চাহালের ঘূর্ণির পর 'ফিনিশার' ধোনিতে সিরিজ ভারতের
অস্ট্রেলিয়া ২৩০ অল-আউট (হ্যান্ডসকম্ব ৫৮, মার্শ ৩৯, চাহাল ৬/৪২, ভুবনেশ্বর ২/২৮)
ভারত ২৩৪/৩, ৪৯.২ ওভার (ধোনি ৮৭*, যাদব ৬১*, রিচার্ডসন ১/২৭)
ভারত ৭ উইকেটে জয়ী ও সিরিজ ২-১ এ জয়ী
আপনি যদি এমএস ধোনি হন, তবে সমালোচনার জবাবটা দিবেন এভাবেই। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এ সিরিজের আগে দলে তার জায়গা নিয়ে উঠেছিল সমালোচনা, প্রথম ম্যাচে ফিফটি করলেও ছিলেন ধীরগতির, হেরেছিল ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে হয়তো একটু ঢাকা পড়েছিলেন, তবে কোহলি ঠিকই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, সে ইনিংসটি ছিল ‘এমএস ক্ল্যাসিক’। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে কোহলি ফিরলেন তুলনামূলক আগেভাগেই, ম্যাচ শেষ করার চাপটা ছিল ধোনির কাঁধেই। কেদার যাদবকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ১২১ রানের জুটি ভারতকে পার করালেন ধোনি, প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতল ভারত।
অস্ট্রেলিয়া অবশ্য সুযোগ পেয়েছিল ২৩০ রানের সম্বল নিয়েও ভারতকে দারুণ চাপে রাখার, তবে ক্যাচ ও রান-আউটের সুযোগ মিস ভুগিয়েছে তাদের। হয়তো অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ব্যাপারগুলি যায় না, তবে এ সফরে অস্ট্রেলিয়ার চিত্র ছিল এমনই। ভারত তাদের ওপর আধিপত্য করেছে সব ফরম্যাটেই। টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র হলেও টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ভারতের জয়ই যা প্রমাণ করছে।
২৩০ রানের লক্ষ্যটা খুব বেশি নয়, তবে শুরুতেই রোহিত শর্মার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল ভারত, পিটার সিডলের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন রোহিত। শিখর ধাওয়ানকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বিরাট কোহলি যোগ করেছিলেন ৪৫ রান। মার্কাস স্টোইনিসকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন ধাওয়ান, ৪৬ বলে কোনও বাউন্ডারি ছাড়া ২৬ রান করে। এরপর কোহলির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন চারে উঠে আসা ধোনি।
দুজনের ৫৪ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে ছিটকে দিচ্ছিল প্রায়, কোহলির অফস্টাম্পের বাইরের ভূত ফেরা আসায় ম্যাচে ফিরেছিল স্বাগতিকরা। জাই রিচার্ডসনের অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে কট-বিহাইন্ড হয়েছেন কোহলি, সিরিজে তিন ইনিংসেই তিনি আউট হলেন একই বোলারের বলে। কেদার যাদব ও ধোনি অবশ্য অস্ট্রেলিয়াকে এরপর ভুলিয়ে দিয়েছেন কোহলির উইকেটের সুখস্মৃতি।
প্রথম বলেই সুযোগ দিয়েছিলেন ধোনি, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সেটা ফেলেছেন ম্যাক্সওয়েল। শেষে গিয়ে আরেকবার দিয়েছিলেন, এবার ধরতে পারেননি অ্যারন ফিঞ্চ। ততক্ষণে বাড়তে থাকা রান-বলের ব্যবধানটাও নাগালের মধ্যে এনে ফেলেছিলেন যাদব ও ধোনি। যাদব বেশ দ্রুতগতিরই ছিলেন, তবে পরিস্থিতি বুঝে ধোনি ছিলেন নির্ভার। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ১১৪ বলে ৮৭ রানে। ম্যাচজয়ী রান নেওয়া যাদব খেলেছেন ৫৭ বলে ৬১ রানের ইনিংস।
টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া ভারতকে শুরুটা দারুণ এনে দিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। ২৭ রানের মাঝেই ফিরেছেন দুই ওপেনার- অ্যালেক্স ক্যারি ও অ্যারন ফিঞ্চ। উসমান খাওয়াজা ও শন মার্শ রানের যাত্রা চালিয়ে গেছেন, যুঝভেন্দ্র চাহাল দৃশ্যপটে হাজির হওয়ার আগে। প্রথমে লেগসাইডের ওয়াইডে স্টাম্পড হয়েছেন ৩৯ রান করা শন মার্শ, তিন বল পর ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন ৩৪ রান করা খাওয়াজা। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে মার্কাস স্টোইনিস ফেরাতে ২১ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
১৯ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ২৬ রানের ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার গিয়ার বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন ম্যাক্সওয়েল, শামির বলে লাইনে ধরা পড়ে হয়নি সেটা। চাহাল আবার হাজির- আবার নিয়েছেন তিন উইকেট। ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৮ রান করা পিটার হ্যান্ডসকম্ব এলবিডব্লিউ, তার আগে-পরে ক্যাচ দিয়েছেন রিচার্ডসন ও অ্যাডাম জাম্পা। বিলি স্ট্যানলেকেকে বোল্ড করে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ৮ বল থাকতেই শেষ করেছেন শামি। চাহাল তার আগে বোলিং শেষ করেছেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ৪২ রানে ৬ উইকেট নিয়ে।
আর এরপর তো শেষ করলেন ধোনি। অথচ এই সিরিজের আগে তার ক্যারিয়ার শেষও দেখে ফেলেছিলেন অনেকে!