• " />

     

    প্রতিবন্ধকতাজয়ী এক বিস্ময়বালকের গল্প

    প্রতিবন্ধকতাজয়ী এক বিস্ময়বালকের গল্প    

    ছোট্ট ছেলেটি মস্তিষ্কে পক্ষাঘাতজনিত এক জটিল ব্যাধি ‘সেরেব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত। জন্মগত এই সমস্যার কারণে তাঁর পা দুটো আর দশজনের মতো স্বাভাবিক নয়। বাঁকা পা নিয়ে চলাফেরা করতে তাঁকে ব্যবহার করতে হয় হাঁটতে সহায়ক বিশেষ এক ধরণের ‘ওয়াকিং ফ্রেম’। ৮ বছর বয়সী এই ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী’ শিশু বেইলি ম্যাথিউস গত জুলাইয়ে সফলভাবে একটি ট্রায়াথলন (সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড়ের সমন্বিত একটি অ্যাথলেটিক ইভেন্ট) সম্পন্ন করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয় অনলাইন দুনিয়ায়।

     

     

    প্রতিবন্ধকতা জয় করে স্বপ্নপূরণের পথে প্রথম ধাপেই মিলে গেছে একটি সম্মানজনক স্বীকৃতিও। গতকাল বিবিসির ‘বর্ষসেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব’ শীর্ষক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এই শিশুর হাতে তুলে দেয়া হয় ‘হেলেন রোলাসন’ পুরস্কার। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা বিবিসির সাবেক এক উপস্থাপিকার নামে প্রবর্তিত এই সম্মাননা ‘সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে পাওয়া কোন অর্জন’-এর স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয়ে থাকে।

    ট্রায়াথলনের নিয়মানুযায়ী ১০০ মিটার সাঁতার, ৪ কিলোমিটার সাইক্লিং ও ১.৩ কিলোমিটার দৌড়ে অতিক্রম করতে হয়। নর্থ ইয়র্কশায়ারের ক্যাসেল হাওয়ার্ডে শিশুদের ইভেন্টে অংশ নিয়ে তিনটি পর্বই সাফল্যের সাথে উৎরে যায় ম্যাথিউস। দৌড় পর্বের শেষভাগে ‘ওয়াকিং এইড’ ছেড়ে দিয়েই এগোতে শুরু করে সে। শেষ কুড়ি মিটার কোন সহায়তা ছাড়াই পেরোতে গিয়ে দু’ বার হোঁচট খেয়ে পড়েও যেতে দেখা তাকে। তবে শেষ পর্যন্ত সফলভাবেই নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করতে সক্ষম হয় ম্যাথিউস। এই অংশের ভিডিওচিত্র অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে এটি প্রায় তিন কোটি বার দেখা হয়। শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আর শুভকামনাময় অগুনিত বার্তায় সিক্ত হয় ছোট্ট বেইলি।

     


    এহেন সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ গত রাতের অনুষ্ঠানে যখন ম্যাথিউস বাবাকে সাথে করে সম্মাননা গ্রহণে মঞ্চের দিকে এগোতে থাকে, তুমুল করতালি আর হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে বেলফাস্টের তারকাবহুল এসএসই অ্যারেনা। অলিম্পিক সাঁতারে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন বেকি অ্যাডলিংটন ও বিখ্যাত ব্যান্ড ‘ওয়ান ডিরেকশন’-এর গায়ক নায়াল হোরানের কাছ থেকে ক্রেস্ট গ্রহণ করে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ম্যাথিউসের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “আমার মনে হয় আপনারা এখন চিৎকার বন্ধ করতে পারেন!...খেলাধুলা সত্যি অসাধারণ।...সামনে আরও পাঁচটি ট্রায়াথলনে অংশ নিতে যাচ্ছি।”

     

     

    মা জুলির বয়ানে উঠে এসেছে ম্যাথিউসের সঙ্কল্পবদ্ধতার স্বরূপ, “ও সবসময়ই দারুণ প্রতিজ্ঞ। সে যদি কিছু একটা করতে চায় তবে সেটা করে দেখাবেই, হোক সেটা প্রচলিত পন্থায় তার জন্য অসম্ভব কিছু।”

    জীবনের বন্ধুর পথে বেইলির চলাটা সবে মাত্র শুরু। প্রাথমিক সাফল্যে এমন ইতিবাচক সাড়া নিশ্চিতভাবেই তাকে অনেক বেশী প্রেরণা যোগাবে। আর ম্যাথিউস নিজে তো বহু মানুষের প্রেরণা হয়ে উঠেছে ইতোমধ্যেই!