• বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ২০২০
  • " />

     

    রুবেল-তোপের পর মিডল-অর্ডারের দৃঢ়তায় টিকে থাকলো মাহমুদউল্লাহ একাদশ

    রুবেল-তোপের পর মিডল-অর্ডারের দৃঢ়তায় টিকে থাকলো মাহমুদউল্লাহ একাদশ    

    তামিম একাদশ ২২১/৮, ৫০ ওভার (রাব্বি ৬২, অঙ্কন ৫৭, মোসাদ্দেক ৪০, সাইফউদ্দিন ৩৮, রুবেল ৪/৩৪, এবাদত ২/৬০) 
    মাহমুদউল্লাহ একাদশ ২২২/৬, ৪৯.১ ওভার  (মাহমুদুল ৫৮, মাহমুদউল্লাহ ৬৭, ইমরুল ৪৯, সাইফউদ্দিন ৩/৪৯, খালেদ ১/৩৯) 
    মাহমুদউল্লাহ একাদশ ৪ উইকেটে জয়ী


    রুবেল হোসেনের তোপের পর ইমরুল কায়েসের ৪৯ রানের সঙ্গে মাহমুদুল হাসান জয়ের ৫৮ রানের পর মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে তামিম একাদশের ২২১ রান পেরিয়ে প্রেসিডেন্টস কাপে টিকে থাকলো মাহমুদউল্লাহ একাদশ। এর আগে ১৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়েও তামিম একাদশকে উদ্ধার করেছিল ইয়াসির রাব্বি ও মাহিদুল অঙ্কনের দুই ফিফটির পর ৭ম উইকেটে সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেনের ৭৫ রানের জুটি। তবে শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়নি সেসব। 

    এ ম্যাচ জয়ের ফলে ৪ ম্যাচে সমানসংখ্যক পয়েন্ট এখন মাহমুদউল্লাহ একাদশের, শেষ ম্যাচে নাজমুল একাদশের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নামতে হবে তাই ৩ ম্যাচে ১ জয় পাওয়া তামিমদের। 

    ভাল একটা শেষের পর অবশ্য বোলিংয়ে শুরুটা ভালই হয়েছিল তামিম একাদশের, প্রথম দুই ওভারেই নেই দুই ওপেনার। প্রথম ওভারে সাইফের ফুললেংথের বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে মিস করে বোল্ড হলেন নাইম শেখ। পরের ওভারে মোস্তাফিজের প্রথম বলেই ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন দাস, শুরুতে এক চার মেরেছিলেন, সে পর্যন্তই-- টুর্নামেন্টটা এখনও তার জন্য ওই একই হতাশারই। 

    এরপরের সময়টা ইমরুল কায়েসের আধিপত্যের বলা যায়। সাইফকে মিডউইকেট দিয়ে টানা দুই চার, মোস্তাফিজকে থার্ডম্যান ও মিড-অফের পর কাভার ড্রাইভে চার-- ইমরুল ছিলেন ছন্দে। একসময় বলের বেশি রান করছিলেন, তবে ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে একটু থেমে গেলেন যেন। ৪৭ রানে বেশ ক্লোজ একটা এলবিডব্লিউর কল থেকে বাঁচলেও ফিফটি থেকে ১ রান দূরে খালেদ আহমেদের লাফিয়ে ওঠা বলে পয়েন্টে মাহাদি হাসানের ভাল ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরতে হলো তাকে। অবশ্য এদিনও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন, এ টুর্নামেন্টে তার বিপক্ষে দেওয়া আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত যেন মানতেই পারছেন না তিনি। 
     

     

    ব্রেকথ্রু পাওয়ার পর আরেক প্রান্ত থেকে মোস্তাফিজকে সরিয়ে নিলেন তামিম, তবে এতক্ষণ একপাশে শান্ত থাকা মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে থিতু হলেন মাহমুদউল্লাহ। জয় সময় নিয়েছেন, তবে মাঝের সময়ে উইকেটও হারাননি। তাইজুলকে ইনসাইড-আউটে মারা দারুণ চারে তার ফিফটি পূর্ণ হয়েছে ৮৬ বলে। এরপর আরও কিছুক্ষণ ছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাইজুলকে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে মাহাদির ভাল ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ১০০ বলে করেছেন ৫৮, মেরেছেন ৬টি ছয়। আউট হয়ে ফেরার সময় ছুটে আসা মাহমুদউল্লাহর অভিনন্দনও সঙ্গী হয়েছে এই তরুণের।

