• ফেডারেশন কাপ
  • " />

     

    ফেডারেশন কাপে আবাহনীর উড়ন্ত সুচনা

    ফেডারেশন কাপে আবাহনীর উড়ন্ত সুচনা    

    ফুলটাইম 
    ঢাকা আবাহনী ৪-০ বাংলাদেশ পুলিশ এফসি 


    গতবারের ফেডারেশন কাপ জয়ী ঢাকা আবাহনী, আর এবার প্রিমিয়ার লিগে নতুন আসা বাংলাদেশ পুলিশ এফসি- ফেডারেশন কাপের প্রথম ম্যাচের ফলটা অনুমিতই ছিল। 'এ' গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আবাহনীর কাছে উড়ে গেছে পুলিশ এফসি।  আবাহনীর হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড কেরভেন্স বেলফোর্ট করেছেন জোড়া গোল।  

    বাংলাদেশ পুলিশের শুরুটা অবশ্য আত্মবিশ্বাসী ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে আবাহনীর শক্তির কাছে হার মেনেছে তারা। আবাহনী কোচ মারিও লেমোস নতুন আসা ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মেলসন আলভেজ ও কিরগিজ মিডফিল্ডার এডগার বের্নহার্ডিকে নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিলেন। দুইজনই আবাহনীর অভিষেকে নজর কেড়েছেন। 

    আবাহনীকে ম্যাচে এগিয়ে যেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৮ মিনিট পর্যন্ত। বের্নহার্ডির ডান পাশ থেকে নেওয়া দারুণ  ফ্রি-কিকে লাফিয়ে উঠে বক্সের ভেতর থেকে হেডে গোল করেন কেরভেনস বেলফোর্ট। লিড বাড়াতে এরপর আর মাত্র চার মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে আবাহনীকে। রায়হান হাসানের লম্বা থ্রো পুলিশ ডিফেন্ডার মোহামদ তারা ব্যাক হেডে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দূরের পোস্টে জায়গা মতো ছিলেন নাবিব নেওয়াজ জীবন। টোকা দিয়ে মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়ে যান বাংলাদেশ স্ট্রাইকার।


    প্রথমার্ধ শেষের আগেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আবাহনী পুরোপুরি নিয়ে নেয় আরও এক গোল করে। সোহেল রানার ডান প্রান্ত থেকে করা ক্রসের পর বেলফোর্টের লে অফ বক্সের ভেতর ফাঁকায় পেয়ে গিয়েছিলেন সানডে চিজোবা। এর পর সামনে ছিলেন শুধু পুলিশ গোলরক্ষক। ডান পায়ের শটে টপ কর্নারে বল জড়িয়ে প্রথমার্ধেই আবাহনীর জয় নিশ্চিত করেন ফেলেন সানডে। 

    জয় প্রায় নিশ্চিত জেনে গোলের পরপরই সানডেকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন লেমোস। মামুনুল ইসলাম নেমেছিলেন তার জায়গায়। প্রথমার্ধ অবশ্য বিতর্ক উস্কে দিয়েছে কিছুটা। শেষদিকে একটি পেনাল্টি পেতে পারত পুলিশ এফসি। তবে রেফারি কিছুটা বিস্ময়করভাবেই এড়িয়ে গেছেন সেটা। 

    দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য খেলার ধরন পালটে গিয়েছিল কিছুটা। আবাহনী খুব বেশি আক্রমণ সাজাতে পারেনি। পুলিশকেই বরং আক্রমণে বেশি ধারালো বলে মনে হচ্ছিল অবশ্য সেসব কিছুই কাজে আসেনি, ম্যাচ শেষের ২০ মিনিট আগে পেনাল্টি পেয়ে যায় আবাহনী। বেলফোর্ট নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন স্পট কিক থেকে। 

    শেষদিকে গিয়ে আবাহনীর জয়ের ব্যবধান বাড়তে পারত আরও। ৮৬ মিনিটে জীবনের বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া দারুণ একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন হিমেল। যোগ করা সময়ে সাদ উদ্দিনের শট ফিরে এসেছে বারপোস্টে লেগে।

    গোলগুলো ভাগ্যবান বলে পাইনি, এগুলো অনুশীলন করেছি আমরা : লেমোস 
    চার গোলের দুইটিই এসেছে সেট পিস থেকে, আরেকটি পেনাল্টির উৎসও ছিল রায়হান হাসানের লম্বা থ্রো। রায়হানের হাতের ওপর কি বেশি নির্ভর হয়ে পড়ছে আবাহনী? ম্যাচ শেষে ঢাকা আবাহনীকোচ মারিও লেমোস বলছেন রায়হান তার দলের জন্য বড় অস্ত্র। আর সেট পিস থেকে যে গোলগুলো তার দল পেয়েছে  সেগুলো পরিশ্রমেরই ফসল, "আজ যে গোলগুলো হয়েছে সেগুলো দেখলে মনে হতে পারে ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল। কিন্তু এমনটা না, এই একই রকম গোল আমরা বারবার করে অনুশীলন করেছি। প্রথম ম্যাচ হিসেবে দলের পারফরম্যান্সে আমি খুশি।"  

