সাঁতারুকে শারীরিক শাস্তি দেওয়া দেখায় জাপানি কোচের পদত্যাগ, অভিযোগ করবেন ফিনার কাছে
গত রবিবার সৈয়দ নজরুল ইসলাম সুইমিং কমপ্লেক্সে চলছিল সাঁতারের জাতীয় দলের অনুশীলন। এর পাশাপাশি সেখানে হচ্ছিল জুনিয়র দলের (ট্যালেন্ট হান্ট টিম) অনুশীলনও। সেই অনুশীলনেই ঘটেছে এক অপ্রীতিকর ঘটনা। নিয়ম ভঙ্গ করে অনুশীলনের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারের অভিযোগে জুনিয়র দলের কয়েকজন সাঁতারুকে শাস্তি দিয়েছিলেন দলের কোচরা। সেই শাস্তির এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক নারী সাঁতারু। জুনিয়র দলের কোচদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েই জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাপানিজ কোচ তাকেও ইনোকি।
নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে সেই ঘটনার ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়ে ইনোকি জানিয়েছেন ঐ ঘটনার বিস্তারিত। পোস্টের শুরুতেই ইনোকি লিখেছেন, তিনি সাঁতারুদের শাস্তিদাতাদের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্কই রাখতে চান না, ‘যেসব সংস্থা কিংবা ব্যক্তি সাঁতারুদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, শাস্তি দেয় কিংবা কোনভাবে অপমান করে, তাদের ক্ষেত্রে আমি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করি। যারা সাতারুদের এভাবে লাঞ্ছিত করেছে, সেরকম সাতার ফেডারেশন ও দলের সাথে আমি কোনো সম্পর্ক রাখব না। এরকম কাজ করা কোচদের সাথেও আমি নেই।’
সাতারুদের সাথে আসলে কী ঘটেছিল সেদিন? ইনাকি নিজের পোস্টে জানিয়েছেন সেটাই, ‘আমি ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয় সাতার দলের সাথে হওয়া খুব অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। সেদিন সিনিয়র ও জুনিয়র দল অনুশীলন করছিল। আমি ঐ সময় সিনিয়র দলকে অনুশীলন করাচ্ছিলাম। কয়েকজন জুনিয়র দলের সাঁতারু দলের নিয়ম ভঙ্গ করে মোবাইল ফোন চালিয়েছিল। এই কারণে জুনিয়র দলের কোচ তাদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রাতে তাদেরকে অর্থহীন কিছু ব্যায়াম করতে বলা হয়। এই শাস্তির সময় সবাইকে লম্বা জামা ও প্যান্ট পরতে বলা হয়েছিল। কয়েকটি ব্যায়াম ছিল এরকম- দৌড়ানো, টাইলস লাগানো ফ্লোরে লাফ দেওয়া, সেখানে গড়াগড়ি করাসহ আরও অনেক কিছু।’
ঐ শাস্তির সময়ই হঠাৎ একজন নারী সাঁতারু মেঝেতে পড়ে যান। সেই ঘটনার পর দলের কোচদের আচরণে ক্ষুব্ধ ইনাকি, ‘একজন হুট করে ফ্লোরে পড়ে গেলো শাস্তি ভোগ করার সময়। কোচরা সেই তরুণ নারী সাঁতারুকে রোদের ভেতর ১০ মিনিটের মতো ফ্লোরেই ফেলে রাখলেন! আমি সিনিয়র দলের অন্য কোচদের সাথে খানিকটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনই সন্দেহ হয়েছিল কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। আমি একজন জুনিয়র দলের কোচকে বললাম সেখানে গিয়ে দেখে আসতে যে সব ঠিকঠাক আছে কিনা। তারা হাসতে শুরু করল ও আমকে বলল, মেয়েটা অভিনয় করছে। তাকে যেন সেখানেই পড়ে থাকতে দেওয়া হয়! তারা আমাকে আরও জানালো, এটা নাকি বাংলাদেশে খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা।’
ঐ নারী সাঁতারুর সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন ইনাকিই, ‘আমার বারবার বলার তিন মিনিট পর দুইজন কোচ গিয়ে মেয়েটাকে অচেতন অবস্থা নিয়ে আসে ছায়ার ভেতর। ফিরিয়ে আনার পথে তারা মেয়েটাকে সুইমিংপুলে ফেলে দিতেও চেয়েছিল। মেয়েটাকে নিয়ে আসার পর আমি কোচদের বলি বরফ আনতে ও অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে। তারা বরফ আনেননি, ঢাকার অ্যাম্বুলেন্স ডাকার নাম্বারও তাদের কাছে ছিল না। শেষ পর্যন্ত তারা জাতীয় সাতার দলের ভ্যানে মেয়েটিকে কোথায় যেন নিয়ে গেলো।’
এই ঘটনাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ইনাকি, ‘ঐদিনের সেই ঘটনার কারণে আমি সাথে সাথেই বাংলাদেশ সাতার ফেডারেশনকে কোচ হিসেবে নিজের পদত্যাগপত্র দিয়ে দিয়েছি। সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল কারণ ডিসেম্বরেই দক্ষিণ এশিয়ান গেমস, সাতারুরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, সাঁতারুদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনার নিজের প্রতিবাদ দেখানোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আশা করি এই ঘটনা বাংলাদেশের সাতার ফেডারেশনের নতুনভাবে গড়ে ওঠার পথে একটা টার্নিং পয়েন্ট হবে। আমার দায়িত্ব এই ব্যাপারটা ফিনাকে জানানো, যেহেতু আমি জাতীয় দলের কোচ ছিলাম। এটা আমি ফিনা ও বাংলাদেশ জাতীয় সাতার ফেডারেশনের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি। আমার এই পোস্টটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ, সবাই এটা ছড়িয়ে দেবেন। সবার জন্য শুভকামনা।’