• লা লিগা
  • " />

     

    বার্সা ছেড়ে যেভাবে রিয়ালে যোগ দিলেন 'জাপানিজ মেসি'

    বার্সা ছেড়ে যেভাবে রিয়ালে যোগ দিলেন 'জাপানিজ মেসি'    

    তাকেফুসা কুবোর বয়স তখন মাত্র ১৪। বার্সেলোনার একাডেমি লা মাসিয়ার তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান ধরা হচ্ছিল তাকে। ড্রিবলিং, ক্ষীপ্র গতি, গোল করা, করানো- সব মিলিয়ে তার মধ্যে লিওনেল মেসির ছাপ খুঁজে পেয়েছিলেন বার্সার একাডেমি কোচ। আর বছর দুয়েক বাদেই হয়তো মেসিদের সাথে বার্সার একাদশেই দেখা যেত তাকে। কিন্তু তখনই বাধল বাগড়া। ২০১৪ সালে নিয়মের বাইরে একাডেমিতে বিদেশি ফুটবলার দলে নেওয়ায় ট্রান্সফার নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসল কাতালানদের ওপর। নিরূপায় কুবোকে একরকম বাধ্যই করা হল বার্সা ছাড়তে। স্পেনে অবশ্য আবারও ফিরলেন কুবো, তবে এবারের পথচলাটা ভিন্ন।

    ১৪ জুন ২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কুবোকে দলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। 'লস ব্লাঙ্কোস'দের 'বি' দল রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়াতে যোগ দেবেন তিনি। পাঁচ বছরের ব্যবধানে বার্সার লাল-মেরুন ছেড়ে রিয়ালের শ্বেতশুভ্র জার্সি গায়ে জড়ালেন জাপানের মিডফিল্ডার। বয়স মাত্র ১৮, কিন্তু এখনই জাপানের মূল দলে অভিষেক হয়ে গেছে তার; কোপা আমেরিকা খেলতে 'ব্লু সামুরাই'দের হয়ে এখন ব্রাজিল আছেন তিনি।

    শিনজি কাগাওয়াদের পরবর্তী যুগে জাপানের মূল ভরসা হিসেবে দেখা হচ্ছে তাকে। আগামী বছর জাপানে হতে যাওয়া অলিম্পিকে তাদের ফুটবল দলে নিশ্চিতভাবেই থাকছেন তিনি। অলিম্পিককে সামনে রেখে কুবোকে ঝালিয়ে নিতেই তাকে কোপা আমেরিকা স্কোয়াডে রেখেছে জাপান। কুবোকে 'জাপানিজ মেসি' ডাকারও যথেষ্ট কারণ আছে। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে স্ট্রাইকারের পেছনে 'ফ্রি রোল'-এ, বা উইঙয়ে খেলতে সমান পারদর্শী কুবো। ক্ষীপ্র গতি আর ড্রিবলিংয়ে মেসির সাথে খেলায় সাদৃশ্য খুঁজে পান অনেকেই।

     

     

    বার্সা থেকে সরাসরি রিয়ালে না আসেননি কুবো, কিন্তু তারপরও কুবোর ট্রান্সফারকে বার্সার ওপর নিজেদের জয় হিসেবেই দেখছে রিয়াল। ২০১৫ সালে মোট ১২জন বিদেশি ফুটবলারকে দলে নেওয়া নিয়ে বার্সাকে দলবদলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফিফা। কুবো ছিলেন তাদেরই একজন। বার্সার আপিল নাকচ হয়ে গেলে কুবো ফিরে যান মাতৃভূমি জাপানে, যোগ দেন এফসি টোকিও-র যুবদলে। তখনই রিয়ালের স্কাউট জুনি কালাফাতের চোখে পড়েন তিনি; সবার আগে যিনি রিয়ালকে সন্ধান দিয়েছিলেন মার্কো আসেন্সিও, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, মার্টিন ওদেগার্ডের মত তরুণ প্রতিভাদের। পাকা জহুরি কালাফাত হীরে চিনতে ভুল করেননি এবারও। 

