জার্মানদের হারিয়ে নেদারল্যান্ডসের প্রতিশোধ; বেলের গোলে জিতল ওয়েলস
আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ, লিড নেওয়া, হারানো, শেষের নাটক- সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসের ম্যাচগুলোতে কমতি ছিল না কোনও কিছুরই। ফুটবলে 'থ্রিলার'-এর দারুণ উদাহরণই হয়ে উঠেছে দুই দেশের সর্বশেষ ম্যাচগুলো। ভলক্সপার্কস্তাদিওনে গ্রুপ 'সি'-তে ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। নিজেদের মাঠে জার্মানদের কাছে ৩-২ গোলে হেরেছিল 'অরেঞ্জ'রা। এবার পিছিয়ে পড়েও শেষের নাটকে রক্ষণের পুরনো সমস্যায় জর্জরিত জার্মানদের ৪-২ গোলে হারিয়ে ঐ ম্যাচের প্রতিশোধই নিল ডাচরা। জার্মানি হেরে যাওয়ায় 'সি 'গ্রুপে ৪ ম্যাচে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে থাকল উত্তর আয়ারল্যান্ড। ডাচদের জয়ের রাতে ওয়েলসের ইউরো ২০২০-এ খেলার স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছেন গ্যারেথ বেল, তার গোলে আজারবাইজানকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে ওয়েলস। জয় পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম, রাশিয়াও।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জার্মান কোচ জোয়াকিম লোয়ের ট্যাকটিক্স হয়তো কিছুটা অপ্রত্যাশিতই ছিল এবার। পজেশন ধরে রেখে ছোট ছোট পাসে খেলা জার্মানরা ডাচদের বিপক্ষে খেলেছে প্রতি-আক্রমণে; প্রথমার্ধে মাত্র ৩৬ ভাগ পজেশন ছিল মার্কো রয়েসদের। কিন্তু লোয়ের ভিন্নধারার ট্যাকটিক্স ঠিকই কাজে দিয়েছে জার্মানদের। ৯ মিনিটে দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণে তরুণ মিডফিল্ডার লুকাস ক্লস্টারম্যানের শট ফিরিয়ে দেন ডাচ গোলরক্ষক জাসপার সিলিসেন; কিন্তু ফিরতি বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি ফরোয়ার্ড সার্জ গ্নাব্রি। জার্মানদের হয়ে রেকর্ডটা দুর্দান্ত বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ডের, ৯ ম্যাচে করলেন ৮ গোল। জার্মানদের লিডে তার ভুলের কথা বলছিলেন ধারাভাষ্যকারেরা। কিন্তু জয়ের জন্য ডাচ ফরোয়ার্ডরা বাহবা পেলেও খুব সম্ভবত ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টটি ছিল সিলিসেনেরই আরেক সেভ।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ঐ প্রতি-আক্রমণেই রয়েসের আগুনে শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন সিলিসেন। তার ঐ সেভে মাত্র এক গোলের ব্যবধানে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে কাজটা কিছুটা হলেও হয়তো সহজ হয়ে গিয়েছিল ডাচদের। সুযোগটা ঠিকই কাজে লাগায় ভ্যান ডাইকরা। তবে সিলিসেনের মত ম্যাচের মোড় ঘোরানোর দিকে কৃতিত্বের দাবিদার হয়তো আরও একজন। ৫৮ মিনিটে গোলের আশায় মার্টিন ডি রুনের বদলে ডাচদের হয়ে প্রথমবারের মত মাঠে নামেন ফরোয়ার্ড ডনইয়েল মালেন, ফলাফলটাও আসে হাতেনাতে। মালেনের তৈরি করা স্পেসে দিয়ে ঢুকে ডিবক্সে ক্রস করেন রায়ান বাবেল, বল দখলে এনে নয়্যারকে পরাস্ত করেন বার্সেলোনা মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং। মিনিট দশেক পর লিডও নেয় ডাচরা। ৬৬ মিনিটে ভ্যান ডাইককে নয়্যার দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি ক্রস ক্লিয়ার করতে যেয়ে নিজেদের জালে বল ঠেলে দেন জার্মান ডিফেন্ডার জোনাথন টাহ।
