• বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ২০২০
  • " />

     

    পেসারদের নিয়ে রোমাঞ্চিত ডমিঙ্গোর কন্ঠে 'দিন-বদলের' সুর

    পেসারদের নিয়ে রোমাঞ্চিত ডমিঙ্গোর কন্ঠে 'দিন-বদলের' সুর    

    সৌম্য সরকার শেষ ওভার করছেন ম্যাচের, সে ম্যাচটা ঝুলছে তখনও। পরিচিত দৃশ্য? মনে হতেই পারে। সে ইনিংসে বোলিং করেছেন এমন দুজন স্পিনার-- আফিফ হোসেন ধ্রুব ও রিশাদ হোসেন-- অপশন হিসেবে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তর, তবে ১৫ রান ডিফেন্ড করতে তিনি ঝুঁকলেন সৌম্যর দিকেই। 

    দেশের মাটিতে বাংলাদেশের শেষ থেকে দ্বিতীয় টেস্টে একমাত্র ‘পেসার’ হিসেবে বোলিং করেছিলেন সৌম্যই-- যদিও বাংলাদেশ আদতে নেমেছিল স্বীকৃত পেসার ছাড়াই। পেসার হিসেবে আসলে বাংলাদেশ খুব একটা সুবিধার জায়গা না, অন্তত ছিল না খুব সাম্প্রতিক সময়েও। 

    সৌম্য অবশ্য এদিন বোলিং করতে এলেন চতুর্থ ‘পেসার’ হিসেবে, আগের তিনজনই নিজেদের কোটা পূর্ণ করে ফেলেছেন, ৪.৫০, ২.০০ ও ৪.৭৫ ইকোনমিতে বোলিং করে নিয়েছেন ৪, ১ ও ১টি উইকেট যথাক্রমে। সৌম্যও হতাশ করলেন না। দ্বিতীয় বলে ছয় মারা, বোলিংয়ে ৫ উইকেট নেওয়া সাইফউদ্দিন হতাশায় ডুবলেন বরং। দীর্ঘ বিরতির পর প্রেসিডেন্টস কাপে ফিরে অবশ্য চিত্রটা এমন-- সাইফউদ্দিন যখন পেসার, তখন তার জন্য হতাশা নেই, বরং পারফরম্যান্স তাদের উজ্জ্বল। সৌম্যও হয়তো পড়ে গেছেন সেই ‘পেসার’ কাতারেই। 

    যেখানে দাপট বললে সবার আগে স্পিনারদের কথা আসে, সেখানে একটা টুর্নামেন্টে দাপট দেখিয়ে চলেছেন পেসাররা, ফাইনালের আগে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া প্রথম ছয়জনই পেসার, শীর্ষ দশে আছেন আরও দুজন, সেটিতে রোমাঞ্চ জাগতেই পারে আপনার। ছন্দে থাকা মোস্তাফিজ, বাড়তি পেস, বাড়তি অ্যাকুরেসিসহ হাজির তাসকিন, রুবেল-সাইফউদ্দিনের উইকেট পাওয়া-- তালিকা চাইলে আরেকটু বড় করতে পারেন আপনি।  
     


    এখন পর্যন্ত যা বলা হলো, আপনি যদি তেমনই ভাবেন, অথবা একমত হন, তাহলে আপনি হয়তো একটু খুশিই হবেন, জাতীয় দলের ‘বস’-ও তেমনই ভাবছেন। ফরম্যাট, টুর্নামেন্ট, বা অন্য ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের পারফম্যান্স বাদ দিয়ে হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো রোমাঞ্চিত পেসারদের নিয়ে। সেখানে দিন-বদলের গান শুনছেন তিনি। ছয়-সাতমাস পর খেলতে নামা ক্রিকেটারদের এই টুর্নামেন্ট দিয়ে বিচার করা উচিৎ নয়, বারবার এমন বললেও পেসারদের কথা উঠলেই ডমিঙ্গো যেন বাড়তি ‘জোশ’ নিয়ে কথা বলছিলেন এদিন। 

