জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখল ইতালি, স্পেনের 'পারফেক্ট' রেকর্ড
আর্মেনিয়ার বিপক্ষে গত সপ্তাহের ম্যাচে আরেকটু হলেই বাছাইপর্বে টানা জয়ের রেকর্ড হাতছাড়া হতো তাদের৷ কিন্তু শেষদিকে গোলে জয় নিশ্চিত করেছিল ইতালিই। ফিনল্যান্ডের রেটিনা স্তাদিওনেও আজ আবারও সে একই আশঙ্কায় ভুগছিল 'আজ্জুরি'রা। টানা দ্বিতীয়বারের মত আবারও শেষের গোলে জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখল রবার্তো মানচিনির দল। 'জে' গ্রুপে ফিনল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ইতালি। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মত জয় পেয়েছে স্পেনও। 'এফ' গ্রুপে ফারো আইল্যান্ডকে ৪-০ গোলে হারিয়ে জয়ের 'পারফেক্ট' রেকর্ড ধরে রেখেছে তারা।
‘জে’ গ্রুপের শীর্ষ দুইয়ের লড়াইয়ের শুরুতেই ধাক্কা খায় ইতালি। ৮ মিনিটেই ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয় লেফটব্যাক এমারসন পালমিয়েরিকে, তার জায়গায় নামেন রোমার ফুলব্যাক আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জি। আর্মেনিয়া ম্যাচের পর দলে পাঁচ পরিবর্তন এনেছিলেন ইতালি কোচ রবার্তো মানচিনি; ‘আজ্জুরি’দের খেলায় বোঝাপড়ার অভাবটা ছিল স্পষ্ট। আগের ম্যাচে দারুণ খেলায় আজ শুরু থেকেই একাদশে ছিলেন ইন্টার মিলান মিডফিল্ডার সেনসি; মানচিনির দলের হয়ে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন তিনিই। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় দেশের হয়ে প্রথম গোল পাওয়া হয়নি সেনসির। ২৭ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে তার নেওয়া শট প্রতিহত হয় ফিনল্যান্ডের বারপোস্টে। ইতালির মতই বাছাইপর্বের আগের পাঁচ ম্যাচে মাত্র দুই গোল হজম করেছিল ফিনিশরা। স্বাগতিকদের ৫-৪-১ ফর্মেশন ভাঙ্গতে রীতিমত ঘাম ছুটে গিয়েছিল ইতালির; প্রথমার্ধে ১৫টি শট নিলেও গোলের দেখা আর পাওয়া হয়নি মানচিনির দলের।
আঁটসাঁট রক্ষণে ইতালির ফরোয়ার্ডদের দমিয়ে রাখা ফিনল্যান্ড আরেকটু হলেই লিড নিতে পারত দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। ৪৭ মিনিটে ‘আজ্জুরি’দের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ফিনিশ স্ট্রাইকার টিমু পুকির নেওয়া শট চলে যায় গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। আগের মৌসুমে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগ মাতানোর পর প্রিমিয়ার লিগেও দুর্দান্ত শুরু করেছেন পুকি; ক্লাব ফর্মটা ধরে রেখেছেন জাতীয় দলের হয়েও। পুকির প্রচেষ্টার পর জেগে উঠে ইতালি। অবশেষে ম্যাচের ঘণ্টাখানেকের মাথায় ঠিকই লিড নেয় তারা। ৫৯ মিনিটে ফিওরেন্তিনার ফরোয়ার্ড চিয়েসার লম্বা পাসে নিয়ন্ত্রনে এনে ডিবক্সে ক্রস করেন আরাৎজুরি। দুই ফিনিশ সেন্টারব্যাকের ওপর লাফিয়ে উঠে হেড করে দলকে লিড এনে দেন স্ট্রাইকার চিরো ইমোবিলে। তবে ইতালিয়ানদের কষ্টার্জিত লিড দীর্ঘস্থায়ী হয়নি খুব একটা।
পুরো ম্যাচে ইতালির রক্ষণভাগকে তটস্থ রেখেছিলেন তিনি। ৭০ মিনিটে আবারও তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ইতালির ডিবক্সে ঢুকে পড়েন পুকি। কিন্তু শট নেওয়ার ঠিক আগে তাকে ডিবক্সে ফেলে দেন সেনসি; পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ১২ গজ থেকে ইতালি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডনারুমাকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি পুকি। বাছাইপর্বে টানা জয়ের রেকর্ড ভাঙ্গার আশঙ্কায় তখন ইতালি। কিন্তু আর্মেনিয়া ম্যাচের মত এবারও শেষ হাসি হেসেছে তারাই।
