প্রিমিয়ার লিগে সেরা চারের দৌড়ে কার পথ কেমন?
লিভারপুলের অনন্য নৈপুণ্যে প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমে শিরোপার দৌড় শেষ। তবে এর ফলে লিগের উত্তেজনা কমে যায়নি এতটুকুও। সেরা চারের (নাকি পাঁচ) দৌড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্লাব। চ্যাম্পিয়নস লিগ স্পটগুলোর জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে লেস্টার, চেলসি, ম্যান ইউনাইটেড এবং উলভসের মতো ক্লাবগুলোর মাঝে। শেফিল্ড, আর্সেনাল বা টটেনহামও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। প্রতিটি দলেরই চলতি মৌসুমে আর ছয়টি করে ম্যাচ বাকি, আর তাই আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ইউরোপা লিগে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করবে কোন ক্লাবগুলো তা জানতে পরের ছয় গেমউইক থেকে চোখ সরানোর জো নেই।
চ্যাম্পিয়ন হিসেবে লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ নিশ্চিত হয়ে গেছে। আর ইউয়েফার নিষেধাজ্ঞা থাকায় টেবিলে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি আপাতত সমীকরণের বাইরেই থাকছে। তবে যেহেতু সেরা চারের একটি দল নিষেধাজ্ঞার খড়গ তলে থাকা সিটি, তাই এবার টেবিলের পঞ্চম স্থানে থাকা দলও আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ পাবে (যদি চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমের কার্যক্রম শুরুর আগেই সিটির আপিলের রায় এসে পড়ে এবং তাতে যদি সিটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়, সেক্ষেত্রে পঞ্চম স্থানে দল ইউরোপা লিগে খেলবে)।
প্রিমিয়ার লিগে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত তৃতীয় স্থানে রয়েছে লেস্টার সিটি। চ্যাম্পিয়নস লিগ স্পটের জন্য লড়াইয়ে থাকা দলগুলোর মাঝে সবচেয়ে কঠিন পথ ব্রেন্ডন রজার্সের দলেরই। শেষ ৬ ম্যাচের মাঝে ৪ ম্যাচে তাদের ‘বড়’ প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করতে হবে। এর মাঝে উত্তর লন্ডনের দুই ক্লাব আর্সেনাল এবং টটেনহামের মাঠে গিয়ে খেলতে হবে তাদের। ফর্ম এবং লিগে অবস্থানের দিক দিয়ে তাদের কেউই খুব একটা ভালো অবস্থায় না থাকলেও লিগের শেষদিকে সবটা দিয়ে লড়াই করবে মিকেল আর্টেটা এবং হোসে মরিনহোর দল, এতে কোনও সন্দেহ নেই। আর লিগের শেষভাগে সেরা চারের লড়াইয়ে থাকা ম্যান ইউনাইটেড এবং শেফিল্ডকে কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে আতিথ্য দেবেন জেমস ম্যাডিসন-জেমি ভার্ডিরা। এই দুই ম্যাচেও নিজেদের সেরাটা না দিলে পয়েন্ট হারাতে হতে পারে শেষ চার ম্যাচে জয়বঞ্চিত লেস্টারের। আর অন্য দুই ম্যাচে লেস্টারের প্রতিপক্ষ ক্রিস্টাল প্যালেস এবং অবনমনের ঝুঁকিতে থাকা বোর্নমাউথ।
৩২ ম্যাচ শেষে লেস্টারের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম (৫৪ পয়েন্ট) নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের চেলসি। শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট হামের সঙ্গে ২-৩ গোলে হেরে গেলেও তার আগে টানা ৪ ম্যাচ জিতেছিল পশ্চিম লন্ডনের ক্লাবটি। আর শেষ ছয় ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষের মাঝে রয়েছে শেফিল্ড, লিভারপুল এবং উলভস। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে শেফিল্ড এবং মলিনক্সে উলভসের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি চেলসির সেরা চার ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচটিও সহজ হবে না ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ-ট্যামি আব্রাহামদের জন্য, কারণ শিরোপা জয় হয়ে গেলেও বাকি ম্যাচগুলোতে পূর্ণ শক্তির দল মাঠে নামাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন অলরেড ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ। লিগের শেষভাগে চেলসির অন্য ৩ ম্যাচ ক্রিস্টাল প্যালেস এবং অবনমনের ঝুঁকিতে থাকা ওয়াটফোর্ড ও নরউইচ সিটির বিপক্ষে।
৫২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের পঞ্চম স্থানে রয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। চ্যাম্পিয়নস লিগ স্পটের দৌড়ে থাকা দলগুলোর মাঝে শেষ ছয় ম্যাচে সবচেয়ে সহজ রান-ইন ওলে গানার সোলশারের দলের। এই পর্যায়ে এক লেস্টার সিটি বাদে টেবিলের প্রথম ভাগের আর কোনও দলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে না তারা। ক্রিস্টাল প্যালেস (১২ তম), সাউদাম্পটন (১৪ তম), ওয়েস্ট হাম (১৬ তম), অ্যাস্টন ভিলা (১৮ তম) এবং বোর্নমাউথের (১৯ তম) বিপক্ষে লিগের পরের ৫ ম্যাচ খেলবে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটি। আর তাই ২৬ জুলাই লেস্টারের মাঠে গিয়ে খেলার আগেই পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে ইউনাইটেডের।
ম্যান ইউনাইটেডের সমান পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে উলভস। গত মৌসুমে পর্তুগিজ ম্যানেজার নুনো এসপিরিতো সান্তোর অধীনে নজর কাড়ার পর এই মৌসুমেও লিগ জায়ান্টদের চোখ রাঙাচ্ছে ক্লাবটি। মৌসুমের শুরুতে কিছুটা ভুগলেও সময়মত নিজেদের সামলে নিয়ে এখন চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার স্বপ্ন দেখছে উলভস। যদিও শেষ ছয় ম্যাচে তাদের সামনে বেশ কয়েকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ব্রামাল লেনে শেফিল্ড এবং স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসির বিপক্ষে ম্যাচ তো রয়েছেই, সঙ্গে ঘরের মাঠে গানারদেরও আতিথ্য দিতে হবে ক্লাবটিকে। এছাড়া এভারটন, বার্নলি এবং ক্রিস্টাল প্যালেসের মতো লড়াকু দলগুলোর কাছ থেকেও পূর্ণ পয়েন্ট আদায় করে নেওয়া সহজ হবে না মোটেই।
আর এই চার দল বাদে শেফিল্ড (৭ম), আর্সেনাল (৮ম) এবং টটেনহামও (৯ম) এখনও চ্যাম্পিয়নস লিগের লড়াইয়ে হাল ছেড়ে দেয়নি। টেবিলে অবস্থান এবং অধারাবাহিকতা এই দলগুলোকে খুব একটা সাহস না জোগাচ্ছে না। তবুও ফুটবলে চিত্রপট বদলে যেতে কি খুব বেশি সময় লাগে?