন ১৭ বছর বয়সী রস। মজার ব্যাপার, রসকে রেকর্ডের স্বীকৃতি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪০ বছর। সেই ম্যাচের রেফারি, প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের সঙ্গে কথা বলে, লিগ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে তবেই গিনেস কর্তৃপক্ষ সেটিকে ফুটবল ইতিহাসের দ্রুততম হ্যাটট্রিকের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও সুইডেনে ম্যাগনাস আরভিডসনও এ রকম একটা দাবি তুলেছিলেন। ১৯৯৫ সালে হ্যাসেলহমের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগের দল লান্ডসক্রোনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন আরভিডসন। তাঁর দাবি, সময় লেগেছিল ৮৯ সেকেন্ড। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণ না থাকায় দাবিটা ধোপে টেকেনি।
এর আগ পর্যন্ত দ্রুততম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড ছিল আর্জেন্টিনার এদুয়ার্দো ম্যাগলিওনির। ১৯৭৩ সালে ইনদিপেনদিয়েন্তির হয়ে ১১১ সেকেন্ডে হ্যাটট্রিক করেছিলেন এই স্ট্রাইকার। হ্যাটট্রিকের সময় ম্যাগলিওনি নাকি বুঝতেই পারেননি এ রকম কিছু করে ফেলেছেন। ‘ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পর একজন সাংবাদিক এসে আমাকে বললেন, তুমি তো বিরাট একটা কাণ্ড করে ফেলেছ। আমি মনে করেছিলাম, আমার ১৫ মিনিট লেগেছিল। কিন্তু তিনি বললেন আমি দুই মিনিটের কমেই হ্যাটট্রিক করেছি। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না’—পরে বলেছেন ম্যাগলিওনি।
ইংল্যান্ডের জেমস হেইটারের কাহিনিটা আরও অদ্ভুত। ১০ বছর আগে তৃতীয় বিভাগের ম্যাচে রেক্সহামের সঙ্গে খেলছিল হেইটারের ক্লাব বোর্নমাউথ। হেইটারের বাবা-মা এসেছিলেন ম্যাচ দেখতে। কিন্তু কপাল মন্দ তাঁদের, ছেলে প্রথম একাদশেই জায়গাই পেলেন না। ভাবলেন, বসে থেকে আর কী হবে, ওদিকে আবার ফেরি ধরার তাড়া। শেষ পর্যন্ত পুরো ম্যাচ না দেখেই মাঠ ছাড়লেন। ৮৫ মিনিটে নামার সুযোগ পেলেন হেইটার, এরপর হ্যাটট্রিক করলেন মাত্র ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডে। কিন্তু যাঁদের সামনে করতে পারলে সবচেয়ে আনন্দ পেতেন, সেই বাবা-মা-ই তো দেখতে পেলেন না। ইংল্যান্ডে এটাই দ্রুততম হ্যাটট্রিক। অবশ্য ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ দ্রুততম সময়ে হ্যাটট্রিক দেখেছে ১৯৯৪ সালে, সেও ৪ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে, আর্সেনালের বিপক্ষে করেছিলেন লিভারপুলের রবি ফাউলার।
ক্লাব ফুটবলের গল্প তো অনেক হলো, এবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে আসা যাক। গিনেস বলছে, জাতীয় দলের হয়ে দ্রুততম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড জাপানের মাসাশি নাকাইয়ামার। ২০০০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্রুনাইয়ের সঙ্গে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে মুখোমুখি হয়েছিল জাপান। সেই ম্যাচের ৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ডেই ৩ গোল করেছিলেন নাকাইয়ামার। এর আগের রেকর্ডটা অবশ্য অনেক পুরোনো, ১৯৩৮ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ইংল্যান্ডের জর্জ উইলিয়াম হল।
এতো কিছু হলো, বিশ্বকাপের দ্রুততম হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটাও একটু জেনে নিন। এবার অবশ্য আর ২-৩ মিনিটে হয়নি। ১৯৫৪ বিশ্বকাপে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ২৪ মিনিটে হ্যাটট্রিক করেছিলেন অস্ট্রিয়ার এরিক প্রবস্ট।