• " />

     

    যেমন গেলো ফুটবলের বছর

    যেমন গেলো ফুটবলের বছর    

    বিশ্বকাপের পরের বছরটা ফুটবলের জন্য ‘নিরামিষ’ যাবে- এমন ধারণা এই বছরের শুরুতে কেউ কেউ করে থাকতেই পারেন। তবে ঘটনা-দুর্ঘটনায় বিদায়ী বছরের ফুটবলে ‘আমিষ’-এর যে অভাব ছিল না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মাঠের খেলায় আলোকিত বেশ কিছু মুহূর্ত ফুটবলপ্রেমীদের নজর কেড়েছে, আবার জুরিখের ফিফা সদরদপ্তরের ‘অন্ধকার’ বছরের অনেকটা সময় কৌতূহল ধরে রেখেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের। নবীন ফুটবলারদের কেউ কেউ গোলের পর গোল দিয়ে জাল ছিঁড়েছেন, ওদিকে প্রবীণ ম্যানেজারদের অনেকে ‘ঘোল’ খেয়ে ডাগ-আউট ছেড়েছেন। বছরের বিদায়লগ্নে দাঁড়িয়ে ওসব ঘটনা-দুর্ঘটনার খণ্ডচিত্রই এক নজর ফিরে দেখা যাকঃ

     

    তাঁর হাসিতে বছর শুরু…

     

     

    টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফিফা বর্ষসেরার খেতাব ‘ব্যালন ডি অর’ জিতে বছরের শুরুটা শুভই করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ সেনসেশন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এরপর বছরের বাকি সময়টা তাঁর নিজের খুব খারাপ যায় নি। গোল পেয়েছেন মোটামুটি নিয়মিত, বিগত নয় বছরের মধ্যে অষ্টমবারের মতো পেয়েছেন ব্যালন ডি অরের চূড়ান্ত মনোনয়নও। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে এগারো গোল নিয়ে গড়েছেন নতুন রেকর্ড।

     

    তবুও আলো জ্বলে নি বার্নাব্যুতে

     

     

    রোনালদোর দল রিয়াল মাদ্রিদের জন্য ২০১৫ সালে অর্জনের খাতাটা শূন্যই থেকে গেছে। লা লিগার গত আসরে দ্বিতীয় স্থানই বছরের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরতে হয়েছিল সেমি-ফাইনাল থেকে। আর অবৈধভাবে খেলোয়াড় নামানোর দায়ে কোপা দেল রে থেকে বহিষ্কারাদেশে দুঃসময়ের ষোলকলাই পূর্ণ হয়েছে লস ব্ল্যাঙ্কোদের।

     

    এমএসএন-এ বর্ণিল বার্সেলোনা

     

     

    ন্যূ ক্যাম্পে উৎসবের আমেজটা লেগে ছিল বছরজুড়েই। কোপা দেল রে জিতে শুরু, অতঃপর লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও উয়েফা সুপার কাপের শিরোপা ঘরে নিয়ে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা বছরটা শেষ করেছেন ক্লাব ফুটবলে বিশ্বসেরার মুকুট মাথায় তুলে। মাঝে মাস দুয়েক মেসির অনুপস্থিতিতেও কাতালানদের জয়যাত্রা ধরে রেখেছেন নেইমার আর সুয়ারেজ। ব্যালন ডি অরের এ বছরের চূড়ান্ত মনোনয়নে মেসি-রোনালদোর সাথে আছেন নেইমারও।

     

    মেসির দুঃখ আকাশী নীল জার্সি

     

    ক্লাব ফুটবলে নিজেকে প্রতিনিয়ত উঠিয়ে চলেছেন নিত্যনতুন উচ্চতায়। কিন্তু বিধি যেন পণ করেছেন ‘আর্জেন্টিনা’র মেসিকে অসম্পূর্ণই রেখে দেবেন। গত বছর বিশ্বকাপ ট্রফিটার খুব কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে গেছেন।

     

     

    তাঁর নেতৃত্বে এ বছরের কোপা আমেরিকাতেও ফাইনালে উঠে গিয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু স্বাগতিক চিলির কাছে আরও একবার শিরোপার পাশ দিয়েই হেঁটে যেতে হল সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলারটিকে।

     

    ভার্ডি-লিস্টারের রূপকথা

     

    কি যাচ্ছেতাই ভাবেই না শুরু হয়েছিল বছরটা। এপ্রিলের শুরুতে দাঁড়িয়ে ২৯ ম্যাচ থেকে মাত্র ১৯ পয়েন্ট নিয়ে লিস্টার সিটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে পয়েন্ট টেবিলের একেবারে তলানিতে। এরপর যেন আচমকাই আলাদিনের চেরাগ পেয়ে বসলো ‘ফক্স’রা। শেষ নয় ম্যাচ থেকে সাত জয় নিয়ে ‘অবনমন’ তো এড়ালোই, লিগ শেষ করলো ‘সম্মানজনক’ ১৪তম অবস্থানে থেকে।

