• বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের ধর্মঘট
  • " />

     

    ড্রেসিংরুমে মিথ্যাচার হয়েছিল, সেই আন্দোলন নিয়ে মাশরাফির অভিমান

    ড্রেসিংরুমে মিথ্যাচার হয়েছিল, সেই আন্দোলন নিয়ে মাশরাফির অভিমান    

    ব্যাপারটা নিয়ে এতোদিন প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। মুখে এঁটে রেখেছিলেন কুলুপ, আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক কোনো রকম মন্তব্যই করেননি। তবে এবার নট আউট নোমান শোতে অকপটে নিজের বেদনার কথা বললেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্রিকেটারদের আন্দোলনে তাকে না ডাকার জন্য কষ্ট পেয়েছিলেন, সেটা স্বীকার  করলেন এবার প্রথমবার।

    ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের শোতে কাল দীর্ঘ সময় আড্ডা দিয়েছেন বাংলাদেশের মাত্রই সাবেক হয়ে যাওয়া ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। কথা বলেছেন অনেক কিছু নিয়েই, একটা বড় অংশ ছিল গত বছর ক্রিকেটারদের আন্দোলন নিয়ে। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে আরও নানা দাবিতে ধর্মঘটে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা, হুমকির মুখে পড়েছিল ভারত সফর। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সমঝোতা হয়, বেশ কিছু দাবি মেনেও নিয়েছে বিসিবি। তবে ওই সময় নিজের ভূমিকার জন্য মাশরাফি প্রকারান্তরে সতীর্থদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।

    ক্রিকেটারদের ওই আন্দোলনে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজা কোথায়? ওই সময় জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়কও ছিলেন মাশরাফি, কিন্তু চোটের জন্য বেশ কিছুদিন ক্রিকেট থেকে বাইরে ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনের পর সব জাতীয় ক্রিকেটার এক মঞ্চে এলেও মাশরাফি না থাকায় প্রশ্ন উঠেছিল, তিনি কি নিজেই আসেননি? নাকি ক্রিকেটাররাই তাকে ডাকেননি?

    এতোদিন পর মাশরাফি বললেন, দ্বিতীয় কারণটিই সত্যি, ‘এটা (ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ডাক না পাওয়া) আমার জন্য অনেক কষ্টের একটা ব্যাপার, সেটা আমি অস্বীকার করব না। যেদিন প্রথম ওদের ১১ দফা দাবি দেখলাম, সেদিন আমার মনে হয়েছিল ১২ দফা দাবি হওয়া উচিত ছিল।  থাকা উচিত ছিল, আমরা এর ভেতরে মাশরাফিকে ডাকিনি। আমি তখনও অবসরে যাইনি, আমি তখনও অধিনায়ক। স্বাভাবিকভাবেই সবাই প্রশ্ন করবে, মাশরাফি কই? আমার কাছে তাৎক্ষণিক মনে হয়েছিল। আমি তামিমকে বললাম, আমাকে ডাকিসনি এটা ভিন্ন মতামত। কিন্তু মানুষজনের জন্য তোরা কী রেখে গেলি? মানুষজন যখন বলবে, মাশরাফি কোথায়? তোরা যে আমাকে এতগুলো কথা শোনালি, সেটা কেন?’

    এরপর মাশরাফি একরকম বোমাই ফাটিয়েছেন। সরাসরি বলেছেন, ড্রেসিংরুম থেকে তাকে নিয়ে মিথ্যা বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘ড্রেসিংরুমে মিথ্যাচার হয়েছিল। মাশরাফি কই?? কেউ বলেছে মাশরাফি এমপি সেজন্য আসবে না। আরেকজন জুনিয়র প্লেয়ার বলেছে মাশরাফি ক্ষমতাসীন দলে সেজন্য আসবে না। কিন্তু এটা কি সরকারবিরোধী আন্দোলন? তা তো না। এরপর তৃতীয় দিন কেউ বলল উনি নড়াইলে গেছে এখন আসবে না। কিন্তু এগুলো কেন? জুনিয়রদের কাছে আমাকে ছোট করার তো কোনো দরকার ছিল না। এরপর যেটা হয়েছে, আমি কিন্তু ওদের কারও সাথে না বলেই আমার ফ্যানপেজে স্টেটমেন্ট দিয়েছি, ১১ দফার দাবির সাথে আমি একমত।

     

    ওই সময় অবশ্য তামিম মাশরাফিকে ফোন করেছিলেন। চট্টগ্রামে একটা টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। মাশরাফি ভেবেছিলেন সেটার টাকার জন্য তামিম ফোন দিয়েছেন। কলটা তখন ধরতে পারেননি। ভেবেছিলেন, পরে টাকাটা নিয়ে নেবেন তামিমের কাছ থেকে। তবে পরে তামিম বলেছিলেন, আন্দলোনের জন্য মাশরাফিকে ফোন দিয়েও পাননি তারা। এখানেও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে মনে করছেন মাশরাফি।  

    পুরো ব্যাপারটা নিয় তাই মাশরাফির মনে অভিমান জমা হয়েছে, ‘আমাকে কোনোভাবে অ্যাভয়েড করতে চেয়েছে সেটা ঠিক আছে। আমি অধিনায়ক হয়েও কখনো জাহির করতে চাইনি। চাবও না। আমাকে না ডাকলে ড্রেসিংরুমেও হয়তো কখনো যাব না, এটাও সত্যি কথা। কিন্তু সমস্ত মানুষের সামনে একটা অদ্ভুত অবস্থায় আমিই পড়েছি। দাবিটা যেহেতু যৌক্তিক, কিন্তু সেই যৌক্তিক দাবিতে আমি নেই বলে আমি অযৌক্তিক। ওরা যদি ক্লিয়ার করে আসত শুরু থেকে যে আমরা মাশরাফিকে চাইনি, বা আমাকে পাওয়া যায়নি, তাহলে আমি একটু সেফ সাইডে থাকতে পারতাম আর কী। তবে এটা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই।’

    অবশ্য এ নিয়ে এখন আর মাশরাফির মনে মেঘ জমে নেই বলেই দাবি করলেন, ‘এখনো আমরা একসাথে আড্ডা দিই। আমার ভেতরে এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নেই, এসব আমি মনেও রাখি না। প্রশ্ন এসেছে তাই সত্যিটা বললাম, এটাই কথা। আমার পরিবার যেমন আমার একপাশে, সতীর্থেরা অন্য পাশে কারণ ওরা আমার পরিবার। বহরের পর বছর, ইদ, রোজা সবকিছু তাদের সাথে ভাগাভাগি করেছি। ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে দুঃখগুলোকে এক করে রাখার মানে হয় না। ওরাই আমার সবচেয়ে আনন্দের জায়গা, শান্তির জায়গা।’