• শাহরিয়ার নাফীসের বিশ্লেষণ
  • " />

     

    'সাকিবকে জোর করেই তিনে নামাতে হচ্ছে'

    'সাকিবকে জোর করেই তিনে নামাতে হচ্ছে'    

    টস কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

    আমার কাছে মনে হয়, ওভালের উইকেটে টস খুব বড় ভূমিকা রাখবে না। কারণ উইকেট ফ্ল্যাট থাকবে। তবে সবকিছু চিন্তা করে মনে হয়, বাংলাদেশ কাল পরে ব্যাট করতে চাইবে। কারণ আমরা জানি, দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ শক্তিশালী। সকালের উইকেটে সেই সুবিধা বাংলাদেশ নিশ্চয় ওদের দিতে চাইবে না। আর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং এই মুহূর্তে একটু ব্যাকফুটে আছে। আমরা যদি ওদের অল্প রানে বেঁধে রাখতে পারি তাহলে আমার মনে হয় ভালো একটা সুযোগ থাকবে।

     

    ওভালে রান উৎসব হতে পারে

     ওভাল তো ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে আইকনিক ভেন্যুগুলোর একটি। এখানে খেলার অভিজ্ঞতা আমার আছে। আমি সেখানে খেলেছি, ওভালের উইকেট খুবই ব্যাটিং বান্ধব। আমি যখন সেখানে খেলেছি, সারের কাউন্টি দলের অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছিল। তারাও বলেছে, ওভালে রান করা তুলনামূলকভাবে সহজ। আউটফিল্ড দ্রুত, উইকেট ফ্ল্যাট। আমি মনে করি, এখানে খেলাটা বাংলাদেশের জন্য ভালোই হবে। আমার মনে হয় ২৮০-৯০ এমনকি ৩০০ পর্যন্তও আমরা তাড়া করতে পারব।

     

    ‘বেসিক’ ঠিক রাখতে হবে

    বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা হবে, খেলাটাকে খুব সহজভাবে খেলতে হবে। বেসিকটা আমাদের ঠিক রাখতে হবে। আমরা যদি ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটা দেখি, সেখানে কিন্তু বোলিংয়ে প্রথম ২০ ওভার মৌলিক কাজটা আমরা ঠিকমতো করেছি। এমনকি ব্যাটিংয়েও আমরা শুরুর দিকে মৌলিক কাজটা করছিলাম। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও সেটা ধারাবাহিকভাবে করতে পেরেছি। তো আমার মনে হয় এটাই আমাদের ঠিক রাখতে হবে।

     

     

    সাকিব-মিরাজ হবে গুরুত্বপূর্ণ

     

    যদিও আয়ারল্যান্ডের পর ভারতের বিপক্ষে অনুশীলনে আমাদের স্পিনাররা খুব ভালো করতে পারনি, তারপরও কাল কিন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা স্পিনের বিপক্ষে বেশ ভুগেছে। আদিল রশিদ ভালো উইকেট নিয়েছে, মঈন আল ভাল করেছে। তার ওপর ওদের ব্যাটিংয়ে দুজন অনভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। আমলা ও ডু প্লেসি ছাড়া আছে ডি কক-ডুমিনি। স্পিনের বিপক্ষে ডুমিনিও খুব ভালো না। মার মনে হয় বাংলাদেশের পেসারদের তো ভালো করতেই হবে, স্পিনারদের ভূমিকাও হবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

     

    স্টেইন না থাকলে প্রভাব বেশি পড়বে না

    আমার মনে হয় না, ডেল স্টেইন না থাকায় খুব বেশি কিছু আসে যাবে। ও কিন্তু অনেক দিন ধরেই চোটে, সেভাবে ওয়ানডেও খেলতে পারেনি। তো রাবাদা ওদের মূল বোলার। এনগিদিও ভালো করছে। আর অবশ্যই চোখ রাখতে তবে ইমরান তাহিরের ওপর। আর ফেহলেকায়ো আর প্রিটোরিয়াস হয়তো খেলবে। আমার মনে হয়, বোলিং ভালো হলেও খুব বড় হুমকি হওয়ার মতো নয়। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের খেলতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

     

    লিটনকে তিনে দেখতে চাই

    আমার কাছে মনে হয়, লিটনকে আমি তিনে খেলাব। এর কারণ দুইটি। এক, লিটন ফর্মে আছে। গত দুইটি ম্যাচে সে রান পেয়েছে, এখানে সে একটু এগিয়ে থাকবে। আর দ্বিতীয়ত, আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বল জায়গাটা লোয়ার মিডল অর্ডার। টপ অর্ডারের সবাই যেরকম ধারাবাহিকভাবে রান পেয়েছে, লোয়ার মিডল অর্ডারে সেখানে ওই ধারাবাহিকতার একটু অভাব আছে। সাব্বির বা মোসাদ্দেকের কেউ এখনও পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। আর সাকিবকে আমরা একরকম জোর করেই তিনে খেলাচ্ছি, ওখানে আমাদের ভরসা করার মতো কেউ নাই সেকারণে। তাই লিটন তিনে নেমে সবাই যদি একধাপ করে পিছিয়ে যায় তাহলে আমার মনে হয় ব্যাটিং অর্ডারও লম্বা হবে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমি একজন বাড়তি স্পিনার খেলাতে চাই, সেজন্য আমি মিরাজকে দলে নেব।

    আমার একাদশঃ তামিম, সৌম্য, লিটন, সাকিব, মুশফিক, মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, সাইফ উদ্দিন, মিরাজ, মাশরাফি ও মোস্তাফিজ।

     

    যারা হতে পারেন হুমকি

    আমার কাছে মনে হয় কাল আমলা, ডু প্লেসির সঙ্গে নতুন ব্যাটম্যান ফন ডার ডুসেনকে নিয়ে আলাদা করে ছক কষতে হবে পারে বাংলাদেশকে।

     

    যে দ্বৈরথের ওপর চোখ রাখতে হবে

    ১) তামিম ইকবাল-কাগিসো রাবাদা

    নতুন বলে রাবাদাকে তামিম কীভাবে খেলছেন তার ওপর বাংলাদেশের ইনিংসের গতিপথ অনেকটুকু নির্ভর করতে পারে।

    প্রাসঙ্গিক সংখ্যাঃ এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে চারবার ওয়ানডে মুখোমুখি হয়েছেন রাবাদা-তামিম। এর মধ্যে দুবার রাবাদা আউট করেছেন তামিমকে। সব মিলে রাবাদার বিপক্ষে ৩৩ বল খেলে ১৩ রান নিয়েছেন তামিম। স্ট্রাইক রেট ৩৯.৩৯, গড় ৬.৫।

     

    ২) সাকিব আল হাসান- ফাফ ডু প্লেসি

     

    প্রাসঙ্গিক সংখ্যাঃ  এখন পর্যন্ত ছয়বার সাকিব-ডু প্লেসি মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে দুই ইনিংসে সাকিব আউট করতে পেরেছেন ডু প্লেসিকে। সব মিলে সাকিবের বিপক্ষে ৭৮ বল খেলে ৪৯ রান নিয়েছেন ডু প্লেসি। গড় ২৪.৫, স্ট্রাইক রেট ৬২.৮২


    শাহরিয়ার নাফীস:  বাংলাদেশের হয়ে ২৪টি টেস্ট ও ৭৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক।