• ইউরো বাছাইপর্ব
  • " />

     

    দশজন নিয়েও এস্তোনিয়ার মাঠে জার্মানির সহজ জয়; ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দিল ওয়েলস

    দশজন নিয়েও এস্তোনিয়ার মাঠে জার্মানির সহজ জয়; ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দিল ওয়েলস    

    গত জুনে ইউরো ২০২০ বাছাইপর্বে নিজেদের মাঠে এস্তোনিয়াকে ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল জার্মানি। এস্তোনিয়ানদের মাঠেও ফেভারিট ছিল সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরাই, কিন্তু এমরে চানের লাল কার্ড এবং গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর পয়েন্ট হাতছাড়ার আশঙ্কা হয়তো জেঁকে বসেছিল জোয়াকিম লোয়ের দলকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সহজ জয়ই পেয়েছে জার্মানরা; দারুণ এক দ্বিতীয়ার্ধের পর ৩-০ গোলে ‘সি’ গ্রুপের তলানীর দলকে হারিয়েছে জার্মানি। রাতের অন্য খেলায় ‘ই’ গ্রুপে গ্যারেথ বেলের গোলে ক্রোয়েশিয়াকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছে ওয়েলস।

    আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের আগে লো ঘোষণা দিয়েছিলেন; বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানকে ‘আলবিসেলেস্তে’ এবং ম্যানুয়েল নয়্যারকে এস্তোনিয়ার বিপক্ষে খেলাবেন তিনি। কথা রেখেছেন লো; এস্তোনিয়ার মাঠে জার্মানির একাদশে ফিরেছিলেন নয়্যার। ম্যাচের শুরু থেকেই ‘বাস পার্ক’ ট্যাকটিক্স অনুসরণ করা এস্তোনিয়ার রক্ষণভাগকে ভাঙতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল জার্মানদের। পুরো ম্যাচেই প্রতি-আক্রমণে খেলেছে এস্তোনিয়া, তবে ম্যাচের ১২ মিনিটে আরেকটু হলেই তাদের গোল করার এক চমৎকার সুযোগই উপহার দিয়েছিলেন চান। এস্তোনিয়া গোল করতে পারেনি, তবে চানও পার পাননি।

     

    লিড নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত গুন্ডোয়ান এবং কিমিচ

     

    তার ভুল পাসে নয়্যারকে একা পেয়ে যান এস্তোনিয়া ফরোয়ার্ড পিক; কিন্তু ‘লাস্ট ম্যান ট্যাকেল’-এ তাকে ডিবক্সের বাইরে ফাউল করে বসেন জুভেন্টাস মিডফিল্ডার। চানকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান রেফারি, জার্মানিও প্রতিবাদ করেনি খুব একটা। ফ্রিকিকে গোল করতে না পারলেও মিনিট পাঁচেক পর লিড নেওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল এস্তোনিয়ানরা। কিন্তু ১৮ মিনিটে ভাসিলেভের কর্নারে গোলের একেবারে সামনে থেকেও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ট্যাম।

    দশজন নিয়ে প্রথমার্ধে প্রত্যাশিত আক্রমণ করতে পারেনি জার্মানরা, ট্যামের ঐ প্রচেষ্টার পর নয়্যারদের তেমন পরীক্ষায়ও ফেলতে পারেনি এস্তোনিয়া। ৪০ মিনিটে ভাগ্য সহায় হলে লিড নিতে পারত জার্মানি; কিন্তু প্রায় ২৫ গজ থেকে মার্কো রয়েসের দুর্দান্ত বাঁকানো ফ্রিকিক প্রতিহত হয় ক্রসবারে। প্রথমার্ধে দশজনের জার্মানির বিপক্ষে লিড নিতে না পারার চড়ামাশুল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দিতে হয়েছে এস্তোনিয়াকে। ৫১ মিনিটে কাই হাভের্টসের থ্রু পাস ক্লিয়ার করতে ভুল করে এস্তোনিয়া ডিফেন্স, ডিবক্সের বাইরে বল পেয়ে জোরাল শটে গোল করেন ইলকে গুন্ডোয়ান। লিড নিয়েই আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় জার্মানি, ব্যবধানও দ্বিগুণ করে মিনিট ছয়েক পরই।

