অন্তিম মুহূর্তের গোলেই ইউরো মূলপর্ব নিশ্চিত করল স্পেন
নরওয়ের বিপক্ষে অন্তিম মুহূর্তের পেনাল্টিতে জয় হাতছাড়া হয়েছিল স্পেনের। ইতালি এবং বেলজিয়ামের পর একমাত্র দল হিসেবে ইউরো বাছাইপর্বের সব ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটাও হারাতে হয়েছিল তাদের। সুইডেনের মাঠ ফ্রেন্ডস অ্যারেনাতে ম্যাচের দুই মিনিট বাকি থাকতেও নিশ্চিত হার চোখ রাঙ্গাচ্ছিল স্পেনকে। আগের ম্যাচে শেষদিকের গোলে হতাশ হওয়া স্পেন ইউরো ২০২০ যাত্রা নিশ্চিত করল সেই অন্তিম মুহূর্তের গোলেই। বদলি ফরোয়ার্ড রদ্রিগো মরেনোর গোলে সুইডিশদের সাথে ১-১ গোলে ড্র করে ‘এফ’ গ্রুপ থেকে সবার আগে ইউরোর টিকেট নিশ্চিত করল ‘লা রোহা’রা।
ড্র করলেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট থেকেই সুইডেন থেকে ফিরতে পারত স্পেন। ৭ মিনিটেই ডিবক্সে সুইডিশ গোলরক্ষক রবিন ওলসেনকে কাটিয়েও শট নিতে দেরি করায় শেষ পর্যন্ত গোল করতে পারেননি থিয়াগো আলকান্তারা। মিনিট চারেক পর আবারও গোলের সুযোগ পেয়েছিল স্পেন; কিন্তু এবারও স্প্যানিশদের ফিরিয়ে দেন ওলসেন। ১১ মিনিটে রদ্রির শট ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’ রেঞ্জ থেকে ফিরিয়ে দেন রোমা গোলরক্ষক। স্প্যানিশদের আক্রমণাত্মক ফুটবলের বিপরীতে ৪-৪-২ বদলে ৪-৫-১ ফর্মেশনে খেলতে থাকে সুইডেন। প্রথমার্ধে অবশ্য কাজও হয়েছে তাতে; বাকিটা সময় মাঝমাঠের দখল নিতেই ব্যস্ত ছিল রবার্তো মোরেনোর দল।
বার্গের গোল উদযাপন করছেন সুইডিশ ফুটবলাররা
নতুন ফর্মেশনে গোলের সুযোগও তৈরি করতে থাকে সুইডেন, কিন্তু ওলসেনের মত দুর্দান্ত ছিলেন ডেভিড ডি গেয়াও। ৩২ মিনিটে রাইটব্যাক মিকেল লুস্টিগের ক্রসে রবিন কোয়াসিনের হেড অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও সুইডিশদের খালি হাতে ফেরাতে পারেননি ডি গেয়া। ৫০ মিনিটে কোয়াসিনের ক্রসে বার্গের হেড দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন তিনি; ফিরতি বলে গোলের মাত্র দুই গজ থেকেও এমিল ফর্সবার্গের ভলিও বাঁচিয়ে দেন ডি গেয়া। কিন্তু ভাগ্য যেন সুইডিশদের পক্ষেই ছিল; ফর্সবার্গের ভলির পর গোলের একেবারে সামনে থেকে অবশেষে ডি গেয়াকে পরাস্ত করেন বার্গ।
নিজেদের শেষ চার অ্যাওয়ে ম্যাচের কোনওটিতেই ক্লিনশিট রাখতে পারেনি মরেনোর দল। পিছিয়ে পড়ার মিনিট দশেক পর আরও বড় দুঃসংবাদ পায় স্পেন; কুঁচকির ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়তে হয় ডি গেয়াকে। তার বদলি হিসেবে নামেন কেপা আরিজাবালাগা। ম্যাচের বাকি সময় প্রতি-আক্রমণে খেলা সুইডিশরাই গোলের সুযোগ পেয়েছে বেশি। কিন্তু ফর্সবার্গ-ইসাকদের কেউই ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারেননি। ৮০ মিনিটে ইসাক ডিফেন্সচেরা পাসে কেপাকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি ফর্সবার্গ। এর মিনিট দশেক পর ব্যবধান বাড়াতে না পারার চড়ামূল্যই দিতে হয়েছে সুইডেনকে।
ইউরো যাত্রা নিশ্চিতের উল্লাস!
দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ফাবিয়ান রুইজের জোরাল নিচু ক্রসে পা ছুঁইয়ে দলকে সমতায় ফেরান বদলি হিসেবে নামা রদ্রিগো মরেনো। রেফারির শেষ বাঁশির পরই উল্লাসে মেতে ওঠে স্পেন, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন কোচ মরেনো। মাত্র মাস চারেক আগে লুইস এনরিকের বদলি হিসেবে হঠাৎ করেই দায়িত্ব পাওয়াটাকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলেছিলেন তিনি; আপাতত সেই চ্যালেঞ্জে লেটার মার্কস পেয়েই উতরে গেছেন তিনি।
তবে স্পেনের কাছে শেষদিকে গোলে জয় হাতছাড়া হলেও হয়তো তেমন একটা হতাশ হওয়ার কথা না সুইডেনের। কারণ স্পেনের মতই রোমানিয়ার মাঠে শেষদিকের গোলে ড্র ছিনিয়ে এনেছে নরওয়ে। ৮ ম্যাচ শেষে ২০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে স্পেন। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থাকল সুইডিশরা, ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে রোমানিয়ানরা। আগামী মাসে নিজেদের মাঠে সুইডেনের মুখোমুখি হবে রোমানিয়া; ঐ ম্যাচের ফলাফলের ওপরই খুব সম্ভবত নির্ভর করছে দুই দলের ইউরো যাত্রা।