• ইউরো বাছাইপর্ব
  • " />

     

    'সিআর৭০০'-এর রাতে পর্তুগালকে হারিয়ে দিল ইউক্রেন

    'সিআর৭০০'-এর রাতে পর্তুগালকে হারিয়ে দিল ইউক্রেন    

    আগের ম্যাচে লুক্সেমবার্গের বিপক্ষেই একাধিক সুযোগ পেয়েছিলেন মাইলফলকটি স্পর্শ করার; কিন্তু গোলমুখে ব্যর্থতায় আটকে যেতে হয়েছিল ৬৯৯-এ। ইউক্রেনের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ক্যারিয়ারের ৭০০তম গোলের দেখা ঠিকই পেলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো; কিন্তু শেষ হাসিটা আর হাসতে পারেননি পর্তুগালকে নিয়ে। ইউরো ২০২০ বাছাইপর্বের ‘বি ‘ গ্রুপের ম্যাচে ইউক্রেনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইয়ারেমচুক এবং ইয়ারমোলেঙ্কোর জোড়া গোলে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আন্দ্রেই শেভচেঙ্কোর দল। বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে ইউরো ২০২০-এর টিকেট নিশ্চিত করল ইউক্রেন। 

    ইউক্রেনের বিপক্ষে একাদশে দুই পরিবর্তন এনেছিলেন পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে আগের ম্যাচে নিজেকে একেবারেই মেলে ধরতে পারেননি হোয়াও ফেলিক্স, তার বদলি হিসেবে নেমে গোল করেছিলেন গঞ্জালো গুইদেস। ইউক্রেনিয়ানদের বিপক্ষে ফেলিক্সের বদলে নেমেছিলেন গুইদেস, আর ব্রুনো ফার্নান্দেজের বদলে নেমেছিলেন হোয়াও মারিও।

    ইউক্রেনিয়ানদের বিপক্ষে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিছিয়ে পড়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। ৬ মিনিটে মার্লোসের কর্নারে ক্রিভস্তভের হেড দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন পর্তুগিজ গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও; কিন্তু ফিরতি বল গোলের একেবারে সামনে থেকে জালে পাঠাতে ভুল করেননি ইয়ারেমচুক। জিতলেই নিশ্চিত হবে মূলপর্ব- এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নামার ম্যাচে শুরুতেই লিড নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে ইউক্রেন।

     

    ছবি কথা বলে...

     

    দলের ফুটবলারদের মত উল্লাসে মেতে ওঠেন ইউক্রেন কোচ আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো। লিড নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ইউক্রেন পর্তুগিজ রক্ষণভাগকে চেপে ধরে আরও। ইয়ারমোলেঙ্কোরা পেপে-দিয়াজদের তটস্থ রাখলেও রোনালদো-গুইদেসরা প্রথমার্ধে গোলের সুযোগই তৈরি করতে পারেননি। পুরো প্রথমার্ধে ইউক্রেনের গোলে মাত্র একবার শট নিতে পেরেছিল সান্তোসের দল।

    নখদন্তহীন পর্তুগিজ আক্রমণের বিপরীতে লিড দ্বিগুণও করে ফেলে ইউক্রেন। ২৭ মিনিটে লেফটব্যাক মাইকোলেঙ্কোর ক্রসে দুই সেন্টার ব্যাক পেপে এবং দিয়াজের ফাঁক গলে প্যাট্রিসিওকে পরাস্ত করেন আন্দ্রেই ইয়ারমোলেঙ্কো। শেভচেঙ্কো পরবর্তী যুগে কেন তাকে ইউক্রেনিয়ান ফুটবলের পোস্টারবয় বলা, সেটা যেন আবারও প্রমাণ করলেন তিনি।

    দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার মিনিট দুয়েক পরই প্রথমার্ধে ম্যাচে ফেরার একমাত্র সুযোগ পেয়েছিল পর্তুগাল। কিন্তু রাইটব্যাক নেলসন সেমেদোর ক্রসে তার শট দক্ষহাতে ফিরিয়ে দেন আন্দ্রেই পিয়াতভ। আক্রমণভাগের দূর্বল পারফরম্যান্সের পর গোলের আশায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গুইদেসের বদলে ফেলিক্সকে নামিয়ে দেন সান্তোস। ৫১ মিনিটে আরেকটু হলেই দলকে ম্যাচে ফেরার পথ দেখিয়ে দিতে পারতেন তিনি। চমৎকার ড্রিবলে ইউক্রেনের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে রোনালদোকে পাস বাড়িয়েছিলেন ফেলিক্স, কিন্তু পর্তুগিজ অধিনায়কের আগুনে শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন পিয়াতভ। দ্বিতীয়ার্ধে সময়ের সাথে ম্যাচে ফিরতে থাকে পর্তুগাল; ব্রুমা-ব্রুনো ফার্নান্দেজরা বদলি হিসেবে নেমে মাঝমাঠের দখলটা নিজেদের করে নেন।

     

    ইউরো যাত্রা নিশ্চিতের উল্লাস!

     

    কিন্তু ইউরো ২০২০ মূলপর্বের টিকেট নিশ্চিত থেকে ৪৫ মিনিট দূরে থাকা ইউক্রেনের রক্ষণভাগকে কোনোভাবেই ভেদ করতে পারছিল না পর্তুগাল। তবে ৭১ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায় পর্তুগাল; অবশ্য সুযোগটা এসেছে ইউক্রেন রক্ষণের ভুলেই। ডিবক্সে রোনালদোর শট ঠেকাতে হাত ব্যবহার করেন স্টেপানেঙ্কো; পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও আবার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ইউক্রেন পরিণত হয় দশ জনের দলে। পেনাল্টি পেয়ে ভুল করেননি রোনালদো, সফল স্পট কিকে ক্যারিয়ারে ৭০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন রোনালদো।

    ম্যাচে ফেরার পর ৭৫ মিনিটেই আবারও গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন রোনালদো; কিন্তু আবারও তাকে রুখে দেন গোলরক্ষক পিয়াতভ। ম্যাচের শেষদিকে ৫-৪-১ ফর্মেশনে খেলেছে ইউক্রেন। মাঝমাঠ থেকে ছোট ছোট পাসে আক্রমণ গড়া সম্ভব হয়নি পর্তুগালের; শেষ ১৫ মিনিট দূরপাল্লার শট এবং সেটপিস থেকে ক্রসেই নির্ভর করতে হয়েছে তাদের। ৮৪ মিনিটে এমনই এক ক্রসে আবারও গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল সান্তোসের দল; কিন্তু রুবেন দিয়াজের হেড পিয়াতভকে ফাঁকি দিলেও প্রতিহত হয় বারপোস্টে।

    তবে ম্যাচের আসল নাটক বাকি ছিল দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে। কিন্তু রোনালদো নন; এবারের চিত্রনাট্যের নায়ক সেই পিয়াতভ।৯০ মিনিটে সেমেদোর ক্রস থেকে রোনালদোর ‘ট্রেডমার্ক’ হেডে রীতিমত অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন বর্ষীয়ান গোলরক্ষক।

    দুর্দান্ত এক সেভের পর রোনালদোর মত অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন শেভচেঙ্কোও; তবে দুজনের অভিব্যক্তিতে পার্থক্য আকাশ পাতাল। পিয়াতভের দুর্দান্ত সব সেভের মত ভাগ্যও ছিল ইউক্রেনের পক্ষেই। যোগ করা সময়ে শেষ মিনিটে পিয়াতভকে কাটিয়ে ফাঁকা গোল পেয়েও দানিলোর শট ফিরে এসেছে ক্রসবারে লেগে; ফিরতি বল গোলের মাত্র গজ ছয়েক দূর থেকে জালে পাঠাতে পারেননি পেপে। ম্যাচ শেষে রোনালদোদের হতাশা ধামাচাপা পড়ে যায় ইউক্রেন সমর্থক এবং স্কোয়াডের উদযাপনে। ৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থাকল পর্তুগাল; ১০ পয়েন্ট নিয়ে তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে সার্বিয়া।