টাইব্রেকার রোমাঞ্চে আবাহনীকে বিদায় করে সেমিফাইনালে রহমতগঞ্জ
প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ৯ গোল দিয়েছিল ঢাকা আবাহনী,। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে এসেই রহমতগঞ্জের আঁটসাঁট রক্ষণ আর ভাঙা হচ্ছিল না ফেডারেশন কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। অতিরিক্ত সময়ে কেরেন্স বেলফোর্ট গোল করেছিলেন, তবে তাতেও কাজ হয়নি। ১১৮ মিনিটে বদলি এনামুল গাজীর গোলে সমতায় ফিরে রহমতগঞ্জ খেলা নিয়ে যায় টাইব্রেকারে। এর পর টাইব্রেকারে লড়াকু রহমতগঞ্জ হয়ে গেল আরও নির্ভুল। তিনটি কিকেই সফল তারা, আর আবাহনীর হয়ে গোল মিস করলেন বেলফোর্ট আর সানডে চিজোবা। দুইটি কিক ঠেকিয়ে ম্যাচের নায়ক তাই রহমতগঞ্জ গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন। শেষে গিয়ে তার বীরত্বেই টুর্নামেন্ট ফেভারিটদের বিদায় করে সেমিফাইনালে উঠেছে রহমতগঞ্জ।
৯৪ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মেলসন আল্ভেজের লং বল রহমতগঞ্জের বক্সের ঠিক বাইরে রিসিভ করে হাফ ভলিতে দেখার মতো এক গোল করেন বেলফোর্ট। ওই গোলটাই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে বলেই মনে হচ্ছিল তখনও। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধেও দারুণ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করে আবাহনী। আসলে রহমতগঞ্জ গোলরক্ষকের অবদানই তাতে সবচেয়ে বেশি। জুয়েল রানাকে ওয়ান অন ওয়ানে ঠেকিয়ে দিয়ে দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন লিটন।
এর পর একেবারে অন্তিত মুহুর্তে গিয়ে সেটার সুফল ভোগ করেছে রহমতগঞ্জ। আর অন্যপ্রান্তের গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল করেছেন অমার্জনীয় এক ভুল। উড়ে আসা বল ধরতে এগিয়ে গিয়েছিলেন, বলের নাগালই পাননি সোহেল। সেই সুযোগে এনামুল গোল করে রহমতগঞ্জের গুটি কয়েক সমর্থকদের আনন্দে ভাসান।
এর আগে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দুইদলের খেলা চলেছে এক ধারায়। আবাহনী একের পর এক আক্রমণ করে গেছে। আর রহমতগঞ্জ রক্ষণে পুরো শক্তি ঢেলেছে। প্রথমার্ধে মোট ১৩ বার গোলে শট নিয়েও গোল আর পায়নি আবাহনী। রহমতগঞ্জের দুই বিদেশী সেন্টারব্যাক ইউনুসা কামারা ও আপকোকোভ আসরোরভ নিজেদের রক্ষণ আগলে রেখেছিলেন নিখুঁতভাবে।
আবাহনীর হয়ে এদিন অভিষেক হয়েছে কিরগিজ মিডফিল্ডার এডগার বের্নহার্ডের। মামুনুল ইসলাম আর সোহেল রানাদের সঙ্গে মিডফিল্ডে নেমে দারুণ খেলেছেন তিনি। আক্রমণে দলকে সাহায্য করে গেলেও রহমতগঞ্জের ম্যান মার্কিংয়ের কাছে দ্বিতীয়ার্ধে হার মানতে হচ্ছিল মারিও লেমোসের দলকে। রহমতগঞ্জের ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে আঁটসাঁট রক্ষণ গলে গোলরক্ষক পর্যন্ত বল গেছে কমই। ৬৮ মিনিটে অবশ্য দুর্দান্ত একটি গোল পেয়ে যেতে পারতেন আলভেজও। ৬৮ মিনিটে সিক্স ইয়ার্ড বক্সের কোণা থেকে আলভেজের ওভারহেড কিক তখন লেগেছিল সাইডনেটে।
রহমতগঞ্জ পুরো ম্যাচে আক্রমণে উঠতে পেরেছে হাতে গোণা মাত্র কয়েকবার। তবে ৮০ মিনিটে আরেকটু হলেই আবাহনীকে ঝামেলায় ফেলে দিত পারত রহমতগঞ্জ। সানোয়ার হোসেনের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া নিচু শট সে দফায় ঠেকিয়ে দিয়ে আবাহনীকে রক্ষা করেছিলেন গোলরক্ষক শহীদুল আলম
আবাহনীকে আটকে দেওয়ার সবচেয়ে বড় অবদান শেষ পর্যন্ত তাজিক ডিফেন্ডার আসরোরর্ভ ও গোলরক্ষক লিটনের। টাইব্রেকারে আসরোর্ভ মেরেছিলেন পানেনকা শট। ঢাকার মাঠে এমন কিছু আগে কেউ দেখেছে কী না সন্দেহ! ওই শৈলী প্রদর্শনের আগে ৮৫ মিনিটে বেলফোর্টের শট গোললাইন থেকে আটকে দিয়েও খেলা অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন কিরগিজ এই ডিফেন্ডার।
নিজেদের দোষ দেখছেন লেমোস
ম্যাচে হারের জন্য পুরো দলের দোষটাই দেখছেন আবাহনী কোচ মারিও লেমোস, "সত্যি বলতে আমরা আজ ভালো খেলিনি। দলের কেউ ভালো খেলেনি। আমার মনে হয় খেলোয়াড়রাও সেটা জানে।" এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর খেলোয়াড়রা রহমতগঞ্জকে খাটো করে দেখেছিল কী না সে প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ সূচক জবাবই দিয়েছেন আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ।
চোট নিয়ে খেলেও সফল রহমতগঞ্জ
দলের কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানি উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চাননি। গত ৫ দিন ধরেই ডিফেন্ডার আসরোরর্ভ ইনজুরিতে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন কোচ। এর পরও এমন লড়াকু পারফরম্যান্সের পর গোলরক্ষক লিটন আর তাজিক ডিফেন্ডারের ভেতর আলাদা করে কাউকে ম্যাচের নায়ক হিসেবে বেছে নিতে চাননি গোলাম জিলানি।
আর আসরোরর্ভের পানেনকা কিক দেখেও অভিভূত জিলানি বলেছেন এমন কিছু করতে মানা করেছিলেন তিনি, "অনুশীলনেও সে পানেনকা মারত। আমি ওকে বলেছিলাম এসব করে বার দলকে ডুবিও না। আজ সে দেখিয়ে দিয়েছে এবং সফলও হয়েছে।"
আবাহনীকে নিজেদের খেলাটা খেলতে না দেওয়াই তার লক্ষ্য ছিল বলে জানিয়েছেন রহমতগঞ্জ। তাতে যে তিনি পুরোপুরি সফল তা তো ম্যাচের ফলই বলে দিচ্ছে। গ্রুপ পর্বে সাইফ স্পোর্টিং, শেখ জামালদের আটকে দেওয়ার পর আবাহনীকে হারিয়ে তো স্বপ্নের সেমিফাইনালেই উঠে গেল তার দল।