অবশ্য লিড খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ডাচদের। প্রথমার্ধে দুর্দান্ত এক গোল-লাইন ক্লিয়ারেন্সে জার্মানদের ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মাথিয়াস ডি লিট। কিন্তু ৭৩ মিনিটে ডিবক্সে বল তার হাতে লাগায় পেনাল্টি পায় লোয়ের দল, ১২ গজ থেকে সিলিসেনকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি ছয় মাস পর জার্মান দলে ফেরা টনি ক্রুস। কিন্তু শেষ হাসি হেসেছে ডাচরাই, ঐ প্রতি-আক্রমণেই কপাল পোড়ে জার্মানদের। ৭৯ মিনিটে জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডামের পাসে দুর্দান্ত এক ভলিতে দলকে লিড এনে দিয়ে অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখেন মালেন। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে মেমফিস ডিপায়ের পাসে জার্মানদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন ওয়াইনাল্ডাম; ফলাফল নির্ধারণী গোল, অ্যাসিস্ট দিয়ে যেন বার্সেলোনার বিপক্ষে অ্যানফিল্ড পারফরম্যান্সটাই মনে করিয়ে দিলেন লিভারপুল মিডফিল্ডার। ৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে 'সি' গ্রুপ টেবিলের দুই নম্বরে থাকল লোয়ের দল, এক ম্যাচ কম খেলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তিন-এ নেদারল্যান্ডস।
কার্ডিফে র্যাংকিংয়ে নিজেদের চেয়ে ৮৫ ধাপ নিচে থাকা আজারবাইজানকে হারাতে রীতিমত ঘাম ছুটে গেছে ওয়েলসের। ২৬ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে বেলের শট আজারবাইজান ডিফেন্ডার নাজারভের গায়ে লেগে হাওয়ায় ভাসতে থাকলে বল দখলে লাফিয়ে উঠেন গোলরক্ষক আগায়েভ। কিন্তু গোলরক্ষক বল দখলে আনার আগে ক্লিয়ার করতে যেয়ে আত্মঘাতী গোল করে বসেন পাশায়েভ। কিন্তু নির্বিষ ওয়েলশ আক্রমণের সুযোগ নিয়ে ৫৮ মিনিটে ওয়েন হেনেসির ভুলে সমতায় ফেরে আজারবাইজান। ৮৪ মিনিটে জো অ্যালেনের শট আগায়েভ ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি বল হেড করে জয় নিশ্চিত করেন বেল। ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে 'ই' গ্রুপ টেবিলের তিন-এ থাকল ওয়েলস।
রায়ান গিগসের দলের মত অবশ্য জয় পেতে এত ঝামেলা পোহাতে হয়নি বেলজিয়ামকে। ইউরো বাছাইপর্বে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে পেছনে থাকা সান মারিনোর বিপক্ষে দলকে ৪৩ মিনিটে পেনাল্টিতে গোল করে লিড এনে দেন মিচি বাতশুয়াই। ৫৭ মিনিটে নাসের চাদলির পাস থেকে মাপা নিচু শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দ্রিস মার্টেন্স। মিনিট ছয়েক পর ডিবক্সে বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন চাদলি নিজেই। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে হেডে গোল করে এডেন হ্যাজার্ড-রোমেলু লুকাকু ছাড়াও বড় জয় নিশ্চিত করেন বাতশুয়াই। 'আই' গ্রুপে ৫ ম্যাচে পূর্ণ ১৫ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে থাকল রবার্তো মার্টিনেজের দল।
'ই' গ্রুপের অন্য ম্যাচে স্লোভাকিয়াকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ক্রোয়াটদের জয়ের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত; শুধু প্রথমার্ধেই তিনবার বারপোস্টে লেগে ফিরে এসেছে তাদের প্রচেষ্টা। অবশেষে ৪৫ মিনিটে নিকোলা ভ্লাসিচের গোলে লিড নেয় দালিচের দল। মিনিটখানেক পর ডিবক্সের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দারুণ শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইভান পেরিসিচ। ৭২ মিনিটে গোলের সামনে থেকে আলতো টোকায় ব্যবধান ৩-০ করেন ব্রুনো পেতকোভিচ। ৮৯ মিনিটে মার্সেলো ব্রোজোভিচের ক্রসে হেড করে স্লোভাকদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন দেয়ান লভ্রেন। ৪ ম্যাচে হাঙ্গেরির সমান ৯ পয়েন্ট নিয়ে হেড টু হেডে পিছিয়ে থাকায় 'ই' গ্রুপ টেবিলের দুইয়ে থাকল লুকা মদ্রিচরা।