• ক্রিকেটে ফেরা
  • " />

     

    করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ক্রিকেট ফেরানোর 'সাহস দেখাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনবে না' বিসিবি

    করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ক্রিকেট ফেরানোর 'সাহস দেখাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনবে না' বিসিবি    

    বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া অথবা ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএল বা আন্তর্জাতিক-- দেশের মাটিতে কোনো রকমের ক্রিকেট আয়োজন করার ‘সাহস দেখাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনার’ ঝুঁকি নেবে না বিসিবি। তবে শ্রীলঙ্কার মতো এমন অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশে আন্তর্জাতিক সিরিজ আয়োজনের ক্ষেত্রে ‘প্রস্তুতি’ নিয়ে ফেলেছে তারা। 

    গত মার্চে জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর থেকেই কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে ক্রিকেটের বাইরে আছে বাংলাদেশ। এর মাঝে স্থগিত হয়েছে বেশ কিছু সফর ও সিরিজ। তবে সম্প্রতি নিশ্চিত করা হয়েছে শ্রীলঙ্কা সফর, ২৪ অক্টোবর ৩ টেস্টের সিরিজ শুরু হবে। এ সফরে আগেভাগেই যাবে তারা, এজন্য কন্ডিশনিং ক্যাম্পও হবে। তবে দেশের মাটিতে ক্রিকেট ফিরতে এখনও লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে, এমনই জানিয়েছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। 

    দেশের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া টুর্নামেন্ট, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও স্থগিত করা হয়েছে এক রাউন্ডের পরই। এর আগে সিসিডিএম কক্সবাজার বা বিকেএসপিতে এ টুর্নামেন্ট আবারও শুরু করার আশার কথা বললেও আপাতত সেটি হচ্ছে না। 

    মিরপুরে জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিশ্বের মতো তারাও অপেক্ষায় আছেন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার জন্য, “প্রথম কথা হচ্ছে দুইটা শর্ত (পূরণ) হলে (ঢাকা প্রিমিয়ার) লিগ শুরু হতে পারে আমার জানামতে। একটা হচ্ছে যদি আমাদের এখানে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হয় অথবা ভ্যাকসিন আসে। এই দুইটা ছাড়া লিগ চালু হওয়ার আমি কোন যৌক্তিকতা দেখিনা। যুক্তি থাকতে হবে তো। কোনো দেশেই তো হচ্ছেনা। বেশিরভাগ দেশ চেষ্টা করছে, এখন তো ইংল্যান্ড ছাড়া কোথাও খেলা হচ্ছেনা। সুতরাং আমরা সাহস দেখাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনার কোন মানে খুঁজে পাইনা। তাই হয় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে হবে অথবা ভ্যাকসিন আসতে হবে। এই দুইটার একটা, এ জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।”

    বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হচ্ছে শুধু ইংল্যান্ডে, ‘বায়ো-সিকিউর’ বলয়ের মাঝে। একইভাবে ক্রিকেটে ফেরার পরিকল্পনা করছে নিউজিল্যান্ড। আর সামনের গ্রীষ্মের জন্য সূচি নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়াও। তবে উপমহাদেশে শ্রীলঙ্কা ছাড়া বাকি দেশগুলিতে শীঘ্রই ক্রিকেট ফেরার টাইমলাইন নেই, ভারত আইপিএল আয়োজন করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। অবশ্য ইংল্যান্ডে চালু হয়েছে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ, তবে সেখানেও দর্শক প্রবেশের অনুমতি নেই মাঠে, ক্রিকেটারদেরকেও রাখা হচ্ছে আলাদা একটি বলয়ের মাঝে। 

    এই অবস্থায় তাই ‘ঝুঁকি’ নিতে চায় না বিসিবি, “ব্যাপারটা একই একদম। উন্নতি হলে সব খেলা শুরু করে দেবো আমরা। আর না হলে দেখেন, আমরা এখানে শুরু করছিনা কিন্তু দল শ্রীলঙ্কায় যাবে। কারণ একটাই, আমরা গত কিছুদিন আগে পর্যন্ত জানি শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড নিরাপদ, ওখানে কোন নতুন আক্রান্ত ধরা পড়ছেনা। নিউজিল্যান্ডে কিন্তু আবার শুরু হয়েছে, ওরা আবার লকডাউনে গেছে। নিউজিল্যান্ডে হঠাৎ চলে আসছে আবার। শ্রীলঙ্কায় গত এক মাসে কোনো নতুন পজিটিভ ধরা পড়েনি। তাই খেলা শুরু করতে শ্রীলঙ্কাই নিরাপদ। তাই শ্রীলঙ্কাকে বেছে নিয়েছি।”

    শ্রীলঙ্কার মতো নিউজিল্যান্ডও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে, তাদের মাটিতে বাংলাদেশকে আতিথেয়তা দেওয়ার। সব মিলিয়ে বাকি আন্তর্জাতিক সিরিজগুলি নিয়েও আশাবাদি পাপন, “এছাড়া আমরা কতগুলো খেলা মিস করে ফেলছি। উদাহরণ দিতে গেলে আমাদের এখানে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-- এই দুইটা চলে গেছে (স্থগিত)। পাকিস্তানের সাথে একটা টেস্ট বাকি আছে। শ্রীলঙ্কা আছে, আয়ারল্যান্ডের সাথে একটা ব্যাপার আছে। আমরা কিন্তু সবগুলোই পুনরায় কবে খেলবো না খেলবো প্রস্তুতি ঠিক করে ফেলেছি।  কাজেই এই খেলাগুলো বাদ যাবেনা। শুধু অস্ট্রেলিয়া ছাড়া কারণ এটা তাদের সাথেও মিলছেনা সময়। বাকিগুলো আমরা আবারও খেলতে পারবো ইনশাআল্লাহ।”

    তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ না হলে বেশ বড় আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়বেন দেশের অনেক ক্রিকেটারই। জাতীয় দল ও বিসিবির বিভিন্ন প্রোগ্রামের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের আয়ের অন্যতম উৎস এই লিগ। করোনাভাইরাস মহামারির শুরুর দিকে তাদের এককালিন অর্থ সহায়তা দিয়েছিল বিসিবি। পাপনের আশা, ক্রিকেটারদের পাশেই থাকবেন তারা, “সময়টা সবার জন্য এরকমই। আপনার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি লোক চাকরি হারাচ্ছে, ব্যবসা নেই, আয় নেই। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যত তাড়াতাড়ি এটা থেকে আমরা বেরোতে পারি। ভ্যাকসিন আসলে... অবশ্য ভ্যাকসিন আসলেই যে সব ঠিক হয়ে যাবে তা না। আসবে, সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে-- সময়ের ব্যাপার। কাজেই এটা একটা খারাপ সময়  যাচ্ছে খেলোয়াড়দের জন্য। ক্রিকেট বোর্ড থেকে আমরা অবশ্যই তাদের ব্যাপারে কী করা যায়, কীভাবে সাহায্য করা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা আমরা করবো এটায় কোন সন্দেহ নেই।”

    আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৫ জন। মারা গেছেন ৩৬২৫ জন। দেশে সাধারণ ছুটি অবশ্য তুলে নেওয়া হয়েছে, তবে বন্ধ আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।