    মোস্তাফিজকে যখন পরের স্পেলে আনলেন তামিম, মাহমুদউল্লাহ তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ছয় মেরে, সোহান গ্যাপ বের করে মেরেছেন আরেকটি। ৭০ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছেন মাহমুদউল্লাহ। জয় থেকে ৯ রান দূরে সাইফকে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি ৮৭ বলে ৬৭ রান করে। তবে তার উইকেট আর তেমন পার্থক্য গড়তে পারেনি। অবশ্য ম্যাচ টাই হওয়ার পর সাইফকে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছিলেন সাব্বির। অবশ্য ৩৭ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থাকা সোহান অঘটন ঘটতে দেননি আর।

    এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া তামিম একাদশ পড়েছিল রুবেলের তোপে। অবশ্য বলা ভাল, তার অফস্টাম্পের বাইরের বলের মোহে পড়েছিল তারা। তার অফস্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শট খেলে এজড হয়েছেন তানজিদ, পরের ওভারে রনির শরীর থেকে দূরের বল খেলতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তামিমও। এরপর আবার রুবেলের গুডলেংথের বাইরের বলে দূর থেকে ব্যাট চালিয়ে কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন বিজয়, প্রায় একই ধরনের বলে এজড হয়েছেন মিঠুন। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে তামিম একাদশ তুলেছে মাত্র ১৯ রান, হারিয়েছে ৪ উইকেট। প্রথম স্পেলে রুবেলের বোলিং ফিগার ছিল এমন : ৬ ওভার, ১০ রান, ৩ উইকেট। 

    পুনর্গঠনের কাজটা গিয়ে পড়েছে এরপর রাব্বি ও অঙ্কনের ওপর। রনিকে সোজা ব্যাটে চার মেরে শুরু করা রাব্বি শুরুর দিকে বেশ ধীরগতির ছিলেন, বাউন্ডারি মারলেও স্ট্রাইক রেট ছিল বেশ কম। ২৬ রানে একবার জীবনও পেলেন মিডউইকেটে ইমরুলের হাতে। এরপর অবশ্য পুষিয়ে দিয়েছেন সেসব, মাহমুদউল্লাহকে স্লগ করে একটা ছয়ও মেরেছেন চল্লিশের ঘরে দাঁড়িয়ে। ৭৩ বলে পূর্ণ করেছেন ফিফটি, এরপরও তাকে দেখাচ্ছিল ভালই। অঙ্কনের সঙ্গে ক্ষণিকের ভুল বুঝাবুঝির মাশুলটা গুণে সেঞ্চুরি মিস করতে হয়েছে তাকে, নেব-নেব না করে হয়েছেন রান-আউট। 

    অঙ্কনও করেছেন রাব্বির মতোই ব্যাটিং, স্ট্রাইক রেটে তিনি ছিলেন আরেকটু পিছিয়ে। মেহেদি হাসান মিরাজের ওপর চড়াও হয়েছিলেন, ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে লং-অফ ও লং-অন দিয়ে তাকে মারা দুটি ছয়ের সঙ্গে চার মেরেছেন ৩টি, এর মাঝে একটি অবশ্য ছিল এজ। শেষদিকে ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন একটু, রুবেলকে তুলে মারতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন। 

    সাইফউদ্দিন শুরুতে ২ রানে একবার আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিজের পক্ষে পেলেন, রনিদের কট-বিহাইন্ডের জোড়ালো আবেদন নাকচ করেছিলেন মাসুদুর মুকুল। এরপরের পর্বটা বেশ ভালই গেছে তামিম একাদশের। সাইফ ও মোসাদ্দেক মিলিয়ে ৭টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছয়, ৭৫ রান তুলেছেন ৫৬ বলে। ৯ ওভারে ২৩ রান দেওয়া রুবেলের শেষ ওভারে এসেছেন ১১ রান। শেষ ওভারে এবাদত হোসেনের পরপর দুই বলে ফিরেছেন সাইফ ও মোসাদ্দেক, প্রথমজন কট-বিহাইন্ড হওয়ার আগে ২৯ বলে করেছেন ৩৮, পরেরজন ৩৯ বলে ৪০ করে ক্যাচ দিয়েছিলেন মিরাজের হাতে। 

    শেষ ওভারেই নেমেছিল বৃষ্টি, তাতে আলাদা করে বন্ধ থাকতে হয়নি খেলা। আপাতত বন্ধ হয়নি মাহমুদউল্লাহদের ফাইনাল-দুয়ারও।