    আবাহনীর নতুনদের আবাহনী বার্তা 
    ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মেলসন দারুণ খেলেছেন পুরো ম্যাচেই। সেটপিসেও কতখানি ভয়ঙ্কর হতে পারেন তার একটা নিদর্শন দেখিয়েছেন প্রথম ম্যাচেই। ম্যাচে আবাহনীর প্রথম গোলের সুযোগটাই তৈরি করেছিলেন মেলসন। রায়হানের লম্বা থ্রো থেকে শক্তিশালী গ্ল্যান্সিং হেডারে মেলসন কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন পুলিশ গোলরক্ষক আরিফুজ্জামান হিমেলকে।

    আবাহনী সমর্থকেরা মেলসনের ভেতর মাসিহ সাইঘানির ছায়া খুঁজতে পারেন। সাইঘানির মতোই বাতাসে শক্তিশালী, শারীরিক গড়নেও মিল আছেন মেলসনের। তবে সাইঘানির চেয়ে আরেকটু দ্রুত গতির ব্রাজিলিয়ান এই ডিফেন্ডার। 

    কিরগিজ মিডফিল্ডার এডগার বের্নহার্ডিও প্রথম ম্যাচের হিসেবে ভালোই খেলেছেন। বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত যতক্ষণ মাঠে ছিলেন ফ্রি-কিক, কর্নার গুলো নিয়েছেন তিনি।  আবাহনীর ও বেলফোর্টের প্রথম গোলেও তার ফ্রি-কিকই ছিল উৎস। 

    বেঁচে গেছেন সোহেল 
    বড় সড় কোনো সেভ করতে হয়নি। নিজের বক্সে আরামেই ছিলেন আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল। দলও এগিয়ে গিয়েছিল ৩-০ ব্যবধানে। কিন্তু ৪৪ মিনিটে এর পরও সোহেল যেটা করলেন সেটাকে কেবল ‘আনাড়িপনাই’ বলা যায়। উড়ে আসা বল ধরতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সোহেল, পুলিশের আইদের মামবেতালিভও এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেদিকে। সোহেলই বল পেতেন, কিন্তু এক পা উঁচু করে লাফাতে গিয়ে পড়লেন মামবেতালিভওর ওপর। রেফারির চোখ এড়িয়ে গেছে ঘটনা। নইলে হলুদ কার্ডের সঙ্গে একটি পেনাল্টিও পুলিশকে উপহার দিতে পারতেন সোহেল। 

    ম্যাচের পর আবাহনী কোচও বলছেন সোহেলের ভুলটা অতিরিক্ত আবেগের ফল। হাফ টাইম টিম টকেও তাই খেলোয়াড়দের মেজাজ না হারাতে আলাদা করে পরামর্শ দিতে হয়ে বলে জানিয়েছেন লেমোস। 

    হারেও আশা আছে পুলিশের 
    প্রথমার্ধে ৩ গোল হজমের পর হারের ব্যবধান বাড়তে হারের। কিন্তু পুলিশ দ্বিতীয়ার্ধে দেখিয়েছে নিজেদের অন্য রুপ। উলটো আবাহনীকেই নিজেদের অর্ধে বেশিরভাগ সময় বন্দী করে রেখেছিল পুলিশ। গোলরক্ষক হিমেল চার গোল হজম করলেও বড় সড় কোনো ভুল করেননি। তবে ফরোয়ার্ডরা ব্যর্থ হয়েহেন বেশ কয়েকবার। ভালো জায়গা বল পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে দ্বিতীয়ার্ধে খেলা জমিয়ে তুলতে পারত পুলিশ এফসি।   

    ভার্সেটাইল সাদ আর জীবনের লক্ষ্য 
    সাদ উদ্দিন শুরু করেছিলেন রাইটব্যাক হিসেবে। এর পর দ্বিতীয়ার্ধে শিফট হয়েছিলেন বাম প্রান্তে। শেষদিকে খেলেছেন ফরোয়ার্ড হিসেবে। আগের মৌসুমেও বিভিন্ন পজিশনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলেছিলেন সাদ। এবারও সেটার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে। 

    নাবিব নেওয়াজ জীবন এদিন অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে নেমেছিলেন। মৌসুম শুরুর আগে জানিয়েছিলেন ২০ গোলের মাইলফলক পূরণ করতে চান তিনি। প্রথম ম্যাচেই গোল পাওয়ার পর আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন সেই কথা। বলেছেন যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন সেটা পূরণ করতে প্রথম ম্যাচে গোল পাওয়া আলাদা আত্মবিশ্বাস যোগাবে তাকে।