৭৯ মিনিটে মিডফিল্ডার নিকোলো বারেলার শট ডিবক্সে ফিনিশ ডিফেন্ডার ভায়সানেনের হাতে লাগলে পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ফিনল্যান্ডের গোলরক্ষক রাকেদিকে পরাস্ত করেন চেলসি মিডফিল্ডার জর্জিনহো। লিড নেওয়ার মিনিট দুয়েক পরই ফিনল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিতে পারত ইতালি। কিন্তু ৮১ মিনিটে ফেদেরিকো বের্নার্দেস্কির মাইনাসে বদলি স্ট্রাইকার আন্দ্রেয়া বেলোত্তির শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন রাকেদি। শেষদিকে ম্যাচে ফেরার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছে ফিনল্যান্ড; কিন্তু লাভ আর হয়নি। ৬ ম্যাচে পূর্ণ ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ‘জে’ গ্রুপের শীর্ষেই থাকল ‘আজ্জুরি’রা। ১২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ফিনল্যান্ড।
ইতালির মত অবশ্য জয় পেতে এতটা ঘাম ঝড়াতে হয়নি স্পেনের। স্তাদিও মলিননে ‘এফ’ গ্রুপে ফারো আইল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ মিনিটেই লিড নেয় তারা। রদ্রির থ্রু পাসে ডিবক্সে বল পেয়ে যান মিকেল ওয়ারজাবাল, তার ক্রসে আলতো টোকায় ‘লা রোহা’দের এগিয়ে নেন ভ্যালেন্সিয়া স্ট্রাইকার রদ্রিগো মরেনো। তবে রদ্রিগো গোল নিয়ে আছে বিতর্ক; রিপ্লেতে দেখা গেছে, ওয়ারজাবালের পাসের সময় অফসাইডে ছিলেন তিনি। কিন্তু বাছাইপর্বে ‘ভিএআর’ ব্যবহৃত না হওয়ায় ধোপে টেকেনি ফারো আইল্যান্ড ফুটবলারদের প্রতিবাদ। লিড নেওয়ার পর কিছুটা গা বাঁচিয়েই খেলেছে স্পেন। সুযোগটা আরেকটু হলেই কাজে লাগাত ফারো আইল্যান্ড।
২৮ এবং ৩৮ মিনিটে তাদের দুটি প্রচেষ্টা দারুণভাবে রুখে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক ডেভিড ডি গেয়া। মাত্র এক গোলে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধে শেষ করলেও দ্বিতীয়ার্ধে আর স্প্যানিশদের আটকে রাখতে পারেনি ফারো আইল্যান্ড। ৫০ মিনিটে থিয়াগোর পাসে রদ্রিগোর শট ফারো আইল্যান্ড ডিফেন্ডার গ্রেগারসনের গায়ে লেগে জালে জড়ালে ব্যবধান দ্বিগুণ করে স্পেন। তবে তারপরও হাল ছাড়েনি ফারো আইল্যান্ড। উলটো ডি গেয়া না থাকলে দ্বিতীয়ার্ধে ঠিকই সমতায় ফিরতে পারত তারা। ৬২ মিনিটে তাকে একা পেয়ে গোল করতে পারেননি এরিকসেন। মিনিট দশেক পর আবারও ফারোদের খালি হাতে ফিরিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গোলরক্ষক।
রামোসকে কাটিয়ে ডিবক্সে তাকে একা পেয়েও গোল করা হয়নি জারতালিদের। এত সুযোগ পেয়েও সমতায় ফিরতে না পারার চড়া মাশুলই দিতে হয়েছে ফারো আইল্যান্ডকে। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামা পাকো আলকাসের ৮৯ মিনিটে থিয়াগো আলকান্তারার পাসে ডিবক্সে বল পেয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে লেফটব্যাক হোসে গায়ার ক্রসে হেড করে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন আলকাসের; স্পেনও পায় বড় জয়। ৬ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে থাকল রবার্তো মরেনোর দল। ৬ ম্যাচের ৬টিই হেরেছে ফারো আইল্যান্ড। স্পেনের হয়ে ইকার ক্যাসিয়াসের সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডে (১৬৭) ভাগ বসানোর রাতটা বড় জয় দিয়েই স্মরণীয় করে রাখলেন সার্জিও রামোস।