    ২০১৮তেই কুবোকে দলে নিতে উঠেপড়ে লেগেছিল রিয়াল, কিন্তু রাজি হয়নি এফসি টোকিও। চুক্তিতে তখনও এক বছর বাকি কুবোর। কিন্তু কালাফাত নাছোড়বান্দা, পেরেজের সাথে একরকম ঝগড়া করেই কুবোকে দলে নেওয়ার জন্য মানালেন। জিদান ফিরে আসায় অবশ্য লাভও হল কালাফাতের, কুবোকে দলে নিতে রাজি হলেন তিনিও। টোকিওর সাথে কুবো যেন চুক্তি নবায়ন না করেন, নিশ্চিত করলেন সেটাই। শেষ পর্যন্ত জয় হল কালাফাতেরই, বার্ষিক ১ মিলিয়ন ইউরো বেতনের বিনিময়ে কুবোকে দলে নিল রিয়াল। অবশ্য বার্সা যে কুবোকে দলে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করেনি, তা অবশ্য নয়। কিন্তু তার চাহিদামত বেতন দিতে রাজি হয়নি কাতালানরা।

     

    বেতন নিয়ে মতের মিল না হওয়ায় এর আগেও বার্সা ছেড়ে রিয়ালে যোগ দিয়েছেন ফুটবলাররা। একই কারণে বার্সা ছেড়ে রিয়ালে যোগ দিয়েছিলেন আসেন্সিও। কুবোকে রিয়ালের কাছে হারানোর চেয়েও ফিফার দলবদলের নিয়ম নিয়েই ক্ষোভটা বেশি বার্সা প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের, '২০১৪-তেই আমরা ফিফাকে জানিয়েছিলাম, যুবদলে বিদেশিদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া ফুটবলারদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর। এরকম করলে সরাসরি তাদের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কিন্তু এখনও তারা তাদের পলিসিতে পরিবর্তন আনেনি, যেটা আসলেই দুর্ভাগ্যজনক।'

    রদ্রিগো, ভিনিসিয়াস, আসেন্সিও, লুনিন, ওদেগার্ড, কুবো- ভবিষ্যতের জন্য দল সাজানোর দিকেও নজর দিচ্ছে রিয়াল। হেসুস ভায়েহো বা আসেন্সিওর মত তরুণদের দলে নিয়েই ধারে অন্য দলে পাঠিয়ে দেয় রিয়াল, পারফর্ম করলে পরের মৌসুমে ফিরিয়ে আনা হয় বার্নাব্যুতে। ভিনিসিয়াস, আসেন্সিওদের মত কুবোর জন্য একই প্ল্যান আছে রিয়ালের, জানিয়েছেন কালাফাত। তবে কুবোর সাথে সবচেয়ে মিল কাসেমিরোর। ২০১৩ সালে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারকে দলে নিয়েই কাস্তিয়াতে পাঠিয়ে দিয়েছিল রিয়াল। 'বি' দলের হয়ে নিজেকে প্রমাণ করার পরের মৌসুমে তখনকার ম্যানেজার হোসে মরিনহোর অধীনে অভিষেক হয়েছিল কাসেমিরোর। কুবো যেমন অনুপ্রেরণা নিতে পারেন কাসেমিরো, ভায়েহোদের থেকে; তেমনি ক্যারিয়ার যেন ওদেগার্ডের মত না হয়ে; সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে তাকে।

    পিএসজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুলের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করে ১৬ বছর বয়সী ওদেগার্ডকে দলে নিয়েছিল রিয়াল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ধারেই খেলে বেড়াচ্ছেন তিনি। কাস্তিয়া থেকে ডাচ দল হিরেনভেন এবং ভিটেসের হয়ে খেলেছেন ওদেগার্ড। ভিটেসে থেকে রিয়ালে ধারে ফিরলেও আগামী মৌসুম রিয়ালের জার্সিতে ওদেগার্ডকে না দেখার সম্ভাবনাই বেশি। প্রতিভার অভাব নেই কুবোর। এখন দেখার বিষয়, রিয়ালের হয়ে কতদূর যেতে পারেন তিনি।