• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    ডানেডিনের নিকষ আঁধারে আলোর রেখা সাব্বির

    ডানেডিনের নিকষ আঁধারে আলোর রেখা সাব্বির    

    তৃতীয় ওয়ানডে, ডানেডিন  
    নিউজিল্যান্ড ৩৩০/৬, ৫০ ওভার (টেইলর ৬৯, নিকোলস ৬৪, ল্যাথাম ৫৯, সাইফউদ্দিন ১/৪৮, মিরাজ ১/৪৩)
    বাংলাদেশ ২৪২ অল-আউট, ৪৭.২ ওভার (সাব্বির ১০২, সাইফউদ্দিন ৪৪, মিরাজ ৩৭, সাউদি ৬ /৬৫, বোল্ট ২/৩৭) 
    নিউজিল্যান্ড ৮৮ রানে জয়ী ও সিরিজ ৩-০তে জয়ী 


    সাব্বির রহমানের ইনিংসটি ছিল দারুণ। শুরুতেই পাওয়া জীবন দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন, তবে ডানেডিনে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর সমন্বিত লড়াইয়ে দারুণভাবেই ব্যর্থ বাংলাদেশ। ৩৩১ রানের লক্ষ্যে এ ম্যাচ দিয়েই দলে ফেরা টিম সাউদির ৬ উইকেটে ম্লান হয়ে গেল এ সিরিজ দিয়ে দলে ফেরা সাব্বিরের সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডে কোনও ম্যাচ না জেতার ট্র্যাকেই এখনও তাই বাংলাদেশ, আর ডানেডিনে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা বজায় রাখলো নিউজিল্যান্ড। 

     

     

    মূলত বিশ্বকাপকে মাথায় রেখেই এ সফরে নেওয়া হয়েছিল সাব্বিরকে, প্রথম দুই ম্যাচে স্ট্রোকপ্লের ইঙ্গিত দিলেও সেটা পরিণত করতে পারেননি তার পোর্টফোলিওর কিছু হিসেবে। ডানেডিনে সেই আক্ষেপটা দূর করলেন তিনি। বিহাইন্ড দ্য স্কয়ার থেকে শুরু করলেন, খেললেন মাঠের চারপাশেই। গ্যাপ বের করেছেন দারুণভাবে, স্যান্টনারের স্পিনের সঙ্গে পেসারদের ওপরও বিস্তার করেছেন আধিপত্য।

     

    ৬১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ৬ষ্ঠ উইকেটে সাইফউদ্দিনের সঙ্গে ১০১ ও ৮ম উইকেটে মিরাজের সঙ্গে ৬৭ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছেন এ সফরে ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে ভাল দিনটি কাটাতে। ৫৯ বলে ফিফটি ছুঁয়েছিলেন ১৬ ইনিংস ও প্রায় দেড় বছর পর। এরপর ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন সাউদির বলে গ্যাপ খুঁজে চার বের করে ৯৯-তে পৌঁছানোর পর স্কয়ার লেগে পুল করে সিঙ্গেল নিয়ে। তবে সে পর্যন্তই। নিজে শিকার হয়েছেন সাউদির ৬ষ্ঠ শিকারে, এর আগে মাশরাফি, ৭ বাউন্ডারিতে ৩৭ রান করা মিরাজ ও রুবেলও ফিরেছেন তাকে রেখে। 

     

     

    অবশ্য বাংলাদেশের যা ব্যাটিং প্রতিরোধ, তা এসেছে ওই লোয়ার মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডার থেকেই। শুরুটা ছিল বিভৎস। 

    তামিম শুরু থেকেই আক্রমণ করতে গিয়ে বিপদ ডেকেছেন ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে সাউদির অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে। সৌম্য শিকার দারুণ সিম বোলিংয়ের, যেটা ঢুকেছে তার ব্যাট-প্যাডের বিশাল ফাঁক গলে। লিটনের বিভীষিকা কাটেনি, হয়েছেন এলবিডব্লিউ। ১, ১, ১ সংখ্যাগুলো তাকে তাড়া করে ফিরতেই পারে এরপর। ২ রানে ৩ উইকেট নেই, ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ। তবে বাংলাদেশের কাছে পরিচিত সেই জুটি ফিরিয়ে আনতে পারলো না মহাকাব্যিক কার্ডিফের ছিঁটেফোঁটাও। এদিক-ওদিক করে বাউন্ডারি পেয়ে মুশফিকের পক্ষে থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছিল ভাগ্য, বোল্টের বলে ঘুরিয়ে মারতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে ভাগ্যকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফিরলেন মুশফিক। ব্যাটিংয়ের সময় আঙুলে পাওয়া চোটটা বাড়ালো শুধু দুশ্চিন্তাই। 

