'মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্বপ্নটাই লালন করছি'

জোসেফ রহমান। জন্ম, বেড়ে ওঠা সুইডেনে। তবে শিকড়টা যেন এখানেই, তাই তো লাল-সবুজের জার্সিটা তুলতে চান গায়ে। বাফুফের ট্রায়ালও দিয়ে গেলেন কদিন আগে। প্যাভিলিয়নের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজমল তানজীম সাকির।
কেমন আছেন?
জোসেফ রহমানঃ ভালই। আপনি?
আমিও ভালো আছি। আবার বাংলাদেশে আসবেন কবে?
জোসেফঃ সুইডেনে আছি। এ মাসের (জানুয়ারি) শেষের দিকে আসার পরিকল্পনা আছে।
আপনি সুইডেনে কতদিন?
জোসেফঃ আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই সুইডেনে। তবে ছোটবেলায় প্রায়ই বাংলাদেশে যাওয়া হতো, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করতে।
ফুটবলের শুরুটাও তো তাহলে সেখানেই...
জোসেফঃ হ্যাঁ। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে সুইডেন যখন ব্রোঞ্জ জিতলো (তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বুলগেরিয়াকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল সুইডেন), তখন আমার বয়স ছয়। তখন থেকেই আমিও চাইতাম, আমিও একদিন বিশ্বকাপ খেলব।
সুইডেনের ডিভিশন ফাইভ এর দল আমি প্রোসাইয়ন বিকে (Procyon BK) এর হয়ে খেলছি এখন। এবার অবশ্য আমাদের দল ডিভিশন ফোর এ উঠেছে। ডিভিশন ফোর বা ফাইভ হলেও, আমাদের ক্লাবের প্রায় প্রতি পজিশনেই এমন ফুটবলার আছে, যারা ডিভিশন-ওয়ানেও খেলেছেন।
বাংলাদেশের হয়ে খেলার ইচ্ছাটা কেন তবে?
জোসেফঃ আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশকে মুক্ত করতে তিনি লড়াই করেছিলেন। ভাল ক্রীড়াবিদও ছিলেন। তবে তাঁর পারিপার্শ্বিক অবস্থা এমন ছিল, তিনি না হতে পেরেছেন পেশাদার (ক্রীড়াবিদ), না করতে পেরেছেন দেশের হয়ে খেলার কথা ভাবার সাহস! তিনি কিছু টাকা জমিয়েছিলেন, তাঁর এক বন্ধুর সহায়তায় তিনি সুইডেন চলে আসেন। তাঁর জীবন, তাঁর পরিবারের জীবনটা আরেকটু সহজ করতে।
আমি আমার স্বপ্নটাই লালন করছি, আমার বাবার স্বপ্নটা লালন করছি। বাংলাদেশের আরও অনেকে যাঁদের যোগ্যতা আছে, কিন্তু জাতীয় দল পর্যন্ত যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ পায় না, হয়তো তাঁদেরটাও (করছি)। জাতীয় দলে খেলতে পারলেই চক্রটা পূরণ হবে।
বাংলাদেশ তো ঘুরে গেলেন, বাফুফের ট্রায়াল, জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন, কেমন কাটলো সময়, সব মিলিয়ে?
জোসেফঃ জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলনের জন্য আমি লম্বা সময় ধরে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। প্রক্রিয়াটাও দীর্ঘ ছিল বেশ। তবে অনুশীলনের প্রতিটাই মুহুর্তই উপভোগ করেছি। জাতীয় দলের ফুটবলার বা কোচিং স্টাফদের সঙ্গে দেখা করা, যাঁরা অনুশীলন দেখতে এসেছিলেন, তাঁদের দেখা, মোট কথা আমি সবই উপভোগ করেছি।
প্রিয় ফুটবলার বা আদর্শের কথা বললে কার কথা বলবেন?
জোসেফঃ আমি মূলত মিডফিল্ড আর স্ট্রাইকিং পজিশনেই খেলি। তবে যারা ভালো ড্রিবলিং করেন, তাদের খেলা আমাকে সবসময়ই মুগ্ধ করে। ব্রাজিলের রোনালদো, রোনালদিনহো, জিদান, ইব্রাহিমোভিচ- অনেকেই আছেন এমন। তবে আদর্শ হিসেবে ধরলেও তাঁদের ড্রিবলিং বা শুটিংটা আপনি অনুশীলন করতে পারেন শুধু, পরে নিজের ধাঁচেই কিন্তু তৈরী করে নিতে হবে সব!
বাংলাদেশের কোনো প্রিয় ফুটবলার?
জোসেফঃ আসলে বাংলাদেশে আসার পর প্রত্যেকের সংগেই আমার খুব ভাল একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সবাই তাই আমার প্রিয় এখন!
সামনে কী করছেন?
জোসেফঃ পরবর্তী লক্ষ্য তো অবশ্যই বাংলাদেশের পাসপোর্ট পাওয়া। তবে সামনে আবাহনীর হয়ে ট্রায়াল দিতে আসব।
জীবনের স্বপ্নের কথা বলতে বললে কী বলবেন?
জোসেফঃ আমি জীবনটা সম্পূর্ণ উপভোগ করতে চাই। আর যারা আমার মতো উপভোগ করতে চান, তাদেরকেও সাহায্য করতে চাই।
সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
জোসেফঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।