সুমনের ৫, লিটন-ইমরুলের ফিফটিতে চ্যাম্পিয়ন মাহমুদউল্লাহ একাদশ
নাজমুল একাদশ ১৭৩ অল-আউট, ৪৭.১ ওভার (শুক্কুর ৭৫, শান্ত ৩২, হৃদয় ২৬, সুমন ৫/৩৮, রুবেল ২/২৭, এবাদত ১/১৮)
মাহমুদউল্লাহ একাদশ ১৭৭/৩, ২৯.৪ ওভার (লিটন ৬৮, ইমরুল ৫৩*, মাহমুদউল্লাহ ২৩*, নাসুম ২/৪৮)
মাহমুদউল্লাহ একাদশ ৭ উইকেটে জয়ী ও বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ২০২০ চ্যাম্পিয়ন
‘ফাইনাল’ সবসময়ই একটু আলাদা। সেটি যে টুর্নামেন্টেই হোক না কেন। শুধুই আরেকটা ম্যাচ হয়তো, তবে দিনের শেষে সেটিই তো ‘সব’। সে ফাইনালে এসে তাই বদলে যায় অনেক সমীকরণ। গ্রুপপর্বে নাজমুল একাদশের কাছে দুটি ম্যাচই হারা মাহমুদউল্লাহ একাদশ তাই পাত্তা দেয় না তাদের ফাইনালে এসে। তাসকিন-রুবেলকে ছাপিয়ে জ্বলে ওঠেন সুমন খান, তার তোপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় টুর্নামেন্টে তিন দলের মাঝে তুলনামূলক ভাল ব্যাটিং-পারফরম্যান্স করা লাইন-আপকে। আগের ৪ ইনিংস মিলিয়ে ৪৩ রান করা লিটন দাসের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই তাই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় নাজমুল একাদশকে।
সুমনের সামনে অসহায় হয়ে পড়া নাজমুল একাদশকে টেনে নিয়েছিল সাতে নামা ইরফান শুক্কুরের দুর্দান্ত ৭৭ বলে ৭৫ রানের ইনিংস। সুমন নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। তবে ১৭৪ রানতাড়ায় লিটন দাসের ৬৯ বলে ৬৮ রানের সঙ্গে ইমরুল কায়েসের ৬ ছয়ে ৫৫ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে ১২২ বল বাকি থাকতেই জিতে গিয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাহমুদউল্লাহ একাদশ।
খারাপ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার থেকে ফাইনাল পিছিয়ে এসেছিল রবিবার, এদিন অবশ্য আবহাওয়া বাগড়া বাধালো না কোনো। টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া মাহমুদউল্লাহর মুখেও হাসি ফুটলো দ্রুতই, রুবেল হোসেনের বলে সাইফ হাসান প্রথমে থার্ডম্যান দিয়ে একটা বাউন্ডারি পেলেও এরপর লাফিয়ে ওঠা বলে ইনসাইড-এজে হলেন বোল্ড। সৌম্য সরকারের চোখে কিছু একটা পড়ার পর উঠে গেলেন তিনি, নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে যোগ দিলেন মুশফিক।
দুজন খেলছিলেন বেশ ধীরগতিতে, এরপর নিজের প্রথম উইকেট পেলেন সুমন, তার নিপড ব্যাক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ মুশফিক। ৩৭ বলে মুশফিক করেছেন ১২। একদিকে শান্ত সুমনকে একটা চার মারলেন পাঞ্চ করে কাভার দিয়ে, তবে সুমন একদিক থেকে আঘাত করেই গেলেন।
ফিরে আসা সৌম্য অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিলেন, একই কাজ করলেন আফিফও, বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পরের ক্যাচটা বেশ ভাল নিয়েছিলেন সোহান। প্রথম স্পেলে ৬ ওভারে ২৮ রান দিয়ে সুমন নিয়েছিলেন ৩টি। শান্ত হুট করেই অস্থির হয়ে গেলেন এরপর, মিরাজকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে খেলতে গিয়ে আকাশে তুলে বেঁচে গেলেও আবারও একই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লেন মাহমুদুলের হাতে।