    “আমি এখানে আসার পর থেকেই বলেছি, কিছু পেসার গড়ে তোলাটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। তাদেরকে যত বেশি সম্ভব খেলাতে হবে আমাদের, বিশেষ করে যখন বিদেশের মাটিতে খেলবে। যা দেখেছি, তাতে আমি রোমাঞ্চিত। তাসকিন কীভাবে বোলিং করছে, দেখুন। প্রতিটা আন্তর্জাতিক দলেরই সাদা বলে এমন একজন বোলার আছে, উইকেট দরকার পড়লেই যাদের ডাক পড়ে। ইংল্যান্ড জফরা আর্চারকে ডাকে, দক্ষিণ আফ্রিকা (কাগিসো) রাবাদাকে ডাকে, অস্ট্রেলিয়া মিচেল স্টার্ককে, ভারত (জাসপ্রিত) বুমরাহকে। এখন আমাদেরও সেই অপশন আছে, টানটান মুহুর্তে আমরা এমন কাউকে পাব, যে দ্রুতগতিতে বোলিং করতে পারে। তাসকিন বা খালেদের মতো কেউ, যারা একটা-দুইটা উইকেট এনে দিতে পারবে, এটা আমার জন্য খুবই স্বস্তির একটা ব্যাপার। এই টুর্নামেন্ট থেকে যদি একটা ব্যাপার আলাদা করতে হয়, তাহলে সেটি হবে পেসারদের পারফরম্যান্স”, বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ডমিঙ্গো। 
     


    “সংবাদমাধ্যম বা সমর্থকদের রোমাঞ্চিত হওয়া উচিত, যে আমরা একমুখী কোনো দল হতে চাই না। পেসাররা ব্যাটসম্যানদের জীবন কঠিন করে তুললেই আমি রোমাঞ্চিত হবো। এটাই ঠিক আছে। ম্যাচ জিততে তো আপনার ১০ বা ২০ উইকেট প্রয়োজন।”

    কোভিড-১৯ মহামারির লকডাউনের মাঝে তাসকিন নিজের সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে কিছু ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তার ওয়ার্ক-আউটের। প্রেসিডেন্টস কাপের আগে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচেও ঝলক দেখিয়েছেন তার ‘বদলে যাওয়া’র, এখানেও তাই। ডমিঙ্গোও তার এবং অন্যদের পরিবর্তনটা টের পাচ্ছেন, “গত ছয়-সপ্তাহে ক্রিকেটাররা যে কাজ করেছে, আসলে সেটা বলে শেষ করা যাবে না। তাসকিন আর রুবেলের দিকে তাকান, কিংবা লম্বা একটা চোট কাটিয়ে ফেরা খালেদের দিকে, ফিটনেস নিয়ে এরা কঠোর পরিশ্রম করেছে। 
     

    “সংবাদমাধ্যম বা সমর্থকদের রোমাঞ্চিত হওয়া উচিত, যে আমরা একমুখী কোনো দল হতে চাই না। তারা ব্যাটসম্যানদের জীবন কঠিন করে তুললেই আমি রোমাঞ্চিত হবো। এটাই ঠিক আছে। ম্যাচ জিততে তো আপনার ১০ বা ২০ উইকেট প্রয়োজন।”


    “আমরা তাদের স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করছি, যাতে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারফর্ম করতে পারে। তাসকিন সবচেয়ে বড় যে কাজটা করেছে, তার কর্মপদ্ধতিটা বদলেছে। সে আরও কঠোর পরিশ্রম করছে। শারীরিক দিক দিয়ে সে বেশ ভাল অবস্থায় আছে। একটা-দুইটা স্পেলের চেয়েও বেশি করতে পারে সে এখন। তার (প্রথম স্পেলের) পরের স্পেলগুলিতে সে দ্রুতগতিতে বোলিং করতে পারছে, এটা আমাদের জন্য খুবই ভাল একটা ব্যাপার। আমরা এটার জন্য কাজ করছি, যাতে তারা বিকাল ৫টায় হোক বা সকাল ১০টায় হোক-- ভাল পেসে বোলিং করতে পারে। 

    “গত ৭-৮ মাসে আমরা কিছু ভাল তরুণ পেসারই খুঁজছিলাম। অবশেষে আমরা একটা গ্রুপ তৈরি করতে পেরেছি, যারা দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে। যদি আপনি তাসকিন, ফিজ, আল-আমিন, হাসান মাহমুদ, খালেদ, শরিফুলের দিকে তাকান-- ছয়-সাতজন পেসার আছে যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল করতে পারে।”

    অবশ্য পেসারদের নিয়ে রোমাঞ্চের বিপরীতে আরেকটা দিক আছে-- ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স। রুবেলের উইকেটসংখ্যার কথা বলা হলে হয়তো অফস্টাম্পের বাইরের লেংথ বলের মোহে পড়ে আগুনে ঝাঁপ দেওয়া ব্যাটসম্যানদের চিত্রও ভাসবে। তবে ডমিঙ্গো সেসবের পেছনে বলছেন একটাই কারণ-- বিরতি। 