     

    বদলি হিসেবে নেমেই গোলের পর উদযাপনে ব্যস্ত ভার্নার

     

    ৫৭ মিনিটে রয়েসের দুর্দান্ত ব্যাকহিলে ডিবক্সে বল পেয়ে নিজের এবং জার্মানির দ্বিতীয় গোল করেন গুন্ডোয়ান। এই গোলের পরই মূলত ম্যাচে ফেরার ক্ষীণ সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায় এস্তোনিয়ার। ম্যাচের বাকি সময় তেমন আক্রমণও করেনি তারা। জয় নিশ্চিত দেখেও গা বাঁচিয়ে খেলেনি জার্মানি, রাইটব্যাক ওয়াল্ডটশ্মিটের বদলে স্ট্রাইকার টিমো ভার্নারকে নামিয়ে দেন লো। লাইপজিগ স্ট্রাইকার কোচের আস্থার প্রতিদান দেন মিনিট তিনেক পরই।

    ৭১ মিনিটে গুন্ডোয়ানের পাসে বাঁ-প্রান্ত থেকে ডিবক্সে এস্তোনিয়ার এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন ভার্নার। শেষদিকে গোলের আরও অন্তত দুটি সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু দু’বারই এস্তোনিয়া গোলরক্ষক লেপমেটস ফিরিয়ে দিয়েছেন তাকে। শেষ পর্যন্ত সহজ জয়ে ‘সি’ গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখল জার্মানি। ৬ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের সমান ১৫ পয়েন্ট তাদের, গোল ব্যবধানও বেশি। কিন্তু হেড টু হেডে বেশি গোল হজম করায় দুইয়েই থাকতে হচ্ছে ‘ডি ম্যানশ্যাফট’দের।

     

    ওয়েলসের ত্রাণকর্তা...আবারও!

     

    কার্ডিফ স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৯ মিনিটেই লিড নেয় ক্রোয়েশিয়া। ওয়েলশ রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে যান পেতকোভিচ, তার পাস থেকে ওয়েন হেনেসিকে পরাস্ত করেন ভ্লাসিচ। মিনিট চারেক পর ব্যবধান দ্বিগুণের সুযোগ পেয়েছিলেন ইভান পেরিসিচ, কিন্তু হেনেসির দুর্দান্ত সেভে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাকে। প্রথমার্ধে নিশ্চিত গোলের আরও অন্তত দুটি সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়াটরা; কিন্তু হেনেসি ছিলেন দুর্দান্ত। ক্রোয়াটদের লিড বাড়াতে না পারার সুবাদে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সমতায় ফেরে ওয়েলস।

    বেন ডেভিসের ডিফেন্সচেরা থ্রু পাসে দেয়ান লভ্রেনকে কাটিয়ে ওয়েলসকে সমতায় ফেরান গ্যারেথ বেল। প্রথমার্ধের এন্ড টু এন্ড খেলা দ্বিতীয়ার্ধের রঙ হারিয়েছে দু'দলের ফুটবলারদের হাতাহাতিতে। পুরো ম্যাচে ৮বার হলুদ কার্ড দেখাতে হয়েছে রেফারিকে, ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জও কম হয়নি। শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দু'দলকে। 'ই' গ্রুপে ৭ ম্যাচ শেষে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকল ক্রোয়েশিয়া; এক ম্যাচ কম খেলে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ওয়েলসের থাকল চার-এ। 

    পয়েন্ট হারানোয় ওয়েলস-ক্রোয়েশিয়ার হতাশ হলেও দুশ্চিন্তা হয়তো বাড়বে রিয়াল মাদ্রিদের। জিনেদিন জিদানের দলের দুই স্তম্ভ লুকা মদ্রিচ এবং বেল পড়েছেন ইনজুরিতে। ম্যাচের শেষদিকে হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে মদ্রিচকে, কাফের পুরনো ইনজুরি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বেলের। কিন্তু ওয়েলস তিনজন বদলি ফুটবলার নামিয়ে দেওয়ায় খূঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই ম্যাচ শেষ করতে হয়েছে তাকে। সপ্তাহ দুয়েক বাদেই এল ক্লাসিকো, এত কম সময়ে কি সেরে উঠতে পারবেন তারা?