হৃদয়-শুক্কুরে ভর করতে হলো তাই তাদের আবারও। প্রথম ম্যাচে নাজমুল একাদশকে আরও বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিল তাদের জোড়া ফিফটি, এবার দুজন মিলে ৬ষ্ঠ উইকেটে গড়লেন ৭০ রানের জুটি। শুক্কুর শুরু থেকেই ছিলেন ইতিবাচক, পুল করলেন, ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ছয় মারলেন দুটি, কাট করলেন, সুইপ করলেন। ৪৭ বলেই পেয়ে গেলেন ফিফটি। এরপর অবশ্য তাকে একটু ব্যাকগিয়ারে যেতে হলো, হৃদয় ফিরলেন মাহমুদউল্লাহকে তুলে মারতে গিয়ে ওয়াইড লং-অনে ক্যাচ দিয়ে, ৫২ বলে ২৬ রান করে। সুমন ফিরে ফেরালেন নাঈমকে, এরপর নাসুম এজড হলে সুমন পেলেন পাঁচ। শুক্কুর এরপর রুবেলকে স্কুপ করতে গিয়ে বল ডেকে আনলেন স্টাম্পে, ১ বল পর তাসকিন বোল্ড হলেন এবাদতের বলে।
শুক্কুর আউট হয়ে ফেরার সময় মাহমুদউল্লাহর অভিবাদন পেলেন, এবাদত হাঁটলেন বেশ কিছুটা তার সঙ্গে। যে ইনিংসে তিনি ছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন আর তিনজন, যাদের স্ট্রাইক রেট ৫৬.২৪-এর বেশি নয়, সেখানে সাতে নেমে শুক্কুর ব্যাটিং করেছেন ৯৭.৪০ স্ট্রাইক রেটে। ৭৭ বলে ৭৫ রান করেছেন ৮ চারে, সঙ্গে মিরাজকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মেরেছেন দুটি ছয়।
তবে শুক্কুরের ইনিংসে নাজমুল একাদশকে সে অর্থে উজ্জীবিত হতে দিলেন না এর আগে সাদামাটা টুর্নামেন্ট পার করা লিটন। তার সঙ্গে ওপেনিংয়ে পাঠানো মুমিনুল হক অবশ্য ফিরেছিলেন দ্রুতই, আল-আমিনকে ফ্লিক করতে গিয়ে লিডিং-এজে ক্যাচ দিয়ে।
লিটন ইনিংসের প্রথম বলেই তাসকিনকে পয়েন্ট দিয়ে মেরেছিলেন চার, এরপর ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসেও খেললেন। রান-আউট, কট-বিহাইন্ডের জোরালো আবেদন থেকে বাঁচলেন, এরপর তাসকিনকে পুল করে মারলেন চার। যোগ দিলেন মাহমুদুল হাসান জয়ও, তাসকিনকে কাভার দিয়ে মারার পর আল-আমিনকে পুল করে মেরেছিলেন চার। দুজনের ৪৮ রানের জুটি ভেঙেছিল নাসুমের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে জয় ফিরে যাওয়াতে।
নাঈমকে কাভার ড্রাইভের পর রিভার্স সুইপে চার মেরে ৪৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করলেন লিটন। এর আগেই তার সঙ্গে যোগ দেওয়া ইমরুল শুরু থেকেই ছিলেন ফাস্ট-ফরোয়ার্ড মুডে। লিটন নাসুমকে আলতো খোঁচা দিয়ে ফিরেছেন ৬৯ বলে ৬৮ রান করে, মেরেছেন ১০টি চার।
তবে ইমরুল ছিলেন ধ্বংসাত্মক। নাঈমকে স্লগ, তাসকিনকে পুল, নাসুমকে আবার স্লগ-- ইমরুল শুধু ছয়ই মারছিলেন। আল-আমিনকে পুল করে আরেকটি মারার পর নাঈমকে প্রথমে মিডউইকেট দিয়ে টেনে মেরেছেন, জয় তখন একটি বাউন্ডারি দূরে। ইনসাইড-আউটে ইমরুল মারলেন তার ইনিংসের ৬ষ্ঠ ছয়।
এরপর ব্যাটে চাপড় মেরে করলেন উল্লাস। তারা যে ফাইনাল জিতে গেছেন।