     "তাসকিন সবচেয়ে বড় যে কাজটা করেছে, তার কর্মপদ্ধতিটা বদলেছে। সে আরও কঠোর পরিশ্রম করছে। শারীরিক দিক দিয়ে সে বেশ ভাল অবস্থায় আছে। একটা-দুইটা স্পেলের চেয়েও বেশি করতে পারে সে এখন। তার (প্রথম স্পেলের) পরের স্পেলগুলিতে সে দ্রুতগতিতে বোলিং করতে পারছে, এটা আমাদের জন্য খুবই ভাল একটা ব্যাপার।" 


    “আপনাদের মনে রাখতে হবে, এরা সাত মাস ক্রিকেট খেলেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ক্রিকেট ছাড়া এটা দীর্ঘ একটা সময়। তারা যে ভাল করবে, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। একটা দল হিসেবেই খেলবে তারা। গত রাতে দেখলে দেখবেন, প্রথম ছয়জনের মাঝে দুই-তিনজন ছিল শুধু, যারা আমাদের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়মিত একাদশে থাকবে। আমার মনে হয়, তারা ক্রমাগত ব্যর্থ, এটা বলাটা আসলে ঠিক না। 

    “এসব ম্যাচে ক্রিকেটারদের বিচার করা আসলে খুবই কঠিন। তার ওপর যারা সাত মাস ক্রিকেট খেলেনি, এই টুর্নামেন্টে এসেছে শুধু আন্তঃস্কোয়াড ম্যাচ খেলে, তাদের জন্য আমি আসলে এটিকে অনুশীলন হিসেবেই দেখি। আমার কাছে এখন ম্যাচ জেতা বা টুর্নামেন্ট জেতা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হলো, ছেলেরা কিছু ম্যাচ খেলতে পারছে, প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ক্রিকেটে খেলতে পারছে। অবশ্য নতুন এবং তরুণরা কী করতে পারে-- সেটা দেখতে পারাটা ভাল একটা ব্যাপার। বাঁহাতি পেসার শরিফুল যেমন। আমাদের এখন ফিজ ও শরিফুল আছে, সামনে এগুনোর জন্য এগুলো ভাল অপশন। এদের সবাইকে খেলতে দেখার জন্যই এই টুর্নামেন্টটা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ আসলে।” 

    “এই টুর্নামেন্ট যে ঝাঁঝে খেলা হচ্ছে, আমি খুবই খুশি। কীভাবে তারা চেষ্টা করছে, বোলাররা বোলিং করছে-- সেদিকে তাকান। অবশ্যই আরও কিছু রান হলে ভাল হতো, তবে (সাত মাসের বিরতি) বুঝতে হবে। ম্যাচ খেলার চেয়ে ভাল অনুশীলন হয় না আর। প্রতিটা ম্যাচই প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক হয়েছে। উইকেটও তেমন সহজ ছিল না। আমার মনে হয় এ কারণেই ব্যাটসম্যানরা ঝুঁকেছে। কিছু তরুণ ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। মুশফিক, রিয়াদ, তামিমের মতো সিনিয়ররা রান পেয়েছে কিছু।” 

    ব্যাটসম্যানরা যে ফর্মে ছিলেন, তিনি মনে করিয়ে দিতে চান সেটিও, “ছয়-সাত মাস আগেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আমরা ৩৪০ করেছি, লিটন ১৮০ করেছে, তামিম দুটি সেঞ্চুরি করেছে। গুরুত্বপূর্ণ হলো, ম্যাচ খেলা হচ্ছে। আমার কাছে পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ না। আমার মনে হয় টুর্নামেন্ট জেতার জন্য, ম্যাচ জেতার জন্য মিডিয়া যেভাবে চাচ্ছে, সবসময় পারফর্ম করতে বলছে, এটা অবাস্তব, বিশেষ করে যখন আপনি এটা বিবেচনায় নেবেন যে তারা ছয়-সাত মাস পর ক্রিকেট খেলছে। আমি সংবাদমাধ্যমগুলিকে বলবো, ক্রিকেটারদের আরেকটু সমর্থন দিতে, এবং এই দশদিনের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে তাদের বিচার না করতে। হয়তো তাদের আরেকটু সময় দিতে হবে হাঁফ ছাড়ার জন্য।”