ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের ১ বছর : ১৩ দফা দাবির যা পূরণ হলো, যা হলো না
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর।
বেলা তিনটার কিছু পর মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে আগে থেকে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এসে ক্রিকেটাররা ঘোষণা দিলেন, ১১ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাচ্ছেন তারা। বয়সভিত্তিক, হাইপারফরম্যান্স ক্রিকেট ছাড়া বাকি কোনোকিছুতে অংশগ্রহণ করবেন না তারা। মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার সময় পাননি, তবে তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়েও কথা বলা হবে। অবশ্য ক্রিকেটারদের সঙ্গে ছিলেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা, পরে তিনি জানিয়েছিলেন, তাকে জানানো হয়নি কিছু। কিন্তু দাবির সঙ্গে একমত তিনি।
পরদিন আলাদা এক উত্তপ্ত সংবাদ সম্মেলনে এ আন্দোলন নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। বলেছিলেন, এটিকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখেন তিনি, এর পেছনে কারা আছে তাদেরকেও খুঁজে বের করা হবে।
২৩ অক্টোবর আইনজীবীর মাধ্যমে ঢাকার একটি হোটেলে নিজেদের দাবি আরেকবার উত্থাপন করেন ক্রিকেটাররা, সেখানে যোগ করা হয় আরও দুটি দাবি। এর আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট পাপন ও পরিচালক নাইমুর রহমান দুর্জয়। রাত ৯টায় বিসিবির সঙ্গে আলোচনায় বসেন ক্রিকেটাররা, যে বৈঠক শেষে জানানো হয়, আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন তারা, যোগ দেবেন ক্রিকেটীয় কার্যক্রমে।
তবে সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা আসে আরেক বিস্ফোরণ হয়ে, জুয়ারির প্রস্তাব গোপন করে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি।
দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় সেই আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে বুধবার।
ক্রিকেটারদের সেসব দাবি-দাওয়ার কতোটা পূরণ হলো, সেদিকে ফিরে তাকিয়েছে প্যাভিলিয়ন। আন্দোলনের কয়েকটি দফা এবং সেসবের কতোটা পূরণ হলো, সেসব নিয়ে প্যাভিলিয়নের সঙ্গে কথা বলেছেন ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ১১ দফা দাবির একটি পড়ে শোনানো এনামুল হক জুনিয়র। তিনি বলেছেন, ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে তাদের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে আরও উন্নতির সুযোগ থাকলেও বিসিবির পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত ইতিবাচক।
(এখানে উল্লেখিত ক্রিকেটারদের দাবিগুলি বিসিবি প্রেসিডেন্টকে দেওয়া ক্রিকেটারদের আইনজীবীর আনুষ্ঠানিক চিঠির কপি থেকে নেওয়া, যেটি সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে সরবরাহ করা হয়েছিল। বিসিবির পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন বা সাংবাদিকদের সামনে বলা কথা অনুযায়ী।)
দাবি ১ কোয়াব
কোয়াব (ক্রিকেটারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ) এর বর্তমান কমিটিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সামনে পেশাদার ক্রিকেটারদের একটা সংস্থা গড়ে তুলতে হবে, সেটি কোয়াবের অধীনে অথবা স্বতন্ত্র হিসেবে থাকবে। সেই সংস্থা বিসিবির অধীনে না থেকে স্বতন্ত্র এবং স্বায়ত্তশাসিত হবে, লিখিত সংবিধান ও কার্যনির্বাহী কমিটি থাকবে এবং বিসিবির কেউ সেখানে থাকবেন না। এই সংস্থা প্রশাসন, ক্লাব, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক ও স্পন্সরদের থেকে আলাদা হয়ে দেশের পেশাদার ক্রিকেটারদের প্রতিনিধিত্ব করবে। ক্রিকেটাররা বিশ্বাস করে, স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত পেশাদার ক্রিকেটারদের সংস্থার দাবি বাংলাদেশে খেলাধুলার উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, এবং অন্যান্য টেস্টখেলুড়ে দেশ যেমন ইংল্যান্ডে-- যেখানে প্রফেশনালস ক্রিকেটারস অ্যাসোসিয়েশন (পিসিএ) ১৯৬৭ সালে এবং অস্ট্রেলিয়ায়-- যেখানে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারস অ্যাসোসিয়েশন (এসিএ) ১৯৯১ সালে গঠিত হয়েছিল।
প্রেক্ষাপট
ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন-- ফেডারেশনস অফ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটারস অ্যাসোসিয়েশন (ফিকা)-- এর সদস্যসংখ্যা বাংলাদেশের কোয়াবসহ ৯টি। টেস্টখেলুড়ে দেশগুলির মাঝে ভারত, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের সংস্থা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। ভারতে ২০১৯ সালে একটা ক্রিকেটারস অ্যাসোসিয়েশন করা হলেও সেটি শুধুমাত্র সাবেক ক্রিকেটারদের কল্যাণেই করা হয়েছে, সেটিও তাদের সুপ্রিম কোর্টের লোধা কমিশনের পরামর্শক্রমে। টেস্টখেলুড়ে দেশগুলির বাইরে স্কটল্যান্ডের সংস্থা ফিকার সদস্য।
মূলত বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষায় বোর্ডের সঙ্গে দর-কষাকষি করে এসব সংস্থা। যেমন সম্প্রতি ঘোষণা এসেছে, অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগ বিগব্যাশে প্রতি ম্যাচের একাদশে এক দলে তিনজন করে বিদেশী ক্রিকেটার খেলানো যাবে। মূলত এতদিন স্থানীয় ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষায় দুজনের বেশি খেলানোর সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে এসেছিল এসিএ-- অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারস অ্যাসোসিয়েশন।
পদক্ষেপ
ধর্মঘটের পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছিল কোয়াবের কেন্দ্রীয় কমিটি। প্রেসিডেন্ট নাইমুর রহমান দুর্জয়, ভাইস-প্রেসিডেন্ট খালেদ মাহমুদ সুজন ও সেক্রেটারি দেবব্রত পাল পালটা অভিযোগ তুলেছিলেন, কোয়াব থেকে ডাকা হলে ক্রিকেটারদের পান না তারা। যে ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’-এর কথা বলা হয়েছে, সেটি থাকলেও বরং তারা বিসিবিতে থাকলে ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়া তুলতে পারেন। দুর্জয় ও সুজন-- দুজনই বিসিবির পরিচালক, দেবব্রত ম্যাচ রেফারি। কোয়াবের সঙ্গে সে দায়িত্বও পালন করছেন তারা।
এক বছর পরও কোয়াবের কেন্দ্রীয় কমিটি একই আছে। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন জেলার নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন দিয়েছে কোয়াব। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরুর অনুরোধ জানিয়ে বিসিবিকে চিঠিও দিয়েছে তারা।
কোয়াব আগের চেয়ে বেশি তৎপর, এবং তাদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের সংশ্লিষ্টতা বেড়েছে বলে মনে করেন এনামুল, “অবশ্যই বেড়েছে, এই কোভিডের মাঝে সংশ্লিষ্টতা আরও বেড়েছে। আমরা অনেক মিটিং করেছি। কোয়াব অ্যাকটিভ, তারা আমাদের পাশে আছে।”
এক বছর পরও কোয়াবের কেন্দ্রীয় কমিটি আছে একই, তবে ঘোষণা করা হয়েছে জেলা কমিটি/বিসিবি
দাবি ২ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগসহ ঢাকার ক্রিকেট লিগগুলিতে আগের ড্রাফট পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট বেতনসীমার আগের পদ্ধতি চালু করতে হবে। ক্লাবগুলির সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের স্বাধীনতা থাকা উচিৎ, এবং তারাই যাতে তাদের বেতন নির্ধারিত করতে পারেন, সেরকম বাজার থাকা উচিৎ।
প্রেক্ষাপট
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ-- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া টুর্নামেন্ট এটি। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের পেশাদার ক্রিকেটার আয়ের বেশ বড় একটা অংশ আসে এখান থেকেই। আগে ক্লাবগুলির সঙ্গে ক্রিকেটাররা আলাদা করে চুক্তি করতেন, তবে ‘প্লেয়ারস বাই চয়েজ’ আসার পর বোর্ড আইকন ক্রিকেটার ঠিক করে দেওয়াসহ ক্রিকেটারদের ক্যাটাগরি ও সে অনুযায়ী টাকার অঙ্ক বেধে দিয়েছিল বিসিবি। শুরুতে এক মৌসুমের কথা বলা হলেও সেটি ছিল বেশ কিছুদিন। অবশ্য প্লেয়ারস বাই চয়েজ না থাকার কারণে শুধু হাতেগোনা কয়েকজন ক্রিকেটারদেরই দিনশেষে ‘লাভ’ হয়েছে কিনা, সে প্রশ্নও আছে।
পদক্ষেপ
প্লেয়ারস বাই চয়েজ পদ্ধতি থাকবে না, বিসিবি সেটি বলেছিল আগেই। লিগ শুরুর আগে এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিল সিসিডিএম-- ক্রিকেট কমিটি ফর ঢাকা মেট্রোপলিস। একইসঙ্গে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে প্রিমিয়ার লিগে বিদেশী ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগও বাতিল করেছিল তারা। অবশ্য কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এক রাউন্ডের পরই স্থগিত হয়ে গেছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এখন চলা প্রেসিডেন্ট কাপের পর কর্পোরেট টি-টোয়েন্টি লিগ হয়ে গেলেই প্রিমিয়ার লিগ নিয়েও দেরি করতে চায় না বিসিবি, সম্প্রতি এমন জানিয়েছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট।
এনামুল বলছেন, লিগ শুরুর ব্যাপারে বিসিবি ইতিবাচক, এ ব্যাপারে কোয়াবের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের, “আসলে মহামারিতে কারও তো হাত নেই, আমার মনে হয়, প্রথমদিকে বিসিবি সহায়তা করেছে, বলতেই হবে। সবারই খবর নিয়েছে। কথাও হয়েছে, লিগ যদি না-ই হয়, তাহলে আর্থিক দিক দিয়ে সহায়তা করা যায় কিনা। লিগটা হলে আসলে আমাদের চলার অবস্থা হয়ে যাবে। এটা নিয়ে ইতিবাচক তারা। আমাদের চাওয়া হলো লিগটা শুরু হওয়া, সেক্ষেত্রে বিসিবি ইতিবাচক। এই টুর্নামেন্টটা (প্রেসিডেন্টস কাপ) যদি ভালভাবে হয়, সেই সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।”
দাবি ৩ বিপিএল
পরের মৌসুম থেকে ফ্যাঞ্চাইজিভিত্তিক পদ্ধতিতে ফিরে যেতে হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএলকে। নিলামে কোন ক্যাটাগরিতে থাকবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অথবা চুক্তির ব্যাপারে দরাদরি করার স্বাধীনতা থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। বিদেশী এবং বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের চুক্তির অর্থের ব্যাপারে বৈষম্য দূর করতে হবে।
প্রেক্ষাপট
লভ্যাংশ শেয়ারিংয়ের ব্যাপারে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বিপিএল আয়োজন করেছিল বিসিবি-- বঙ্গবন্ধু বিপিএল নামে। দলগুলি ভাগ করে দেওয়ার পর সেগুলোর জন্য স্পন্সর জোগাড় করেছিল তারা। বিসিবির দাবি অনুযায়ী, এই টুর্নামেন্ট একবারই হয়েছে এভাবে।
পদক্ষেপ
কোভিড-১৯ এর কারণে হচ্ছে না এবারের বিপিএল। ফলে বিপিএলের ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের দাবি পূরণ হলো কিনা, সেটি নিয়ে অপেক্ষা কার্যত শেষ হয়নি। আপাতত প্রেসিডেন্টস কাপ, কর্পোরেট টি-টোয়েন্টি লিগের পর প্রিমিয়ার লিগ-- মূলত ঘরোয়া এসব টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর চিন্তাই করছে বিসিবি।
ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন বিসিবি প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্মেলন ছিল বেশ উত্তপ্ত/বিসিবি
দাবি ৪ প্রথম শ্রেণি
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ ফি ১ লাখ টাকা করতে হবে। ক্রিকেটারদের বেতন বাড়াতে হবে, প্রতি বছর পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সারা বছর কোচ এবং ফিজিও রাখতে হবে। বিভাগীয় সদরদপ্তরে সারা বছর অনুশীলনের সুবিধা রাখতে হবে।
প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দুটি-- জাতীয় ক্রিকেট লিগ, এনসিএল এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ, বিসিএল। পরেরটি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক। জাতীয় লিগে ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি ছিল ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া প্রথম শ্রেণির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানোর দাবিও ছিল।
পদক্ষেপ
ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়েছিল জাতীয় ক্রিকেট লিগে, পিছিয়ে গিয়েছিল এক রাউন্ডের খেলা। তবে দ্রুত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল এটি নিয়েও, যদিও আংশিক সেটি। জাতীয় লিগে প্রথম স্তরে ৩৫ থেকে ৬০ এবং দ্বিতীয় স্তরে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছিল ম্যাচ ফি, যেটি কার্যকর করা হয়েছিল সে রাউন্ড থেকেই। ধাপে ধাপে সেটি আরও বাড়ানো হবে, এমনও জানিয়েছিলি বিসিবি। আর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিসিবি বরাবরই বলে এসেছে, এগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
এনামুল এক্ষেত্রে আশা করছেন, বেতনও বাড়বে তাদের, “বেতনের ব্যাপারটি নিয়ে কোয়াবের সঙ্গে আলাপ করেছি, সেটাও প্রক্রিয়াধীন। সেটা বাড়লে আমাদের ক্রিকেটের মানটাও আরেকটু বাড়বে।”
“অনুশীলন সুবিধা একটু বেড়েছে, আরও বাড়বে। এটা আসলে সহায়ক। এসব মিলিয়ে বড় ব্যাপার, বোর্ড প্রেসিডেন্টও গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমরা যখনই কোয়াবের মিটিংয়ে শুনেছি, উনি নিজেই দেখছেন কীভাবে উন্নতি করা যায়।”
দাবি ৫ ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাতা, ভ্রমণের সুবিধা
ঘরোয়া ক্রিকেটে দৈনিক ১৫০০ টাকার ভাতা অপর্যাপ্ত এবং অপ্রতুল। এটা বাড়াতে হবে, প্রতি বছর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেখানে সুযোগ আছে, সেখানে বিমানে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নত হোটেল ব্যবস্থা, জিমনেশিয়াম এবং সুইমিং পুল নিশ্চিত করতে হবে।
পদক্ষেপ
ভ্রমণ-ভাতা ২৫০০ থেকে করা হয়েছিল সাড়ে তিন হাজার, তবে বিমান সুবিধা থাকলে আকাশপথে যাতায়াত নিশ্চিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে হোটেল খরচ ৮০ ভাগ, ম্যাচের খাবারের জন্য ৮৫ ভাগ বেশি বরাদ্দ এবং হোটেল থেকে মাঠে যাওয়ার ক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের সুবিধা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছিল বিসিবি।
বিসিবির এই পদক্ষেপের ফল খেলার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন এনামুল, “যতখানি হয়েছে, আমরা আলহামদুলিল্লাহ অনেক খুশি। ম্যাচ ফি তো বেড়েছে, আরেকটা দিক হলো ভ্রমণটা আরামদায়ক হয়েছে, এর প্রভাব আমাদের খেলার ওপর পড়েছে। এটা বিমানে করছি। শরীর ফিট রেখে খেলতে পারছি, আমরা খুশি। ম্যাচ ফি বেড়েছে, আরও বাড়বে। আরও শুনেছি। কোয়াব থেকে শুনেছি। সেটা যদি হয়, কোভিডে আসলে অনেক কিছু থমকে আছে। টিএ-ডিএ (ট্রাভেল ও ডেইলি অ্যালাওয়েন্স) বাড়ানো প্রক্রিয়াধীন। বোর্ড ভালভাবে সাড়া দিয়েছে। ম্যাচ ফি বা ডেইলি অ্যালাওয়েন্স যদি আরেকটু বাড়ে, বেতনটা যদি আরেকটু বাড়ে, আরেকটু খুশি হবো ।”
বিসিবির সঙ্গে বৈঠকে সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, তামিম, মুশফিক, ইমরুল, মিরাজ, ইলিয়াস সানিরা/ বিসিবি
দাবি ৬ বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারের সংখ্যা ও বেতন বাড়াতে হবে, এবং বার্ষিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
প্রেক্ষাপট
২০১৯ সালে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ছিলেন মোট ১৭ জন ক্রিকেটার।
পদক্ষেপ
২০২০ সালে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে প্রথমবারের মতো সাদা ও লাল বলের আলাদা ক্যাটাগরি করা হলেও বাড়ানো হয়নি ক্রিকেটারের সংখ্যা। তবে এর আগেই বেড়েছিল ম্যাচ ফি। টেস্ট ম্যাচের জন্য ফি সাড়ে তিন লাখ থেকে বাড়ানো হয়েছিল ছয় লাখে, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে যা যথাক্রমে ৩ লাখ ও ২ লাখ।
বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের ম্যাচসেরা এনামুল বলছেন, টেস্ট ম্যাচ ফি বাড়ানোর ব্যাপারটা ইতিবাচক হিসেবে দেখেন তিনি, “এটার উত্তর আসলে জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটাররাই দিতে পারবে। তারপরও বলবো আমাদের টেস্ট ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। টেস্ট ম্যাচ ফি বেড়েছে, ৬ লাখ টাকা বেশ ‘হেলদি অ্যামাউন্ট’। তাতে এ ফরম্যাটে আগ্রহ বাড়বে নিশ্চিতভাবেই, এটা গুরুত্বপূর্ণ। আরও উজ্জীবিত করবে সবাইকে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া হলে আলাদা হতো, এখন আমাদের গুরুত্ব দিচ্ছে। আশা করি সামনে আরও বাড়বে।
"বোর্ড ভালভাবে সাড়া দিয়েছে। ম্যাচ ফি বা ডেইলি অ্যালাওয়েন্স যদি আরেকটু বাড়ে, বেতনটা যদি আরেকটু বাড়ে, আরেকটু খুশি হবো ।”
দাবি ৭ দেশীয় কোচ, গ্রাউন্ডসম্যান, স্টাফ
কোচ ও গ্রাউন্ডসম্যানসহ স্থানীয় স্টাফদের বেতন অন্যান্য টেস্টখেলুড়ে দেশগুলির পর্যায়ে নেওয়ার জন্য বাড়াতে হবে, বার্ষিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
প্রেক্ষাপট
এ দাবি তোলার সময় তামিম বলেছিলেন, “আমরা ক্রিকেট নিয়ে, ক্রিকেটারদের সম্মান নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের আজকের উদ্যোগ শুধুমাত্র ক্রিকেটারদের নিয়েই না। আপনি যদি চিন্তা করেন একটা গ্রাউন্ডসম্যানের কথা, সে কি ধরনের বেতন পাচ্ছে। আপনারা সবাই দেখেন ওরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে। মাস শেষে হয়তো ৫-৬ হাজার টাকা পায়। কোচের কথা, আপনি যদি দেখেন আমরা নিজেরাই দেশী কোচদের প্রমোট করতে চাই না। বিদেশি একটা কোচ যে টাকা বেতন পায় আমাদের হয়তো ২০ জন কোচ তা পায় না। এমনও সময় গেছে সম্প্রতি একটা সফরে দেশি কোচের অধীনে দল ভালো খেললেও পরবর্তী সিরিজে তাঁকে আর দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আম্পায়ারিং নিয়ে আমরা সবাই অভিযোগ করি। আম্পায়ারদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে টাকা দিয়ে। আমরা তা দেই কি দেই না এটা আপনারা সবাই জানেন। আপনারা সবাই জানেন তাঁদের কি ধরনের বেতন দেয়া হয়। ফিজিও, ট্রেইনার সবার ক্ষেত্রেই একই। এখন উপযুক্ত সময় বাংলাদেশিদের প্রাধান্য দেয়ার।”
পদক্ষেপ
জাতীয় দল, এইচপি কিংবা অ-১৯-- কোনোটিতেই এখনও দেশী হেড কোচ প্রাধান্য দেয়নি বিসিবি। বিভিন্ন পর্যায়ে সহকারি হিসেবে কাজ করছেন তারা, তবে বিপিএলে ছিলেন দেশী হেড কোচ। গ্রাউন্ডসম্যানের ক্ষেত্রে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরি বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরকে বলেছেন, “গ্রাউন্ডসম্যানদের কথা ভাবুন, আপনারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলা কাভার করেন। অনেক জায়গায় দেখেছেন ২-৩ জন মিলে সব করে ফেলে। আমাদের এখানে ৫০-৬০ জনও আছে কোনো ভেন্যুতে। সব মিলিয়ে ২০০ জনের বেশি গ্রাউন্ডসম্যান আমাদের। সামগ্রিকভাবে টাকার অঙ্কে কিন্তু কম নয় আমাদের ব্যয়। তাদের স্কিলের গভীরতাও দেখতে হবে। তারপরও দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা ভালো পারিশ্রমিকই দেওয়ার চেষ্টা করি।”
দাবি ৮ ঘরোয়া টুর্নামেন্টসংখ্যা
লিস্ট এ ম্যাচ এবং টুর্নামেন্টের সংখ্যা বাড়াতে এবং অন্তত আরেকটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট চালু করতে হবে প্রতি মৌসুমে।
প্রেক্ষাপট ও পদক্ষেপ
আগে জাতীয় লিগের সঙ্গে একটি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট হতো, তবে বন্ধ হয়ে গেছে সেটি। সে টুর্নামেন্ট চালুর কোনও ঘোষণা আসেনি। সীমিত পরিসরে প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হলেও সেটি থাকবে কিনা, নিশ্চিত নয় সেটি, কোভিড-১৯ এর কারণে তো বন্ধ অন্য ঘরোয়া টুর্নামেন্টও। তবে জাতীয় দল ও এইচপির সদস্যদের নিয়ে তিন দলের প্রেসিডেন্টস কাপ শুরু করেছে বিসিবি। এরপর কর্পোরেট টি-টোয়েন্টি লিগ নামে একটি টুর্নামেন্ট করবে তারা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে একসময় দেশীয় ক্রিকেটারদের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে ভ্যাকসিন না এলে অথবা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেশের মাটিতে ক্রিকেট না করার কথা বললেও বিসিবি বেশ তৎপর এখন ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে, মূলত জাতীয় দলের শ্রীলঙ্কা সফরের পর থেকেই।
ঢাকার একটি হোটেলে আইনজীবীর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি-দাওয়া সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরছেন ক্রিকেটাররা। /বিসিবি
দাবি ৯ ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্যালেন্ডার
ঘরোয়া ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেটি অনুসরণ করতে হবে যাতে করে ক্রিকেটাররা আগে থেকেই জানতে পারে এবং তাদের পরিকল্পনা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের সঙ্গে সমন্বয় করে আগে থেকেই করতে পারে।
প্রেক্ষাপট ও পদক্ষেপ
২০১৭, মে। গরমের মাঝে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ চলছিল, মাঠেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন জাকির হোসেন। প্রচন্ড তাপমাত্রায় উইকেটকিপিংয়ের পর ওপরের দিকে ব্যাটিংয়ের ধকল নিতে পারেননি, শেষ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। ফেসবুকে এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি নিয়ে ভাবতে আকুতি জানিয়েছিলেন প্রাইম ব্যাংকের হয়ে কাজ করা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেট বরাবরই থেকে গেছে এমন, যখন সুযোগ তখন খেলা হবে। এ বছর তো কোভিড-১৯ এর কারণে সবই থমকে গেছে।
দাবি ১০ বকেয়া পাওনা
ক্রিকেটারদের বিপিএলসহ অন্যান্য বকেয়া সময়মতো শোধ করতে হবে।
প্রেক্ষাপট
দাবি তোলার সময় জুনায়েদ সিদ্দিক বলেছিলেন, “বিপিএল-প্রিমিয়ার লিগের টাকাটা আমরা যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাই। যেমন শেষ প্রিমিয়ার লিগে দশটি দলই তাদের টাকা পরিশোধ করেছে। এখনও আমরা ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে এখনও ৪০ ভাগ টাকা পাই নাই। বোর্ডে অনেকবার যাওয়া হয়েছে, কোয়াবকেও অনেকবার বলা হয়েছে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে এটা আমাদের প্রাপ্য না। আমাদের দলের অনেক ক্রিকেটারই যাওয়া আসা করে। এটা খুবই দৃষ্টিকটু। তো আশা করব, যে সময় দেওয়া থাকে সে সময়ের মধ্যে যেন পাই।”
পদক্ষেপ
গত আগস্টে ফিকা এক রিপোর্টে দাবি করেছিল, যে ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বকেয়া পরিশোধ করেনি, তার মধ্যে আছে বিপিএলও। আইসিসি ইভেন্টের প্রাইজমানি ক্রিকেটারদের দেওয়া হয়নি, এমনও বলেছিল ফিকা।
বিসিবি পরে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, ২০১৮ সালের বিপিএলে ৩ জন ক্রিকেটার ও ১ জন কোচ ছাড়া বাকি কারও পাওনা নেই। সে ৪ জনের ক্ষেত্রে দায়টা সেই ফ্র্যাঞ্চাইজির এবং এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করলেও বিসিবি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রাইজমানির ব্যাপারটাও অস্বীকার করে বিসিবি বলেছে, শুধু টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি না, বোর্ডের পক্ষ থেকে পারফরম্যান্সের জন্য উলটো বোনাসও নিয়মিত দেওয়া হয় ক্রিকেটারদের।
দাবি ১১ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অনাপত্তিপত্র
দুটির বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজিলিগ খেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের বাধা সরাতে হবে। যদি সূচি এবং জাতীয় দলের দায়িত্বের পর (সময় থাকে), তবে যতগুলো লিগ থেকে আমন্ত্রণ পাবে, ততগুলিতে খেলতে অনুমতি দিতে হবে।
পদক্ষেপ
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ক্ষেত্রে এমনিতেই খুব বেশি বাংলাদেশী ক্রিকেটারের আনাগোনা নেই-- এক সাকিব আল হাসান ছাড়া, যিনিও নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি এবারের সিপিএল বা আইপিএল। বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, কেউ সুযোগ পেলে সেটি অবশ্যই ভেবে দেখবে বিসিবি।
শেষ আইপিএলে ইনজুরি-বদলি হিসেবে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল মোস্তাফিজুর রহমানের, তবে সে সময় শ্রীলঙ্কা সফর ছিল বলে তাকে এনওসি দেয়নি বিসিবি। এছাড়া লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগের ড্রাফটে সাকিবের নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকে নেওয়া হয়নি। সূত্রমতে, বিসিবি এ লিগে খেলতে অনাপত্তিপত্র দেবে না, বরং দেশেই ঘরোয়া ক্রিকেটে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় তারা আপাতত।
দাবি ১২ লভ্যাংশ ভাগাভাগি
সবার স্বার্থ বজায় রাখতে বাংলাদেশী ক্রিকেটে আয়-ব্যয়ের সঙ্গে এসবের উৎস ভরণপোষণের ক্ষেত্রে একটা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ক্রিকেটের বাণিজ্যিক প্রসার ও অন্য উৎস থেকে বিসিবির লভ্যাংশের একটা ভাগ পেশাদার ক্রিকেটারদের দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এসব পেশাদার ক্রিকেটারের পরিশ্রম ও পারফরম্যান্সের কারণেই আসে। ক্রিকেটারদের জন্য একটা কল্যাণ, প্রভিডেন্ট ও ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠন করতে হবে, সঙ্গে ইনস্যুরেন্স স্কিম, যাতে করে কঠিন সময়ে তা ক্রিকেটারদের কাজে আসে, উপযুক্ত ক্ষেত্রে যাতে অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটারদের পেনশন দেওয়া যায় এবং চোটগ্রস্ত ক্রিকেটারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়।
পদক্ষেপ
লভ্যাংশ ভাগাভাগির ব্যাপারটি বাস্তবিক নয়, এটি বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন আগেই। সে বাস্তবতা গত এক বছর খুব একটা বদলায়নিও। বিপিএলে লভ্যাংশ ভাগাভাগি নিয়ে বনিবনা হওয়াই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির সঙ্গেও নতুন চুক্তি করেনি বিসিবি।
এছাড়া কোভিড-১৯ সময়ে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের বাইরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ক্রিকেটারদের এককালীন অর্থ সহায়তা দিয়েছে বিসিবি। লিগ না হলে সেটি দেওয়া হতে পারে আবারও। এছাড়া মেয়ে ক্রিকেটারদেরও এককালীন অর্থ সহায়তা করেছে বিসিবি।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটার, সাংবাদিকসহ সাবেক ক্রিকেটারদের এককালীন সহায়তাও করেছে তারা।
দাবি ১৩ ছেলে-মেয়ে সমতা
বাস্তবতা এবং বাণিজ্যিক দিক দিয়ে যতখানি সম্ভব, ওপরের এসব বিধান মেয়ে ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও চালু করতে হবে, যাতে করে যত দ্রুত লিঙ্গ-সমতা অর্জন করা যায়।
প্রেক্ষাপট ও পদক্ষেপ
গত জুনে প্যাভিলিয়নের সঙ্গে সাক্ষাতকারে এ ব্যাপারে নিজের মত জানিয়েছিলেন জাতীয় দলের পেসার জাহানারা আলম, “বোর্ড অবশ্যই সহায়তা করেছে, প্রতিদিন উন্নতি হচ্ছে এসবের। আমরা যা দিচ্ছি, বোর্ড এর চেয়ে বেশি দিচ্ছে। আমরা না চাইতেই সব এসে যাচ্ছে। আমরা খুশি। আগেও বলেছি, বোর্ড আমাদের অভিভাবক। আমাদের ভাল-মন্দ দেখবেন, দেখছেন। ছেলেদের মতো স্ট্রাইক করারও প্রয়োজন পড়ে না। এটা আমার মত, দলের সবাই একমত হবে আমার সঙ্গে আমার মনে হয়।
“আমি সন্তুষ্ট। লকডাউনের মধ্যেই দেখেন। খেলাধুলা বন্ধ, দরকার ছিল না, কিন্তু বোর্ড দিয়েছে। ছেলেদের ৩০ হাজার টাকা করে দিয়েছে, মেয়েদের ২০ হাজার করে দিয়েছে। খুব বেশি পার্থক্য কিন্তু না। কিন্তু দিয়েছে। ছেলেরা অনেক পায়, মেয়েরা ক্লাব থেকে এতো পায় না। সেখানে মেয়েদেরও টাকা দিয়েছে, আমার এটা প্রত্যাশার বাইরে ছিল। তারপর ঈদের উপহার হিসেবে একটা পরিমাণ দিয়েছে প্রত্যেককে। এটা কিন্তু কোচদেরও উপহার দিয়েছে। বোর্ড তাদের জায়গা থেকে দিচ্ছে। প্রশ্ন হলো, আমরা কি বোর্ডকে ঠিকমতো ফিরিয়ে দিতে পারছি? আমরা কি শুধু নিয়েই যাব? বিনিময়ে কিছু দেব না? শুধু একটা এশিয়া কাপই হয়ে যাবে সম্মান? আমাদের তো আর বড় জয় নেই। এতো বছরের ক্যারিয়ারে আমাদেরও তো কিছু দেওয়া উচিত।”
আর্কাইভ- যে অপেক্ষা 'শেষ হইয়াও হইলো না শেষ'