• ইউরো বাছাইপর্ব
  • " />

     

    দারুণ প্রত্যাবর্তনে আইরিশ অঘটন এড়াল নেদারল্যান্ডস

    দারুণ প্রত্যাবর্তনে আইরিশ অঘটন এড়াল নেদারল্যান্ডস    

    ম্যাচের মাত্র ১৫ মিনিট বাকি তখন। গোল করে উদযাপনে ব্যস্ত ম্যাকগিনেস, দে কিপ স্টেডিয়ামে নীরব নেদারল্যান্ডস সমর্থকদের বিপরীতে আত্মহারা উত্তর আয়ারল্যান্ডের সমর্থকেরা। শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে কোচ রনাল্ড কোম্যান, হতাশ জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডামরাও। তখনই সতীর্থদের মাঝে জাল থেকে বল কুড়িয়ে সেন্টারের দিকে চলে আসলেন মেমফিস ডি পাই। বল রাখলেন মাঝে, হাততালি দিয়ে সতীর্থদের অনুপ্রেরণা জানালেন। ডিপাইয়ের অনুপ্রেরণায় যেন জ্বলে উঠল ডাচরা, পরের ১৫ মিনিটে রচনা করল ইউরো ২০২০ বাছাইপর্বের অন্যতম সেরা কামব্যাকের গল্প। নায়কের চরিত্রে থাকলেন ডিপাই-ই, তার জোড়া গোলে নিজেদের মাঠে পিছিয়ে পড়েও ‘সি’ গ্রুপে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস, উঠে গেছে গ্রুপের শীর্ষে।

    ফেইনুর্দের দে কিপ স্টেডিয়ামে দলকে ম্যাচের শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলাচ্ছিলেন উত্তর আয়ারল্যান্ড কোচ মাইকেল ও’নিল। প্রথমার্ধে ৫-৪-১ ফর্মেশনে ডাচ আক্রমণভাগকে দমিয়েই রেখেছিলেন তারা। মাঝমাঠ থেকে ছোট ছোট পাসে, বা উইং থেকে ক্রসে- কোনওভাবেই আইরিশ রক্ষণভাগকে পরীক্ষায় ফেলতে পারছিলেন না ডিপাই-বাবেলরা। ম্যাচের প্রথম সু্যোগের জন্য ২৬ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে রনাল্ড কোম্যানের দলকে। রায়ান বাবেলের মাইনাস থেকে জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডামের শট দক্ষহাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন আইরিশ গোলরক্ষক পিকক-ফেরেল। প্রথমার্ধে গোলে ঐ একবারই শট নিতে পেরেছিল ডাচরা।

     

    ম্যাকগেনেসের অঘটনের স্বপ্ন দেখানো গোল

     

    হতাশাজনক এক প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও আয়ারল্যান্ডের রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছিল ডিপাইদের। গোলের আশায় ৬৬ মিনিটে ডনি ভ্যান ডি বিক এবং ডনিয়েল মালানকে নামিয়ে দেন কোম্যান। আক্রমণে কিছুটা রং ফিরে পায় ডাচরা। নামার মিনিট দশেকের মধ্যেই গোলের দুটি দারুণ সুযোগ তৈরি করেন ডি বিক। ৬৮ মিনিটে তার ক্রস থেকে স্টিভেন বার্গউইনের ভলি চলে যায় আইরিশ গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। মিনিট চারেক পর আবারও গোলের সুযোগ তৈরি করেন ডি বিক, কিন্তু তার চমৎকার পাস থেকে ওয়াইনাল্ডামের শট দুর্দান্ত ব্লকে ফিরিয়ে দেন স্মিথ। গোলের সুযোগ তৈরি করেও ডাচদের লিড নিতে না পারার চড়া মাশুলই দিতে হয় ৭৫ মিনিটে।

    অবশ্য এজন্য নিজেদেরই দুষতে পারেন কোম্যান। মাথিয়াস ডি লিট এবং দালি ব্লিন্দের ভুলে ডানপ্রান্তে বল পেয়ে যান ডালাস, তার ক্রসে দুর্দান্ত এক হেডে দলকে এগিয়ে নেন ম্যাকগেনিস। দে কিপ স্টেডিয়ামে তখন অঘটনের আশঙ্কা জেঁকে ধরেছে ডাচদের। তবে ম্যাচে নাটক তখন কেবল শুরু। ম্যাচে ফিরতে মাত্র পাঁচ মিনিত সময় নিল নেদারল্যান্ডস। এক বদলি ডি বিক খেলায় এনেছিলেন আক্রমণের ধার, আরেক বদলি মালেন পথ দেখালেন সমতার। ৮০ মিনিটে তার ক্রসে দুর্দান্ত ফিনিশে পিকক-ফেরেলকে পরাস্ত করেন ডিপাই। দে কিপ স্টেডিয়ামে তখন স্বস্তির ছাপ ডাচ সমর্থক এবং কোম্যানের মুখে, কিন্তু কাজ তখনও শেষ হয়নি। সেটা ভালভাবেই জানতেন ডাচ ফুটবলাররা, গোলের সাথে সাথেই উদযাপনের বদলে বল নিয়ে সেন্টারের দিকে ছুটে এসেছেন ডিপাই। মিনিট দশেক পর কামব্যাক নিশ্চিত করে নেদারল্যান্ডস।

     

    কামব্যাক কমপ্লিট!