     

    ব্যাপারটা যে নেহায়েতই ‘ফ্লুক’ ছিল না সেটার প্রমাণ দলটা দিয়ে গেছে বছরের শেষ অব্দি। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮ ম্যাচ থেকে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরেই আছে লিস্টার সিটি। আর রীতিমতো গোলের মেশিন বানিয়ে একের পর এক পরাশক্তির জাল কাঁপিয়ে চলেছেন দলটির দুই স্ট্রাইকার জেমি ভার্ডি ও রিয়াদ মাহরেজ। এখনও পর্যন্ত ১৫টি গোল নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা ভার্ডি, মাহরেজের গোলসংখ্যা ১৩। ইপিএলে টানা ১১ ম্যাচে গোল করে নতুন রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন ভার্ডি।

     

     

    গত বড়দিনে রেলিগেশন এড়ানোর প্রার্থনায় মগ্ন থাকা দলটাই এবার প্রহর গুণছে প্রথম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার। মজার একটা তথ্য হচ্ছে, ইতিপূর্বে ক্রিসমাসে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দল এগারো বার জিতেছে ইপিএল। দ্বাদশ বারের মতো কি সেটার পুনরাবৃত্তি করতে পারবে ক্লদিও রানিয়েরির ছেলেরা?

     

    কোচবদলের বছর

     

     

    মাত্র সাত মাস আগেই চেলসিকে জিতিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা। কিন্তু পরের মৌসুমে বছরের শেষভাগে এসে রেলিগেশনের ঝুঁকিতে পড়ে যাওয়া দলটার ম্যানেজারের পদ ছাড়তে বাধ্য হন হোসে মরিনহো। এর আগে লিভারপুল থেকে বরখাস্ত হন ব্র্যান্ডান রজার্স, অ্যানফিল্ডের ডাগ আউটে জায়গা নেন সাবেক ডর্টমুন্ড বস ইয়ুর্গেন ক্লপ। চলতি মৌসুমের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদে কার্লো আনচেলত্তির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রাফায়েল বেনিতেজ।

     

     

    মৌসুম শেষে বায়ার্ন মিউনিখ ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন পেপ গার্দিওলা, তাঁকে পেতে অনেকটা উঠেপড়েই লেগেছে ইংলিশ ফুটবলের বড় ক্লাবগুলো। কাতালান কোচকে দলে ভেড়াবার দৌড়ে এগিয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি থেকে সরে যেতে হবে ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনিকে। ওদিকে ইউনাইটেডের ডাগ আউট থেকে ভ্যান গালের বিদায়টা সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করা হচ্ছে।

     

    জুরিখে জটিলতা

     

     

    বছরের মাঝামাঝিতে জুরিখের এক হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ফিফার সাতজন কর্মকর্তাকে। ওই ঘটনার দু’দিন বাদেই ফিফা সভাপতি হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন সতেরো বছর ধরে দায়িত্বটি আঁকড়ে থাকা সেপ ব্ল্যাটার। এরও দু’ দিন বাদে তাঁর তরফে আসে পদত্যাগের ঘোষণা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের ভেন্যু নির্বাচনে দুর্নীতি আর অবৈধ অর্থ লেনদেনের। ব্ল্যাটারের পর যার ফিফার নেতৃত্ব দেয়ার জোর সম্ভাবনা, সেই মিশেল প্লাতিনিও জড়িয়ে যান দুর্নীতির অভিযোগে। বছরের শেষে এসে দু’ জনেই পেয়েছেন সব ধরণের ফুটবল কর্মকাণ্ডে আট বছরের নিষেধাজ্ঞা।

     

    এক নজরে ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক ফুটবলে আরও কিছু ঘটনাঃ

     

    • বছর শেষে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দলটা কোন বিশ্বকাপজয়ী দেশ নয়, বেলজিয়াম; প্রায় একশ’ বছর আগের একটি অলিম্পিক সোনা ফুটবলের যাঁদের আজ অব্দি একমাত্র সম্বল

    • এ অঞ্চলে যোগ দেয়ার পর প্রথমবারের মতো এশীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব নিজেদের করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া

    • কোপা আমেরিকায় নিজেদের প্রথম শিরোপাটা ঘরের মাঠেই জিতেছে চিলি

    • ভলফসবুর্গের বিপক্ষে মাত্র ৯ মিনিটে ৫ গোল করে নতুন রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন বায়ার্নের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডভস্কি

    • মাত্র পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচে পাঁচ গোল করেন ম্যানচেষ্টার সিটির সার্জিও আগুয়েরো, ২৬ গোল নিয়ে গত মৌসুমের ইপিএলে গোল্ডেন বুটটাও যায় এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের দখলে।