'রুবেলের এখন জায়গা নেই, তবে ওর সুযোগ আসবে'
কিপিং করলে মুশফিক ব্যাটিং আরও ভালো করে
আমার মনে হয় মুশফিকের রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করাটাই আগের ম্যাচের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল। ওই সময় কেন উইলিয়ামসনকে আউট করতে পারলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যেতে পারত। তবে আমি দিন শেষে এটাকে একটা ভুল হিসেবেই দেখতে চাই। এরপরও কিন্তু ও দুইটি ক্যাচ ধরেছে, যার মধ্যে একটা ছিল দারুণ। ইচ্ছা করে তো কেউ আর মিস করে না, এই ভুলটা নিয়ে খুব বাড়াবাড়ির দরকার নেই বলে আমি মনে করি। উইকেটকিপিংয়ে একটা ভুল কিন্তু অনেক বড় করে দেখা হয়। আর আরেকটা কথা হচ্ছে, মুশফিক আমাদের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। অবশ্যই আমি বলব ওর ব্যাটিং কিপিংয়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে। সেই সঙ্গে এটাও ঠিক, ও যখন কিপিং করে তখন ব্যাটিংয়ে সে আরও বেশি ভালো করে। এর প্রমাণ আগেও দেখা গেছে। তো সব মিলে ও যেটা করেছে সেটা ওর দ্রুত ভুলে যেতে হবে। এটা নিয়ে এত বেশি সিরিয়াস হওয়ারও কিছু নাই।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার থেকে আত্মবিশ্বাস নেওয়ার আছে
আমার মনে হয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে আমাদের প্রেরণা নেওয়ার মতো অনেক কিছু আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমাদের ব্যাটিং, বোলিং দুইটাই খুব ভালো হয়েছিল। ৩৩০ করে জিতেছি। এই ম্যাচে আমাদের ব্যাটিং হয়েছে অ্যাভারেজ, বোলিং মোটামুটি ভালো। সাকিব ছাড়া ব্যাটিংয়ে কিন্তু আর কেউ সেভাবে ভালো করতে পারেনি। আরও একটা সময় মনে হচ্ছিল ওরা ১০ ওভার আগেই জিতে যাবে। সেখান থেকে আমরা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি তাতে এই ম্যাচ থেকে অনেকটা আত্মবিশ্বাস পেয়েছে বলেই মনে করি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে সেটি কাজে আসতে পারে। আর এই ম্যাচ হেরে গেলেও আমাদের দমে যাওয়ার সুযোগ নেই। পাঁচটি ম্যাচ জিতলে আমাদের সেমিতে যাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে। সেই হিসেবে কালকের পর আরও ছয়টি ম্যাচ বাকি থাকবে।
রুবেল মিস করছি, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন
দেখুন, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড দুই দলই পেস খেলতে পছন্দ করে। কালকের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ কালকের ম্যাচেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আর সাকিব তো আছেই। এখন যে তিন জন পেসার খেলছে, তাদের মধ্যে একজনকে বসিয়ে রাখাও খুবই কঠিন। মোস্তাফিজ আমাদের মূল স্ট্রাইক বোলার, সাইফ উদ্দিন বল-ব্যাট দুইটিতেই ভালো করছে আর মাশরাফি তো আছেই। তাই রুবেলকে আমি মিস করলেও এই মুহূর্তে একাদশে ওর সুযোগ পাওয়া খুবই কঠিন বলে মনে করি। তবে এটা ঠিক, উপমহাদেশের দলগুলোর বিপক্ষে আমাদের পেসের ওপর আরেকটু বেশি নির্ভর করতে হতে পারে। আমার মনে হয়, তখন রুবেলের সুযোগ আসতে পারে।
কার্ডিফে মানসিকভাবে চাঙা থাকবে সবাই
কার্ডিফে অন্যরকম সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের
কার্ডিফ আমাদের জন্য সবসময়ই একটু অন্যরকম অনুভূতির নাম। এখানে আমরা ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি। এরপর গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও এখানে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে্ছি। কার্ডিফে এলে মানসিকভাবে দল চাঙা হয়ে ওঠার অবশ্যই একটা সম্ভাবনা আছে। আশা করি, আগের বার আমরা কার্ডিফে যেরকম উইকেটে খেলেছিলাম কালও সেরকম উইকেটে খেলতে পারব।
ইংল্যান্ড ফেবারিট, কিন্তু...