     

    ৯০ মিনিটে বার্গউইনের ক্রসে ভলি করেন লুক ডি ইয়ং, প্রথমবার ঠিকমত শট নিতে না পারলেও ফিরতি বল আসে তার পায়েই। এবার আর ভুল করেননি তিনি, আলতো টোকায় দলকে এনে দিয়েছেন লিড। এতক্ষণ অঘটনের স্বপ্নে বিভোর উত্তর আয়ারল্যান্ড তখন ম্যাচে বাঁচাতে ছুটছে হন্যে হয়ে, এই সুযোগে দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে তাদের কফিনে শেষ পেরেকটাও ঠুকে দেন ডিপাই। প্রতি-আক্রমণে ডি ইয়ংয়ের পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করে জয় নিশ্চিত করেন লিঁও ফরোয়ার্ড। জয় নিশ্চিত করা গোলের পর তার বাধভাঙা উল্লাসই বলে দিচ্ছিল, অঘটন এড়িয়ে ঠিক কতটা স্বস্তি পেয়েছে ডাচরা। ৫ ম্যাচ শেষে জার্মানির সমান ১২ পয়েন্ট হলেও হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় 'সি' গ্রুপের শীর্ষে উঠে গেল কোম্যানের দল।

    নেদারল্যান্ডের মত অবশ্য জয়ের জন্য এত কাঠখড় পোড়াতে হয়নি ক্রোয়েশিয়াকে। নিজেদের মাঠে ম্যাচের ৫ মিনিটেই ইভান পেরিসিচের পাস থেকে লুকা মদ্রিচের গোলে লিড নেয় তারা। ২৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ব্রুনো পেতকোভিচ, আন্তে রেবিচের পাস থেকে বাঁ-পায়ের শটে গোল করেন তিনি। ৪৩ মিনিটে আবারও পেতকোভিচের গোলেই জয় নিশ্চিত করে ক্রোয়েশিয়া। ৫৫ মিনিটে পেরিসিচ পেনাল্টি মিস করলে হয়তো আরও বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত দালিচের দল। ৩-০ গোলের জয়ে ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষে উঠে গেল মদ্রিচরা, মার্চে হাঙ্গেরির কাছে হারের প্রতিশোধটাও নিল তারা।

     


    এক সপ্তাহে দুই গোল। আবারও স্বরূপে লুকা মদ্রিচ

     

    ‘ই’ গ্রুপের অন্য খেলায় স্লোভাকিয়ার সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে ওয়েলস। ২৫ মিনিটে ড্যানিয়েল জেমসের পাস থেকে দলকে লিড এনে দেন কিফলার মোর। ৫৩ মিনিটে জুরাজ কুচকার গোলে সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা। শেষদিকে স্লোভাকিয়ার নর্বার্ট গিওম্বার লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেও লিড পুনরুদ্ধার করতে পারেনি রায়ান গিগসের দল। ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে উঠে গেল স্লোভাকিয়া, ১ ম্যাচ কম খেলে ৭ পয়েন্ট নিয়ে চার-এ নেমে গেল ওয়েলস। 

    তবে রাতের সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে বেলজিয়াম। সান মারিনোকে ৯-০ গোলে হারিয়েছে তারা। বিশাল ব্যবধানে জিতলেও লিড নিতে ২৯ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাদের। ইয়ুরি তিয়েলেম্যান্সের পাস থেকে দলকে লিড এনে দেন রোমেলু লুকাকু। এরপর থেকেই শুরু হয় বেলজিয়ানদের গোল উৎসব। ৩৪ মিনিটে লুকাকুর পাস থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নাসের চাদলি। ৩৬ মিনিটে আত্মঘাতী গোল করে বসেন সান মারিনোর ব্রোলি। ৪১ মিনিটে এডেন হ্যাজার্ডের পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন লুকাকু। প্রথমার্ধের শেষদিকে আবারও আত্মঘাতী গোল, এবার নিজেদের জালে বল ঠেলে দেন গ্রান্দোনি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে হ্যাজার্ডের পাস থেকে গোল করেন তিয়েলেম্যান্স।

     

    লুকাকুর জোড়া গোলের উল্লাস

     

    দুর্দান্ত প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গা বাঁচিয়েই খেলেছে রবার্তো মার্টিনেজের দল, কিন্তু তারপরও আরও তিন বার সান মারিনোর জালে বল পাঠিয়েছে তারা। ৭৭ মিনিটে বদলি হয়ে নামার মিনিট দুয়েক পরই গোল করেন ক্রিশ্চিয়ান বেন্টেকে। ৮৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন ইয়ারি ভার্শ্চায়রেন। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে গোল করেন তিমোথি কাস্তাহেন। ৭ ম্যাচে পূর্ণ ২১ পয়েন্ট নিয়ে ‘আই’ গ্রুপের শীর্ষে আছে বেলজিয়াম, প্রথম দল হিসেবে নিশ্চিত করেছে ইউরো ২০২০-এড় টিকেট। একই গ্রুপের অন্যান্য খেলায় স্কটল্যান্ডকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে রাশিয়া, ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে দুইয়ে। কাজাখস্তানকে ২-১ গোলে হারিয়ে তিন-এ উঠে এসেছে সাইপ্রাস। 

    রাতের অন্যান্য খেলায় ‘জি’ গ্রুপে ইসরায়েলকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে অস্ট্রিয়া। তবে খুব সম্ভবত রাতের সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছে উত্তর মেসিডোনিয়া, স্লোভেনিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে তারা। লাটভিয়াকে তাদেরই মাঠে রবার্ট লেভানডফস্কির হ্যাটট্রিকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে পোল্যান্ড। ‘জি’ গ্রুপে ৭ ম্যাচ শেষে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে পোলিশরা, ১৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অস্ট্রিয়া।