• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের রাত, পিএসজির সঙ্গী রেডরা

    অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের রাত, পিএসজির সঙ্গী রেডরা    

    অ্যাডিশনাল টাইমের দ্বিতীয় মিনিট, গোল করে অন্যপ্রান্তে কাজ এগিয়ে রেখেছে লিভারপুল। গোল হজম না করলেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হবে। আর গোল খেয়ে বসলে বাকি দুই মিনিটে দিতে আরও দুই গোল। নাপোলির দরকার এক গোল। স্ট্রাইকার আর্কাদিউস মিলিক একেবারে লিভারপুলের গোলের সামনে পেলেন বল। নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শটও করলেন, সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, সেকেন্ডের ভগ্নাংশের সমান মুহুর্তে ততোক্ষণে দুই দলের সমর্থকেরা দুই চিত্র দেখে ফেলেছেন। নিশ্চিত গোলের দিকে যেতে সেই শটই সামনে এসে পুরো শরীর ছড়িয়ে দিয়ে সেভ করলেন অ্যালিসন বেকার। অ্যানফিল্ডের  রোমাঞ্চকর রাতে ওই মুহুর্তটাই শেষ পর্যন্ত ভাগ্য গড়ে দিল ম্যাচের। চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ 'সি' এর শেষ ম্যাচে নাপোলিকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে রানার আপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়েছে লিভারপুলের। আর সার্বিয়ায় রেডস্টার বেলগ্রেডকে ৪-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই। 

    অ্যানফিল্ডে ম্যাচের আগে অনেকগুলো সমীকরণ ছিল লিভারপুলের সামনে। হার এড়ালেই হত নাপোলির। অথবা ১-০ বাদে আর সব এক গোলের ব্যবধানের হারও দ্বিতীয় রাউন্ডে নিয়ে যেতে পারত তাদের। লিভারপুল কঠিন পথটাই বেছে নিয়েছে, ম্যাচে অনেকগুলো সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করে একেবারে শেষ পর্যন্তও নাপোলির আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল তারা। মোহামেদ সালাহর একমাত্র গোলে ম্যাচ জিতলেও তাই সব আলো কেড়ে নিয়েছেন অ্যালিসন।



    অ্যানফিল্ডে ম্যাচের প্রথম দশ মিনিটেই গোল পেতে পারত দুইদলই। লিভারপুলকে গোল করতেই হত, কপদের আক্রমণাত্মক শুরুটা তাই অনুমিতই ছিল। ৭ মিনিটে অ্যান্ড্রু রবার্টসনের দারুণ একটি ক্রস খুঁজে পেয়েছিল সালাহকে। দশ গজ দূর থেকে ফাঁকায় থেকেও বল নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি সালাহ। শুরুতেই তাই এগিয়েও যাওয়া হয়নি লিভারপুলের। অ্যানফিল্ডের ভয় জয় করে পরের মিনিটে নাপোলিই উল্টো ভয় পাইয়ে দিয়েছিল ঘরের দলকে। ডিবক্সের ঠিক ভেতর থেকে মারেক হামসিকের শট অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস না করলে লিভারপুলের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে যেতে পারত আরও।

    প্রথম দশ মিনিটের মতো না হলেও এরপর প্রথমার্ধে দুই দলই গোলের জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এর মধ্যে ভার্জিল ভ্যান ডাইক আর কালিদু কৌলিবালি- দুইদলের দুই সেন্টারব্যাকই দেখেছেন হলুদ কার্ড। ভ্যান ডাইকের চেয়ে অবশ্য কৌলিবালিকেই বেশি পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ম্যাচের আধঘন্টা পর্যন্ত সবগুলো পরীক্ষায় সালাহকে ছাপিয়েই যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ৩৪ মিনিটে এই দুইজনের লড়াইয়ে জিতলেন সালাহ। কৌলিবালিকে বোকা বানিয়ে ডিবক্সের ভেতর কোণাকুণি জায়গা থেকে করলেন ডান পায়ে শট। গোলরক্ষক ডেভিড অস্পিনাও করলেন ভুল। তার পায়ের ফাঁক দিয়ে সালাহর শট জড়াল জালে। কাঙ্ক্ষিত গোলটা তখনই পেয়ে গেল লিভারপুল।  

    গোল হজমের পর খোলস ছেড়ে বের হতে বাধ্যই হয় কার্লো আনচেলত্তির দল। যদিও প্রথমার্ধে আর তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। আর অনেক সমীকরণের মারপ্যাঁচে থাকা লিভারপুলও স্বস্তি পায়নি ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধে নিজেরাই নিজেদের কাজটা কঠিন করেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। সালাহ প্রথমার্ধে সহজ সুযোগ নষ্ট করেছিলেন একটি, দ্বিতীয়ার্ধে করলেন আরও দুইটি। ৫০ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে কাটিয়ে ঢুকেও শট করেছেন বাইরে দিয়ে। ৭৪ মিনিটে অস্পিনার সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানেও মিস করেছেন গোল করার সুযোগ। ওই দফায় অস্পিনার দুইটি সেভ ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিল নাপোলিকে। সালাহর সতীর্থ মানে অবশ্য তাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন তিনি।



    দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা চাপে থাকলেও ৭০ মিনিটের পর ম্যাচে ফেরে ইতালির দলটি। তার আগ পর্যন্ত ভ্যান ডাইক আর জোল মাটিপের রক্ষণ দুর্গ আর ভাঙার সুযোগ কমই পেয়েছে নাপোলি।  দুই বদলি মিলিক আর ফৌজি গুলাম মিলে নাপোলির আক্রমণে ধার বাড়ান। গোলটা প্রায় তখনই পেয়ে যাচ্ছিল নাপোলি। কিন্তু ৭৯ মিনিটে লরেঞ্জো ইনসিনিয়ের ক্রসে ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারলেন না হোসে মারিয়া ক্যালেহন। তার সামনে ছিলেন কেবল অ্যালিসন, তবুও ক্যালিহন মারলেন বারপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে। আর ৯২ মিনিটে অ্যালিসনের ওই অতিমানবীয় সেভে তো ৯ পয়েন্ট নিয়েও গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো নাপোলিকে। তৃতীয় হয়ে নাপোলি এখন খেলবে ইউরোপা লিগের।

    সার্বিয়ায় পিএসজির উৎসব
    এডিনসন কাভানি ও নেইমারের গোলে ম্যাচের প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল পিএসজি। ৫৬ মিনিটে রেডস্টার বেলগ্রেড এক গোল শোধ করলেও, পরে আরও দুই গোল দেয় পিএসজি। কিলিয়ান এমবাপ্পেও পান গোল, তবে তার আগে মার্কিনহোসও বাড়িয়ে নিয়েছিলেন দলের লিড।