    ডি গ্র্যান্ডহোমকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারতে গিয়ে যেন শেষ মুহুর্তে গিয়ে শটের নিয়ন্ত্রণ হারালেন মাহমুদউল্লাহ, ডিপ মিডউইকেট থেকে ছুটে আসা মানরোকে দিলেন ক্যাচ। 

     

     

    সেই মানরোর উইকেট দিয়ে বোলিংয়ে শুরুটা আশাজাগানিয়াই ছিল টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ভেঙেছিল ২১ রানেই, মাশরাফির রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা লেংথ বলটা ভেতরের দিকে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন মানরো। এরপর মার্টিন গাপটিল ফিরেছেন তামিম-জাদুতে। ১২তম ওভারে চতুর্থ বোলার হিসেবে আসা সাইফউদ্দিনের ফুললেংথের বলে টেনে মেরেছিলেন গাপটিল, লং-অনে তামিম ক্যাচটা ধরেছেন সীমানার এপার-ওপার থেকে। 

    হেনরি নিকোলস আগের দুই ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন, এবার তিনে নামলেও এসেছিলেন আগেভাগেই। ফর্মটাও টেনে আনলেন, রস টেইলরের সঙ্গে ৯২ রানের জুটিতে। শর্ট-ওয়াইড যেটাই পেয়েছেন, নিকোলস সেগুলোর সদ্ব্যবহার করেছেন দারুণ। মিরাজকে সুইপের চেষ্টায় টপ-এজড হয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়ার আগে করেছেন ৭৪ বলে ৬৪ রান। 

    নিকোলস-টেইলরের জুটি যে ট্রেনে তুলে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে, সেটা ধরেই অনেকদূর এগিয়ে গেছে তারা অধিনায়ক ল্যাথামের সঙ্গে টেইলর ও নিশামের যথাক্রমে ৫৫ ও ৬৫ রানের জুটিতে। টেইলর এদিন ক্যারিয়ারের ৮০০০ রান ছোঁয়ার পর গড়েছেন রেকর্ড, স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের ৮০০৭ রানকে ছাড়িয়ে হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান-স্কোরার। রুবেল হোসেনের লেংথ বলে পুল করতে গিয়ে এজড হয়ে ডিপ-মিডউইকেটে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেছেন ৬৯ রান।

     

     

    মাহমুদউল্লাহকে দুই ছয়ে শুরু করেছিলেন নিশাম, এরপর আরও তিন বাউন্ডারিতে করেছেন ২৪ বলে ৩৭ রান। রুবেল হোসেনের করা ৪৪তম ওভারে উঠেছে ২১ রান, যে ওভারে টানা দুই ছয় মেরে ফিফটি করেছেন ল্যাথাম। মোস্তাফিজের স্লোয়ারে ইনসাইড-এজে বোল্ড হয়েছেন নিশাম, এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি ল্যাথামও। মোস্তাফিজের ফুলটসে মিসটাইমিংয়ে তিনি ক্যাচ দিয়েছেন ডিপ মিডউইকেটে, ৫১ বলে ৫৯ রান করার পর। 

    এরপর ছিল গিয়ার বদলের পালা। ডানেডিনের ছোট মাঠের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন কলিন ডি গ্রান্ডহোম ও মিচেল স্যান্টনার। যথাক্রমে দুজনের ১৫ বলে ৩৭ ও ৯ বলে ১৬ রানের ক্যামিওতে ৩৩০ পর্যন্ত গেছে নিউজিল্যান্ড। এ মাঠে প্রথম ইনিংসে গড় স্কোর ছিল ২৫৪ রান। 

    ডেথ ওভারে সাইফউদ্দিন শুরুতে দারুণ থাকলেও শেষে গুলিয়ে ফেলেছেন। আর ম্যাচজুড়েই এলোমেলো ছিলেন মোস্তাফিজ, এ বাঁহাতি ১০ ওভারে গুণেছেন ৯৩ রান। যা বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় ব্যয়বহুল বোলিং, এর আগের দুই রেকর্ডই ছিল শফিউল ইসলামের।