• বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ২০২০
  • " />

     

    শুরুর শঙ্কা কাটিয়ে হৃদয়-শুক্কুরে মাহমুদউল্লাহদের হারালেন নাজমুলরা

    শুরুর শঙ্কা কাটিয়ে হৃদয়-শুক্কুরে মাহমুদউল্লাহদের হারালেন নাজমুলরা    

    লাইভস্কোর


    মাহমুদউল্লাহ একাদশ ১৯৬ অল-আউট, ৪৭.৩ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৫১, ইমরুল ৪০, তাসকিন ২/৩৭, আল-আমিন ২/৪০, মুগ্ধ ২/৪৪)  
    নাজমুল একাদশ ১৯৭/৬, ৪১.১ ওভার (শুক্কুর ৫৬*, হৃদয় ৫২, এবাদত ৩/৪৬)
    নাজমুল একাদশ ৪ উইকেটে জয়ী 


    শের-ই-বাংলায় বড় বড় ব্যানার ঝুলছে-- ‘উই আর ব্যাক ইন ক্রিকেট’। আগেরদিন ট্রফি উন্মোচন হয়েছে, এদিন বায়ো-সিকিউর বলয়ের বাইরে থেকেই টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করলেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট। লাইভস্ট্রিমিং হলো ম্যাচ-- বেশ সাড়ম্বরে ‘ক্রিকেটে ফিরল’ বাংলাদেশ। ফেরার দিনে রানতাড়ায় মাঝপথ না পেরুতেই ৫ উইকেট হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেললেও তৌহিদ হৃদয় ও ইরফান শুক্কুরের সেঞ্চুরি জুটি, দুজনের ফিফটিতে শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে নাজমুল একাদশ। 

    মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে ভর করে ১৯৬ রানের বেশি তোলা হয়নি তার নামের দলের, বোলিংয়ে করতে হতো দারুণ কিছু। রানতাড়ায় রুবেলের করা প্রথম ওভারে কাভার দিয়ে পাঞ্চ করে দুই চারে সাইফ হাসান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, হয়তো রানতাড়াটা অনায়াসই হবে। কাভারে তার মোটামুটি সহজ ক্যাচ ফেলে লিটন দাস সেটিই আরেকটু পোক্ত করলেন। তবে এবাদত হোসেন ভাবলেন একটু অন্যরকম।  

    প্রথমে সাইফ তার বলে এজড হয়ে ক্যাচ দিলেন দ্বিতীয় স্লিপের পজিশনে দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র স্লিপে নাইম শেখের হাতে। সৌম্য ডিপ থার্ডম্যান থেকে বাঁদিকে ছুটে গিয়ে উড়ন্ত রাকিবুলের শিকার, ওই এবাদতের বলেই। একটু পর অফস্টাম্পের বাইরে প্রায় ওয়াইডঘেঁষা বলটা কেমন করে যেন স্টাম্পে ডেকে আনলেন মুশফিক। 

    আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে রেখে এলেন মাহমুদউল্লাহ, প্রথম ওভারেই হলেন সফল। অবশ্য তাতেও মিশে থাকলো দারুণ ফিল্ডিংয়ের ছোঁয়া। ফ্লিক করেছিলেন আফিফ, ডাইভ দিয়ে নীচু ক্যাচটা নিয়েছেন সাব্বির রহমান। ৩ ওভার পর শান্ত রাকিবুলের স্টাম্পের বলটা কাট করতে গিয়ে জায়গা পেলেন না, হলেন বোল্ড। ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো তখন ধুঁকছে নাজমুল একাদশ। 
     


    এরপরের গল্পটা তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ইরফান শুক্কুরের। দুজনের জুটিটা যতক্ষণে ভাঙলেন বিপ্লব, ততক্ষণে জয়টা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে নাজমুল একাদশের। ৬২ বলে ফিফটি করা হৃদয় বিপ্লবকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ধরা পড়ার আগে করেছেন ৬৭ বলে ২টি করে চার ও ছয়ে ৫২ রান। শুক্কুর অপরাজিত ছিলেন ৭৮ বলে ৫৬ রানে, তিনি মেরেছেন ৬টি চার। ছয় মেরে শেষটা দারুণ করেছেন নাঈম।পরিস্থিতি বুঝে দুজনই করেছেন দারুণ ব্যাটিং, ধীর হয়ে আসা উইকেটে বাড়তি শট খেলার চেষ্টা করেননি, ধরে রেখেছেন উইকেটও। 

    এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মাহমুদউল্লাহ একাদশ শুরুতে পেসারদের তোপের পর স্পিনারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ঠিক পাখা মেলতে পারেনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু, দারুণ ফিল্ডিংয়ে বারবার তাদেরকে আটকে দিয়েছেন নাজমুল একাদশের বোলাররা। মাহমুদউল্লাহ ফিফটি করেছেন, তবে এর বেশি কিছু করতে পারেননি, ইমরুল কায়েস ছাড়া ৩০ রানও পেরুতে পারেননি আর কেউ। 

    বৃষ্টির কারণে ৩ ওভার পর প্রায় ৪৫ মিনিটের মতো বন্ধ ছিল খেলা, শুরু হওয়ার পর টানা ৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে মাহমুদউল্লাহ একাদশ। প্রথমে নাইম শেখ হলেন রান-আউট, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে স্ট্রাইক-প্রান্তে সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙেছেন রিশাদ হোসেন। ফিল্ডিংয়ে নাজমুল একাদশ এদিন ছিল দুর্দান্ত। 

    পরের ওভারে সফল হয়েছেন তাসকিন আহমেদ, তার লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাটটা লাগিয়ে বল স্টাম্পে ডেকে এনেছেন লিটন দাস। এরপর মুমিনুলের পালা, আল-আমিনের অফস্টাম্পের বাইরের বলটায় অবশ্য ব্যাট চালিয়েছিলেন তিনি, এবারও বল এসেছে স্টাম্পে। ৪ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে মাহমুদউল্লাহর দল। 

    মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ইমরুল কায়েস এরপর পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন, পাওয়ারপ্লেতে ৩৯ রান উঠেছে শেষ পর্যন্ত। ইমরুল কাভার ও ভি দিয়ে চার মেরে অনুশীলন ম্যাচের ফিফটির ছন্দ টেনে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তাসকিন, আল-আমিন, মুগ্ধর পর নাঈমের সঙ্গে অন্যপ্রান্তে রিশাদকে এনেছিলেন নাজমুল। নাঈমের এক ওভারেই অবশ্য মাঝে হয়েছে দুটি ছয়, ইমরুল মেরেছেন মিডউইকেট ও লং-অনের মাঝ দিয়ে, মাহমুদউল্লাহ লং-অন দিয়ে। 

    ইমরুল অবশ্য শেষ পর্যন্ত ফিফটি পাননি, নাঈমকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন ৫০ বলে ৪০ রান করে। অধিনায়কের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৭৩ রানের। নুরুল হাসান সোহান এরপর মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন, তবে ঠিক থিতু হওয়ার আগেই রান-আউটে ফিরতে হয়েছে তাকে। পয়েন্ট থেকে প্রথমে সিঙ্গেল নিতে চেয়েও নেননি প্রথমে, নন-স্ট্রাইক প্রান্তে সরাসরি থ্রোয়ে ভেঙেছিল স্টাম্প। ওভারথ্রো থেকে সিংগেল নিতে গেলেন, তবে মাহমুদউল্লাহ নিরাপদে পৌঁছালেও স্ট্রাইক প্রান্তে শান্তর সরাসরি থ্রোয়ে ফিরতে হলো সোহানকে। 

    সোহানের পর সাব্বিরের সঙ্গে আরেকটি ছোট জুটি মাহমুদউল্লাহর, এ সময় ফিফটিও পেলেন তিনি আল-আমিনকে পুল করে চার মেরে। কিন্তু এরপরই ফিরলেন, মুগ্ধকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে আফিফ হোসেনের কাছে সহজ ক্যাচ দিয়ে। এক বল পর মুগ্ধ আরেকবার মুগ্ধতা ছড়ালেন, এবার নিজের বলেই দারুণ ফিল্ডিংয়ে। লেগস্টাম্পের বাইরের বলে লিডিং-এজড হয়েছিলেন সাব্বির, বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে সেটি নিয়েছেন তিনি। 

    টেইল-এন্ডাররা অবশ্য খুব খারাপ করেননি, আবু হায়দার রনি ও রাকিবুল হাসান করেছেন যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ রান। তাসকিনের হোল্ড করা বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে এর আগে ফিরেছিলেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, আর রাকিবুল আল-আমিনের বাইরের বলে স্টিয়ার করতে গিয়ে হয়েছেন এজড। ৪৮তম ওভারে প্রথমবারের মতো সৌম্য সরকারকে এনেছিলেন শান্ত, রুবেল ক্যাচ দিয়েছেন তার বলেই।