বসুন্ধরার বিপক্ষে ৩ গোলে পিছিয়ে পড়েও চট্ট.আবাহনীর নাটকীয় জয়
ফুলটাইম
বসুন্ধরা কিংস ৩-৪ চট্টগ্রাম আবাহনী
ম্যাচের সময় ঘন্টা খানেকও পার হয়নি। এর আগেই চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। বসুন্ধরার গল্প ওখানেই শেষ। নীলফামারির শেখ কামাল স্টেডিয়ামে এর পর মারুফুল হকের চট্টগ্রাম আবাহনী লিখেছে দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনের গল্প।
৩ বিদেশী ফরোয়ার্ড চার্লস দিদিয়ের, নিক্সন ও চিনেদুম্যাথুতে ভর করেম্যাচেই বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। ঘরের মাঠে প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা পেয়েছে নিজেদের প্রথম হারের স্বাদ। আর আবাহনীর পর বসুন্ধরা কিংসকেও হারিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী এখন উড়ছে। ৬ ম্যাচ শেষে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে এখন মারুফুল হকের দল। উলটো অবস্থা অস্কার ব্রুজোনের দলের। মোহামেডানের পর লিগে এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হারল বসুন্ধরা কিংস।
৭ গোলের নাটকীয় ম্যাচে জয়সূচক গোলটি হয়েছে ম্যাচের যোগ করা সময়ে। ডানদিক থেকে আসা নিচু ক্রস সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথা থেকে স্লাইড করে বসুন্ধরার জালে বল ঢুকিয়ে দেন চিনেদুম্যাথু। ওই গোলেই দুর্দশার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে বসুন্ধরার। মাত্র ৪ দিন আগে মালদ্বীপের ক্লাব টিসি স্পোর্টকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর এমন হার তো দুঃস্বপ্নের মতোই মনে হওয়ার কথা।
বসুন্ধরাকে দুঃস্বপ্ন উপহার দেওয়ার বড় নায়ক আসলে মারুফুল হক। নীলফামারিতে তার দল শুরুটা ভালোই করেছিল। তবে প্রথমার্ধের শেষ থেকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর ১৫ মিনিট মনযোগ হারিয়ে ৩ গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা। বিরতির সময় ২-০ তে এগিয়ে থেকে মাঠ ছেড়েছিল বসুন্ধরা। প্রথমার্ধের শেষ ১০ মিনিটে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল বসুন্ধরার আক্রমণ। বখতিয়ার, ইব্রাহিমরা গোলে শট করেও আটকে গিয়েছিলেন তখন।
তবে দানিয়েল কলিনদ্রেসে কপাল খুলেছিল তাদের। একাই তিন জন ডিফেন্ডার কাটিয়ে বক্সের ভেতর ডান পাশে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। তাকে ফাউল করে বসুন্ধরাকে পেনাল্টি উপহার দেন রাকিব। এএফসি কাপের স্কোয়াডে জায়গা হয়নি আখতাম নাজারোভের। তার জন্যই বোধ স্পটকিক তুলে রেখছিল বসুন্ধরা কিংস। ৪৩ মিনিটে তিনিই গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। ৫ মিনিট পর কলিনদ্রেসের ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আর্জেন্টাইন নিকোলাস দেলমন্তে। কলিনদ্রেস এর পর নিজেও ৫৯ মিনিটে বক্সের ভেতর এক পাশ থেকে বাঁকানো শটে গোল করেন। কিন্তু এদের একজনও শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পারেননি।
ম্যাচটা তখন একপেশে না হওয়ার তেমন কোনো কারণ ছিল না। ৩ গোল হজম করলেও হাল না ছাড়ার পুরস্কার পেয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। আর স্নায়ু চাপে খেই হারিয়ে এর পর এলোমেলো হয়ে গেছে বসুন্ধরার সাজানো ফুটবল। ফিরে আসার লড়াইটা শুরু করেছিলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর আগের ম্যাচের নায়ক চার্লস দিদিয়ের। ডান দিক থেকে আসা ক্রস থেকে গ্ল্যান্সিং হেডারে গোল করে ব্যবধান ৩-১ এ করেন তিনি।
এর ৩ মিনিট পর বক্সে ঢুকে পড়া নিক্সনকে তপু বর্মন ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ৬৭ মিনিটে নিজেই স্পটকিক নিয়েছিলেন নিক্সন। ৩-২ তখন ব্যবধান। মাত্র ২০ দিন আগেও একইরকম সমীকরণের সামনে ছিল বসুন্ধরা কিংস। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সেদিন ব্রাদার্স ইউনিয়ন্সের সঙ্গে ৩-০ তে এগিয়ে থেকে ২ গোল হজম করেছিল তারা। তবে সেবার জয় নিয়ে ফিরেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
এবার দল ২ গোল হজম করার পর অস্কার ব্রুজোন ডাগ আউটে হতাশায় মুখ লুকিয়েছেন। স্প্যানিশ কোচকে এতোখানি হতাশ কে কবে দেখেছে! ব্রুজোনের আশঙ্কা সত্যি করে ৮৭ মিনিটে আবার গোল করেন নিক্সন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ড্র নিয়েও আর মাঠছাড়া হয়নি ব্রুজোনের দলের। নীলফামারির মাঠে উদযাপন করে গেছে চট্টগ্রাম আবাহনী।