• বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ
  • " />

     

    বাংলাদেশকে নতুন জীবন দিতে পারবেন মতিন?

    বাংলাদেশকে নতুন জীবন দিতে পারবেন মতিন?    

    বাংলাদেশ ফুটবলের সবচেয়ে পরিচিত শব্দ বোধ হয় গোলখরা। এই শব্দের ভেতর ‘হাহাকার’ ধরানোর দারুণ এক গুণ আছে। বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে বারবার একটি কথাই বলেন, জাতীয় দলের ফরোয়ার্ডরা ক্লাবের হয়ে ফরোয়ার্ড পজিশনেই নিয়মিত খেলেন না, তাহলে গোল আসবে কোত্থেকে?- উলটো প্রশ্ন ছুড়ে দেন জেমি ডে। 

    বাংলাদেশ কোচের এই প্রশ্নের জবাব জানা নেই কারও! রাতারাতি গোলখরা কাটানোর জাদুমন্ত্র আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তাই দীর্ঘ অপেক্ষা। এসবের ভেতরও নিয়মিত একটি প্রশ্ন শুনতে হয় ডেকে। নাবিব নেওয়াজ জীবন কেন? ডের অকাট্য  যুক্তি, গত মৌসুমে দেশের ঘরোয়া ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন জীবন। তাহলে আর কাকে খেলাবেন তিনি? 

    বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের আগে ইনজুরিতে পড়ায় টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেছে জীবনের। গতবার প্রিমিয়ার লিগে দেশীদের ভেতর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল ছিল মতিন মিয়ার। জীবনের বদলে মতিন খেলবেন সেটা তাই টুর্নামেন্টের আগেই একরকম নিশ্চিত হয়ে ছিল।

    ফিলিস্তিনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বিরল সুযোগটা অনুমিতভাবেই পেলেন মতিন। কিন্তু ওই ম্যাচে তেমন কিছু করতে পারলেন না। বাংলাদেশও হারল ২-০ তে। ঘরের মাঠের টুর্নামেন্টে গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে দরকার জয়। জামাল ভুঁইয়াও ছিটকে গেলেন ম্যাচের আগে।  শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে তো হবে, কিন্তু গোল করবে কে? 

    মতিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশকে দিলেন নতুন জীবন। দুই অর্ধে করলেন দুই গোল। প্রথমটি বক্সের ভেতর ঢুকে ডান পায়ের কোনাকুনি শটে বল গিয়ে জড়াল দূরের পোস্টে, পরেরটি মিডফিল্ড থেকে দৌড় শুরু করে, গোলরক্ষককে ওয়ান অন ওয়ানে কাটিয়ে। প্রথম গোলে দেখালেন নিজের ড্রিবলিং স্কিল, পরেরটিতে দারুণ কম্পোজারে। 



    গোলের বর্ণনা শুনে ইউটিউবে ‘মতিন মিয়া গোল’ লিখে খুঁজতে গেলে অবশ্য আপনার চোখে শুরুতেই আসবে অন্য দৃশ্য। ২০১৭ সালে সাইফ স্পোর্টিংয়ের হয়ে নিজের অর্ধ থেকে দৌড় শুরু করে একে একে মুক্তিযোদ্ধার চারজন খেলোয়াড়ের পর গোলরক্ষককেও কাটিয়ে চোখে লেগে থাকার মতো এক গোল করেছিলেন মতিন। ওই গোল দেখার পর আপনার মনে হতেই পারে, এই স্ট্রাইকার নিয়মিত খেলে না কেন? 

    টূর্নামেন্ট শুরুর আগে জেমি ডে বলেছিলেন, এটাই মতিনের সুযোগ। “মতিন অনেকদিন ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেছে। এবার তার নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ।” - ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ম্যাচের আগে মতিনকে তাঁতিয়ে তোলার  চেষ্টা ডের। 

    সেই চেষ্টা সফলতার মুখ দেখল দরকারের সময়ে। ২০১৮ সালে জাতীয় দলে প্রথমবার ডাক পেলেও এর আগে মাত্র দুইটি ম্যাচে একাদশে ছিলেন মতিন। বিরল সুযোগটা কাজে লাগালেন কী করে মতিন? বসুন্ধরা কিংস ফরোয়ার্ড বলছেন এতোদিন সাইডবেঞ্চে বসে থেকে হতাশা কাজ করত তার ভেতর। কিন্তু এর পরও মনোবল শক্ত রেখেছিলেন তিনি, “আমি একা একাই অনুশীলন চালিয়ে গেছি নিয়মিত। জিম থেকে শুরু করে ফিটনেস ধরে রাখার কাজগুলো নিয়মিত করেছি। দলে সুযোগ পাইনি দেখে খারাপ লাগত।” 

    ক্লাবের হয়ে নিয়মিত খেলেন। গতবার লিগে ১১টি গোলও আছে মতিনের। জাতীয় দলে দিনের পর দিন বসে থাকার আত্মবিশ্বাস থাকার কথা তলানীতে। ডের মন জয় করতে পেরেছেন তো মতিন? ডের কথা শুনলে ভরসা পেতে পারেন মতিন নিজে, “আমার মনে হয় মতিন দেখিয়েছে ও লিগে গোল করতে পারে। এই সুযোগ তার পাওনা ছিল। খেলার সুযোগ না পাওয়াটা খুবই কঠিন। পুরো কৃতিত্বটাই মতিনের, সে প্রস্তুত ছিল। এখন সে আমাকে দেখিয়ে দিয়েছে দুই গোল করে।” 

    নিজেকে প্রমাণ করেই এখন আর থেমে থাকতে চান না মতিন। তার কথা লাগলে পরিশ্রম আরও করবেন, কিন্তু এই জায়গাটা আর হারাতে চান না সিলেটের ছেলে, “যেহেতু সুযোগ কাজে লাগিয়েছি আমার লক্ষ্য এখন একাদশে জায়গা ধরে রাখা। এই জায়গা আমি হারাতে চাইনা, লাগলে আরও পরিশ্রম করব।”   

    মতিনকে দিয়ে বাংলাদেশের গোলের হাহাকার ঘুচবে কী না এখনই সে প্রশ্নের জবাব খোঁজা অবান্তর। জেমি ডে যে কথা বলেছিলেন সেটা খাটে মতিনের ক্ষেত্রেও। ক্লাবের হয়ে মূল স্ট্রাইকারের ভূমিকায় খেলেন না তিনি। ২৫ বছর বয়সীও তাই ‘জাত স্ট্রাইকার’ নন। ফিলিস্তিন ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও দুইরকম পজিশনে খেলেছেন মতিন। প্রথম ম্যাচে রাইট উইংয়ে, দ্বিতীয় ম্যাচে খেললেন অনেকটা ফ্রি রোলে। মতিন বলছেন উইঙ্গার হলেও স্ট্রাইকারের ভূমিকায় খেলতে অসুবিধা হয় না তার। তার খেলায় গতি আছে, ড্রিবলিংয়েও সিদ্ধহস্ত, আর ফিনিশ তার কতোখানি ভালো সেটা তো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই দেখালেন। নিজেকে প্রমাণ করে আসলে নিজের ক্যারিয়ারকে নতুন এক জীবনই দিলেন মতিন। এর পর সেমিফাইনালে বুরুন্ডি বাধা বাংলাদেশের সামনে। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশকেও নতুন জীবনই এনে দেবেন মতিন।