• উইমেনস টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২০
  • " />

     

    ভারতকে উড়িয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

    ভারতকে উড়িয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া    

    উইমেনস টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০২০
    অস্ট্রেলিয়া ১৮৪/৪, ২০ ওভার (মুনি ৭৮*, হিলি ৭৫; দীপ্তি ২/৩৬)
    ভারত ৯৯ অলআউট, ১৯.১ ওভার (দীপ্তি ৩৩; শুট ৪/১৮)
    ফল : অস্ট্রেলিয়া ৮৫ রানে জয়ী


    মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ দুপুর থেকে দর্শকের লম্বা লাইন, একেবারে লোকে লোকারণ্য যাকে বলে। ছেলেদের ক্রিকেটে দৃশ্যটা নিয়মিত হলেও মেয়েদের ক্রিকেটে সেটি অভাবনীয়ই। নারী দিবসের দিনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের সূচি দিয়ে এমন উৎসবের প্রত্যাশাই তো ছিল আইসিসির। অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে এমসিজিতে প্রায় ৯০ হাজার দর্শক এসেছিলেন আজ। মেয়েদের ক্রিকেটে নতুন মাইলফলকের দিনে অস্ট্রেলিয়াও নিজেদের রেকর্ড ভেঙে গড়ল। এমসিজির উৎসবমুখর গ্যালারিকে সাক্ষী করেই রেকর্ড পঞ্চম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবার ফাইনালে খেলা ভারতকে কোনও সুযোগ না দিয়েই শিরোপা ধরে রাখার মিশনে সফল তারা। 

    মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে দর্শকদের বিনোদনে কোনও কমতি রাখতে চায়নি আইসিসি। তাইতো ম্যাচ শুরুর আগেই পপ তারকা কেটি পেরি পারফর্ম করে এমসিজির গ্যালারিতে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে দিলেন। সেই উৎসব চলল ম্যাচ জুড়েই। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং’ তিন বিভাগেই দারুণ নৈপুণ্যে সেই উৎসব টিকে ছিল শেষ পর্যন্ত। আর এর সাথেই আজীবনের এক সুখকর অভিজ্ঞতা সঙ্গী হল মাঠে থাকা প্রতিটি দর্শকের। 

    গ্রুপ পর্বেও এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। সেই দেখায় অস্ট্রেলিয়া খুব একটা পাত্তা পায়নি ভারতের কাছে। পুনম যাদবের স্পিন বিষে নীল হয় সেদিন অজিরা। তবে সেই ম্যাচ থেকে নিজেদের ভুলগুলো শুধরে আজ তৈরি হয়েই নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে দুই ওপেনারের ব্যাটে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো শুরু পায় তারা। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই হিলি এবং বেথ মুনির ব্যাট কথা বলেছে। তবে আজ প্রথম বল থেকেই খাপখোলা তলোয়ার হয়ে উঠেছিল এই দুজনের ব্যাট। তবে প্রথম চার ওভারের মাঝে ক্যাচ ফেলে এই দুজনকে জীবন দিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেরাই বাড়িয়েছিল ভারত। প্রথম ওভারে কাভারে শেফালি ভার্মা ছাড়েন হিলির ক্যাচ, এরপর নিজের বোলিংয়ে মুনির ফিরতি ক্যাচ ফেলেন রাজেশ্বরী গায়েকোয়ার।

     


    ইনিংসের প্রথম বলে চার মেরে ইনিংস শুরু করা হিলি জীবন পেয়ে সেটিকে কাজে লাগান দারুণভাবে। ভারতীয় বোলারদের নাস্তানাবুদ করে একের পর এক চার-ছয়ে এমসিজির গ্যালারিকে উৎসবের উপলক্ষ্য তৈরি করে দেন। ১১ তম ওভারে শিখা পাণ্ডেকে টানা তিন বলে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে ছক্কার হ্যাটট্রিক করেন হিলি। মাত্র ৩০ বলে ফিফটি করা হিলির ইনিংস থামে এর পরের ওভারে। ৭ চার এবং ৫ ছয়ে ৩৯ বলে ৭৫ রান করে রাধা যাদবের বলে আরেকটি ছয় মারতে গিয়ে ইনিংস শেষ হয় তার। শেষ ২৫ রান করতে মাত্র ৯ বল খরচ করেছেন তিনি। তার আগেই অবশ্য ঝড়ো ব্যাটিংয়ে রেকর্ড বুকে নাম উঠে গেছে এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারের, ছেলে বা মেয়েদের যেকোনো বিশ্ব আসরের ফাইনালে তার চেয়ে কম বল খেলে ফিফটির দেখা পায়নি আর কেউ। সঙ্গে দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ২ হাজার রানও পূর্ণ হয়ে গেছে তার।

    শুরু থেকে এক প্রান্ত থেকে দাঁড়িয়ে হিলির ধ্বংসযজ্ঞ উপভোগ করছিলেন আসরে সর্বোচ্চ রান করা বেথ মুনি। হিলি ফিরে যাওয়ার নিজের প্রান্ত আগলে রেখে ৪১ বল থেকে ফিফটি তুলে নিলেন তিনি। এরপর খেলতে শুরু করেন হাত খুলে, আর ১৩ বল খেলে রানের খাতায় যোগ করেছেন আরও ২৮ রান। অপর প্রান্তে অন্যরা আসা-যাওয়া করলেও মুনি ঠিকই অপরাজিত ছিলেন, ৫৪ বল খেলে ৭৮ রান করে, অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ ফাইনালে রেকর্ড সংগ্রহ এনে দিয়ে।

    অস্ট্রেলিয়ার অতিমানবীয় হয়ে ওঠার দিনে ভারতকে শুরু থেকেই নড়বড়ে মনে হচ্ছিল। কোনও ম্যাচ না হেরে ফাইনালে এসেছিলেন স্মৃতি মানধানারা, অথচ আজ সেই অপরাজেয় রুপের লেশমাত্রও দেখা গেল না তাদের খেলায়। প্রথমবার ফাইনাল খেলার চাপে রীতিমত ভেঙে পড়লেন তারা। প্রাণহীন ফিল্ডিংয়ে শুরুতে অস্ট্রেলিয়াকে বড় লক্ষ্য তৈরির সুযোগ করে দিয়েছেন ভারতীয়রা। এরপর সেই লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে গোত্তা খেয়েছেন বারবার। ইনিংসের তৃতীয় বলেই টুর্নামেন্টে নিয়মিত ওপেনার শেফালিকে হারিয়ে শুরু। এরপর শুধুই আসা যাওয়ার মিছিল চলতে থাকে ভারতীয় শিবিরে। মাঝে দীপ্তি শর্মা ৩৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে শুধু হারের ব্যবধান কিছুটা কমাতে সক্ষম হয়েছেন এই যা। মেগান শুট ৪ উইকেট নিয়ে আসল কাজটা করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আজকের দিনের নায়ক হিলি আর মুনিই, ভারত যে ম্যাচটা হেরে গেছে ওখানেই।