কালকের ম্যাচে ইংল্যান্ড অবশ্যই ফেবারিট, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। নিজেদের মাঠে খেলা, ওরা যেরকম ফর্মে আছে তাতে সেটি স্বাভাবিক। তবে আমি কোনোভাবেই বলব না ম্যাচটা একপেশে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কেউ এখন সহজে আর জিততে পারবে বলে আমি মনে করি না। তাই ইংল্যান্ড বাংলাদেশ হালকাভাবে নিলে ভুল করবে বলেই মনে করি। তবে আমি চাই, ওরা এই ভুলটা করুক। সেক্ষেত্রে কাল আমাদের ভালো কিছু করার একটা সুযোগ আসবে।
ইংল্যান্ডের কৌশল ‘ব্যাক অব দ্য লেংথ’
কাল হয়তো এরকম হতে পারে ইংল্যান্ড একজন স্পিনারের জায়গায় বাড়তি একজন পেসারকে নিয় আসতে পারে। প্লাংকেট শেষ পর্যন্ত রশিদের জায়গা নিতে পারেন সেটা আমরা জেনেছি। ওদের বোলাররা কাল কী লক্ষ্য নিয়ে নামবে সেটাও কিন্তু এ থেকে পরিষ্কার। দেখুন, কার্ডিফের মাঠ সামনে পেছনে ছোট, কিন্তু দুই পাশে চওড়া। তার মানে পুল বা হুক করে বাউন্ডারি মারা খুব সহজ হবে না। এই সুযোগটা ওরা নিতে চাইবে, ব্যাক অব দ্য লেংথ বল করে আমাদের ব্যাটসম্যানদের পেছনের দিকে খেলাতে চাইবে। যাতে ওরা সোজা ব্যাটে সামনে কম খেলতে পারে।
ভুলের সুযোগ নেই
বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি অবশ্যই ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ। আমরা সবাই জানি, নিজেদের দিনে তারা কী করতে পারে। আর ইংল্যান্ডের মাঠে যেহেতু খুব বেশি বল টার্ন করছে না, তাই আমাদের বোলারদের ভুলের সুযোগ নেই বললেই চলে। খুবই সুশৃঙ্খল বোলিং করতে হবে।
অসাধারণ খেলার দরকার নেই
আমরা আগে যতবার কোনো বড় দলকে হারিয়েছি কোনো এক্সট্রা-অর্ডিনারি বা অসাধারণ কিছু না করেই কিন্তু আমরা জিতেছি। অসাধারণ কিছু বলতে বোঝাচ্ছি আমাদের কোনো ব্যাটসম্যান একা ১৫০ও করেনি, আবার কোনো বোলার পাঁচ-ছয় উইকেট নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়নি। আমাদের সবাই নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করেছে বলেই জয় এসেছে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে তো বটেই, বিশ্বকাপের অন্য ম্যাচেও যদি ব্যাপারটা হয় তাহলে আমরা যে কাউকেই হারাতে পারি।
যে দ্বৈরথের ওপর চোখ
সাকিব-আর্চার
সাকিব এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান, আর আর্চার ওদের বড় এক্স ফ্যাক্টর। আমার মনে হয় সাকিবকে আউট করতে ওরা আর্চারকে ব্যবহার করতে চাইবে।
(ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনো মুখোমুখি হননি সাকিব-আর্চার)
জো রুট-মোস্তাফিজ
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডারে রুটের ধরে খেলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, মোস্তাফিজের সঙ্গে ওর লড়াইটা হবে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিসংখ্যানঃ দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একবারই ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছিল দুজন। সেবার মোস্তাফিজের ২৬ বল থেকে ২১ রান নিয়েছিলেন রুট, তবে আউট হননি।
শাহরিয়ার নাফীস: বাংলাদেশের হয়ে ২৪টি টেস্ট ও ৭৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক।