'এক্স ফ্যাক্টর' হতে পারছেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ?
ওল্ড ট্রাফোর্ডে বিষণ্ণতা ভর করেছিল। ম্যানচেস্টারের জানুয়ারির হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, লিভারপুল লিগ জয়ের পথে ছুটছে, আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ওল্ড ট্রাফোর্ডে বার্নলির কাছে হারছে। অতলান্তে ডুব দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন ইউনাইটেড সমর্থকেরা। এরপর প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেছে, লিভারপুলও প্রিমিয়ার লিগ জিতে গেছে। তবে ইউনাইটেড সমর্থকেরা নতুন আশায় স্বপ্ন দেখছেন। এক পর্তুগিজকে ঘিরে।
বার্নলির কাছে হারের দুইদিন পর ব্রুনো ফার্নান্দেজকে দলে ভিড়িয়েছল ইউনাইটেড। শীতকালিন দলবদলের একদম শেষদিনে। এরপর ইউনাইটেডের ভাগ্য নিয়েছে নাটকীয় মোড়। পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকালে অবশ্য সেটা চোখে পড়বে না। ইউনাইটেড যে ৫ এ ছিল সেখানেই আছে। তবে ছয় মাস আগের হতাশা এখন অনেকটাই ভুলতে বসেছে ইউনাইটেড।
একজন প্লেমেকারের জন্য ইউনাইটেড মিডফিল্ডে হাহাকার চলছিল বহুদিন ধরেই। ৬৮ মিলিয়ন পাউন্ডে ফার্নান্দেজকে দলে ভেড়ানোর পর ওলে গানার সোলশার বলেছিলেন, “এক্স ফ্যাক্টর” পেল তার দল। ফার্নান্দেজ প্রাথমিক ভাবে মুখ রেখেছেন সোলশারের। ফার্নান্দেজ হয়ে গেছেন দলের এক্স ফ্যাক্টর। তিনি আসার পর টানা ১৫ ম্যাচ অপরাজিত ইউনাইটেড। এই মুহুর্তে ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে এমন একটানা অপরাজিত থাকার এর চেয়ে বড় রেকর্ড আছে কেবল বায়ার্ন মিউনিখের (২৫)। ইউনাইটেডের মুড বদলে গেছে রাতারাতি।
সবশেষ ব্রাইটনের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে জোড়া গোল করেছেন ফার্নান্দেজ। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখের পর লিগে ফার্নান্দেজ ম্যাচ খেলেছেন ৮টি। এই ৮ ম্যাচে তার গোল ৫টি, অ্যাসিস্টও আছে ৩টি। ফার্নান্দেজ সে হিসেবে এক্স ফ্যাক্টর ছাপিয়ে গেছেন। ফার্নান্দেজ আসার পর বেড়ে গেছে ইউনাইটেডের গোল করার হারও। সব প্রতিযোগিতায় ফার্নান্দেজ যে ১২ ম্যাচে খেলেছেন, তাতে ইউনাইটেড গোল করেছে ২৮টি। আর হজম করেছে মাত্র একটি।
পর্তুগিজ বলে তাকে নিয়ে মাতামাতি একটু বেশি, তার ওপর স্পোর্টিং লিসবন থেকে ইউনাইটেডে আসায় প্রত্যাশার চাপও কম নয়। ফার্নান্দেজ এখনই বিশ্বজয় করে ফেলেননি। তবে সোলশার এখন আশা দেখছেন পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার। অথচ জানুয়ারির এমন কিছু বলার মতো অবস্থাতেই ছিলেন না তিনি। চারে থাকা চেলসির সঙ্গে ইউনাইটেডের পয়েন্ট পার্থক্য ২, তিনে থাকা লেস্টার সিটির সঙ্গে ৩। সোলশার ব্রাইটনের সঙ্গে ম্যাচের পর জোর গলায়ি বলেছেন, তৃতীয় স্থানে চোখ তার। সোলশারের ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাসে বড় অবদান ফার্নান্দেজের।
ফার্নান্দেজ মূলত বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। তবে রক্ষণের চেয়ে তার আক্রমণের দিকটা ধারালো বেশি। ইউনাইটেডের মিডফিল্ডে আন্দ্রিয়াস পেরেরা বা জেসি লিনগার্ড প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ে ছিলেন। সেখানে ফার্নান্দেজ খেলতে নেমে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছেন। ফার্নান্দেজের সবচেয়ে বড় গুণ বোধ হয় বিটুইন দ্য লাইন নিখুঁত পাস দিতে পারা। খেলায় কিছুটা আয়েশী ভঙ্গি আছে বটে, সে কারণে প্রায়ই বল পজেশনও হারান। ঝুঁকি নেন, বেশিরভাগ সময় সফলও হন। বক্সের বাইরে থেকে বল পেলেই গোলে শট করতে পিছপা হচ্ছেন না। সফলও হচ্ছেন নিয়মিত। ওইটুকু স্বাধীনতা সোলশারের কাছ থেকে আদায় করেই নিয়েছেন ফার্নান্দেজ।
বল হারালে পজেশন ফিরে পেতেও সমান মনযোগী ২৫ বছর বয়সী। ব্রাইটনের বিপক্ষেও দেখা গেছে সেটি। সেটি সম্ভবত প্রেরণাও যুগিয়েছে বাকিদের। সব মিলিয়ে স্থিতিশীলতাও ফিরে এসেছে ইউনাইটেডে। সবচেয়ে বড় লাভটা ফার্নান্দেজের হয়েচেহ পল পগবা ফেরার পর। ফার্নান্দেজ যোগ দেওয়ার পর থেকেই তার সঙ্গে পগবার সমন্বয় নিয়ে কথা হয়েছে ঢের। তবে ইনজুরি মাঠে ফিরতে দেয়নি পগবাকে। ইউনাইটেডের মিডফিল্ডে সৃজনশীলতার যে অভাব ছিল সেটাও অনেকখানিই কেটে গেছে এই জুটির কল্যাণে। জানুয়ারির লক্করঝক্কর ইউনাইটেড তাই এখন অনেকটাই ‘ভরসা’ করার মতো দল।
তবে ফার্নান্দেজের জন্য আসল চ্যালেঞ্জটা অপেক্ষা করছে সামনে। নিশ্চিতভাবেই এই অপরাজিত থাকার ধারা ভাঙবে আবার। সোলশার শুরুর দিকে দায়িত্ব নেওয়ার পরও ইউনাইটেডে ছোটখাটো একটা বিপ্লব ঘটেছিল। তবে ক্ষণস্থায়ী বিপ্লবে লাভ হয়নি কোনো। খারাপ সময়ে ফার্নান্দেজ নিজেকে কতোখানি মেলে ধরতে পারেন, তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে পারে ইউনাইটেডের পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা না খেলা।
তবে ফার্নান্দেজ যে ইউনাইটেড মেজাজের খেলোয়াড় সেটুকু অন্তত প্রমাণ হয়েছে এই কয় মাসে। ম্যানচেস্টার ডার্বিতে পেপ গার্দিওলার ওপর গরম দেখিয়ে বল ছিনিয়ে নেওয়া বা গোলের উদযাপনেও ‘রগচটা’ চরিত্র কিছুটা ফুটে উঠেছে ফার্নান্দেজের। আপাতত ইউনাইটেড সমর্থকদের জন্য সেটা বড় স্বস্তির। চিরশত্রু লিভারপুলের শিরোপা উদযাপন চলার সময়, নিদেনপক্ষে উপভোগ করার মতো কিছু পেয়েছেন রেড ডেভিলরা! আর পরিসংখ্যান আর খেলায় তার প্রভাব বলছে, ফার্নান্দেজকে দল ভেড়ানোর সিদ্ধান্তটা সঠিক তো ছিলই, বরং আগে আগে তাকে পেলে হয়ত এতোদিনে চ্যাম্পিয়নস লিগের জায়গা নিয়ে দুশ্চিন্তা কমত ইউনাইটেডের। একজন খেলোয়াড় কীভাবে দলকে বদলে দিতে পারেন তা তো ভার্জিল ফন ডাইকই দেখিয়েছেন। তিনিও শীতকালীন দলবদলের বাজারেই যোগ দিয়েছিলেন লিভারপুলের। ফার্নান্দেজ কতোখানি 'ফন ডাইক' হতে পারবেন সেটা অবশ্য এখনই আন্দাজ করা কঠিন। তবে এটুকু নিশ্চিত, ঠিক পথেই এগুচ্ছেন তিনি।